চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: সুতার চরকির ঘুরপাকে শোঁ শোঁ শব্দে যেখানে বাতাস থমকে যেতো। খট্ খট্ কাব্যিক শব্দ যখন ছন্দের তালে তালে পুরো এলাকাকে নাচাতো। পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের সেই চড়ইকোলের কারিগর পাড়া আজ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। লম্বা রাস্তা বরাবর রঙিন সুতা টানানো নেই। মাঝে মাঝে দু একটি বাড়িতে পৈতৃক ঐতিহ্য ধরে রাখবার জন্য চিহ্নটুকু রেখে দিয়েছে। তাই মিটমিটকরে প্রদীপ জ্বলারমত এখনো দু একঘরে তৈরি হচ্ছে লুঙ্গী।
আমি চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চড়ইকোল কারিগর পাড়ার কথা বলছি।লুঙ্গী তৈরীতে খ্যাত চড়ইকোলের এ পাড়ায় এক সময় প্রায় অর্ধশত তাঁত ছিল। এখন আর তা নেই। পুরো পাড়ায় মাত্র ৭টি তাঁত আছে। আর সব পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিয়েছে। কারন এ পেশায় পোষায় না। ১৪টি লুঙ্গী তৈরীতে একজনের সময় লাগে প্রায় ১০ দিন। কারিগরের মজুরী সুতা রং এর দাম মিলে যে খরচ আসে তাতে শ্রমের মূল্যটুকু থাকে না। যার কারনে অনেকে কৃষি কাজে দিনমজুর দিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
এলাকাজুড়ে নামডাক হাফেজের লুঙ্গীর।সেখানে গিয়ে দেখলাম মাত্র একটি তাঁত। তার ছেলে রবিউল তখনও খট খট শব্দ করে লুঙ্গী বুনছে।
জিজ্ঞেস করলাম এসব বিষয়ে। আক্ষেপ করে বললো যেদিন অন্যের বাড়ি কাজ নেই সেইদিন বাড়িতে বসে কাপড় বুনি। আগে ৭টি তাঁত ছিল তাদের। সব বিক্রি করে দিয়েছে। এখন মাত্র একটি তাঁত। কারন জিজ্ঞেস করতেই বললো অনেক কিছু। সুতা রংয়ের দাম বেশি। কাপড়ের দাম কম, তাই লাভের পরিবর্তে লোকসান হয়। এ জন্য সবাই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আকুতির সুরে বললেন, আচ্ছা রেশনে সুতা রং পাওয়ার জন্য আপনারা লিখতে পারেন না?
হাফেজের বাড়ির একটু দক্ষিণে হাকিমের বাড়ি। সেখানে শব্দ শুনে এগিয়ে গেলাম। লুঙ্গী বুনছিল সেও। কথা বললাম তার সাথে। আগে ৩টি তাঁত ছিল তার। এখন একটি। কারন জিজ্ঞেস করতেই ঐ একই কথা। সুতা রংয়ের দাম বেশি। কারিগরের মজুরী দিয়ে সব খরচ যোগবিয়োগে লোকসান হয়। অগত্যা বসে থাকার চেয়ে নিজেই কাজ করছে। কারিগরি মজুরীটা নিজের আসুক এই ভেবে।পুরো পাড়ায় আর কোন শব্দ নেই। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে এই ব্যস্ত পাড়া। ধীরে ধীরে হয়তো শেষ চিহ্নটুকুও বিলীন হয়ে যাবে কিছুদিন পরে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবার হয়তো উৎসবের আমেজ আসবে এ পাড়ায়। হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, পূর্বের এলাকায় অনেক তাঁত ছিল, দিনে দিনে এটা হারিয়ে যাচ্ছে, পেশা বদলে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন মানুষ।