চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :
পাবনার চাটমোহরে সেতু নির্মাণের ৪০ দিনের মধ্যে ধ্বসে পড়লো সংযোগ সড়ক। এ ধরণের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসী। তারা বলছেন, দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার পর সেতু নির্মাণের আশ-পাশের ৭/৮ গ্রামের চলাচলের সহজস্বর হয়ে উঠেছিল। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার অল্পদিনের মাথায় ধ্বসে পড়ার ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সাধারন পথচারীরা।
জানা গেছে, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাজগ্রামে চিকনাই নদীর শাখার উপর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮০ লাখ ২১ হাজার ৭১১ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মিত হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১৫ মিটার দীর্ঘ পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জনদূর্ভোগ লাঘবে এ সেতুটি নির্মিত হলেও সেতুটিই এখন এলাকার জন দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সেতুর দুই পাশে চারটি ক্ষুদ্রাকৃতির খাম সদৃশ্য নাম মাত্র পাখা করা হয়েছে। ফলে নির্মাণকাজ শেষের দেড় মাসের মাথায় বৃষ্টিতে বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে সড়কটিতে। পথচারীরা কোনো রকমে চলাচল করছেন সেতুর উপর দিয়ে।পাখা চারটি বড় এবং দীর্ঘ করা না হলে সংযোগ সড়কটি টিকবে না বলে আশংকা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। দ্রæত মেরামত করা না হলে বৃষ্টিতে যেকোনো সময় পুরো সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার আশংকাও করছেন এলাকাবাসী।এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন সেতুর জায়গায় ইতোপূর্বেও একটি সেতু ছিল। সেই সেতুটি পুরাতন হওয়ায় ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরলে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। অনুমোদন হওয়ার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।
পাবনার সুজানগর মেসার্স তীর্থ করবি এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। মূল ঠিকাদার কাজ না করে কাজটি বিক্রি করে দেন চাটমোহরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফায়েত এন্টারপ্রাইজের কাছে। সেতুটির দুই পাশে মাজগ্রাম, রতনপুর, কুবিরদিয়ার, দাঁথিয়া কয়রাপাড়া, বাহাদুরপুর, মথুরাপুর, আনকুটিয়া, অমৃতকুন্ডাসহ প্রায় ১০/১২ টি গ্রামের জন সাধারন প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করেন। সেতুটির আশপাশে রয়েছে দাখিল মাদরাসা, হাফিজিয়া মাদরাসা, কবরস্থান, উচ্চ বিদ্যালয়, অমৃতকুন্ডা হাট-সহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
মাজগ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, সেতু নির্মাণে নিয়ম অনুযায়ী রড সিমেন্টের ব্যবহার হয়নি। পাখা ছোট করে করায় মাটি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। ইতোপূর্বে এখানে প্রায় ৮০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু ছিল। এখন যে সেতুটি করা হয়েছে সেটি আগের চেয়ে অনেক ছোট।
একই গ্রামের মিলন হোসেন ও রতনপুর জানান, সাব ঠিকাদার সেতু নির্মাণে অনিয়ম করেছেন। তিনি আমাদের কথা শোনেননি। আমরা খোঁজখবর নিতে গেলে তিনি বলেন, এটি দেখার জন্য সরকারি লোক রয়েছে। গ্রামবাসীর দেখার এখতিয়ার নেই। গত ১৭ মে কাজ শেষ হওয়ার পর লোকজন যাতায়াত শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকেই দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। ইট খুলে পড়ছে নদীতে। সংযোগ সড়কের পাশে স্থায়ী গাইডওয়াল নির্মাণ করলে সেতু ও সড়ক রক্ষা করা যাবে। সেতুর পাখা বড় না করে মেরামত করলে সংযোগ সড়ক আবার ধসে যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ সড়কের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, তারা এটা ঠিক করে দিবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাফায়েত এন্টারপ্রাইজের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, কাজ নিম্নমানের হয়নি। বৃষ্টিতে সংযোগ সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।