ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিননিধি:পা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গো-খাদ্য ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রির জন্য প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে। শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই চলছে এসব দোকান। এছাড়া প্রায় ৪/৫টি প্রতিষ্ঠান আমদানি কারকের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা লাইসেন্স ছাড়াই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের গো-খাদ্যের উপাদান আমদানি করে ট্রাক যোগে ভাঙ্গুড়ায় নিয়ে আসেন। পরে তাদের নিজস্ব কারখানায় মেশিনে পুনরায় মিশ্রন করে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা ভাঙ্গুড়াসহ জেলার আশেপাশের উপজেলায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে আসছেন। এসব গো-খাদ্যের বস্তায় নেই বিএসটিআই অনুমোদনের সিল ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ। অনেক সময় বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের বস্তায় তারা নিম্নমানের গো-খাদ্য ভরে নিজস্ব মেশিনে সেলাই করে ও স্টিকার লাগিয়েও বিক্রি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। বিশেষত গোবাদী পশু পালনের চারণ ভুমি হিসেবে খ্যাত হওয়ার কারণে এক শ্রেণির অসাধূ ব্যবসী এই ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প সমযে আঙ্গুল ফুলে হয়েছেন কলা গাছ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস তথ্য মতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গো-খাদ্য বাজারে বিক্রি করতে গেলেই জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের লাইসেন্স করতে হয়। আর গো-খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করতে হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে তদন্ত করে লাইসেন্স প্রদান করলে প্রতিষ্ঠানটি গো-খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারবেন। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকতে হবে। অথচ ভাঙ্গুড়া উপজেলায় দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া গো-খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, গো-খাদ্য বিক্রির লাইসেন্স নেন নি।
সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র বড়াল ব্রিজ রেলস্টেশনের পাশে রেলের জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে এই এলাকার বৃহৎ গো-খাদ্য তৈরীর একাধিক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও আরিফ এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক। তারা ৫ থেকে ৭ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন সহস্রাধিক বস্তা গো-খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা জমাট বাধা নিম্নমানের গো-খাদ্য মেশিনে ভাঙানো হচ্ছে। পরে তা বস্তাজাত করে অটোমেটিক মেশিনে সেলাই করা হচ্ছে। প্রশাসনের অভিযান এড়াতে বস্তাগুলো দ্রুত আশেপাশের গুদামে অথবা ট্রাকে লোড করে কারখানা থেকে সরানো হচ্ছে। এসময় ছবি তুলতে গেলে কারখানার মালিক শাহিন সহ কর্মচারীরা সাংবাদিকের উপর চড়াও হয়ে মোবাইল কেড়ে নিতে উদ্যত হন।
গো-খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান বলেন, বাজারের অনেকেই ভেজাল গো-খাদ্যের ব্যবসা করে। এটা বৈধ বা অবৈধ হোক প্রশাসন দেখবে, সাংবাদিক দেখার কেউ না। ইউএনও এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সবই বিষয়টি জানে।
একাধিক খামারী অভিযোগের সুরে বলেন, এসব খাদ্য ভেজাল ও নিম্নমানের গো-খাদ্যের কারণে পশুর সমস্যা প্রায়ই হয়। তাই পশুর বিভিন্ন সমস্যার কারণে ডাক্তারকে প্রচুর টাকা দিতে হয় । একদিকে যেমন গোবাদি পশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ে অন্যদিকে গাভীর দুধও কমে যায়। কিন্তু খাদ্য তো খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া তো আমাদের অন্য উপায় নেই । এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রুমানা আক্তার রোমি নিম্নমানের গোখাদ্যে গোবাদী পশুর পেটের পীড়া, বিষক্রিয়াসহ নানাবিধ সমস্যা হতে পারে বলে তিনি জানান, ভাঙ্গুড়ায় গো-খাদ্য উৎপাদন কিংবা বাজারজাতকরণ কাজে জড়িত কোন প্রতিষ্ঠানেরই প্রাণি সম্পদের লাইসেন্স কিংবা দেশের বাহির থেকে পণ্য আমদানি করার লাইসেন্স নেই। অথচ তারা ভারতের পণ্য দেশে এনে বিক্রি করছেন। তাই এটি দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে সবাইকে নোটিশ করা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, গো-খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুমোদন না থাকায় কিছুদিন আগে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছে। এখন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।