সিরাজগঞ্জ সলঙ্গায় খেজুরের রস এখন দূষ্প্রাপ্য

Spread the love

সলঙ্গা(সিরাজগঞ্জ)থেকে ফারুক আহমেদঃ খেজুরের রস শীতে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান। আগে হেমন্ত থেকে শুরু করে পুরো শীতকাল সিরাজগঞ্জ সলঙ্গাসহ তিনটি উপজেলায় বিভিন্ন  গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের ধুম পড়ে যেত। শীত মৌসুমের সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল খেজুর গাছের উপরের অংশ আগা কেটে তা থেকে মধুরস নির্গত করানো। গ্রামের বাড়ীর আনাচে কানাছে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে, এখানে সেখানে আগে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু ইট ভাটার কারনে সেই খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। ইট পোড়ানোর জন্য খেজুর গাছ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
শীতের আগমন অর্থাৎ হেমন্ত ঋতরু শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জনপদের গাছিরা (যে খেজুর গাছ কাটে) শুরু করে দেয় খেজুর গাছ কাটা। কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ন, পৌষ, মাঘ এবং ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত এই রস সংগ্রহের অভিযান চলে। তবে পুরো পৌষ ও মাঘ মাসে ভরপুর রস পাওয়া যায়। অথচ এখন পৌষ মাস চলছে এলাকায় যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা এখন কাটা হয়নি। কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না গাছীদের। কিন্তু আগের সেই গাছিরাও নেই খেজুর গাছ কাটার লোকও যেন নেই। সলঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে এখন বর্তমানে খেজুরের রস যেন দুষ্প্রাপ্য বস্তু। আগে প্রত্যেক গ্রামে খেজুর গাছ কাটা গাছিদের হাঁক শোনা যেত ‘‘এই খেজুর গাছ কাটবেন, রস নেবেন, ভাল রস”। কিন্তু এখন আর তেমন করে হাঁক শোনা যায় না। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে এ সব ক্রমশঃ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে গুড়, পাটালী তৈরী, পিঠা, পুলি পিঠা, পায়েস তৈরী করা হতো। খেজুর গাছ এমন এক প্রকার বৃক্ষ যার জন্য সঠিক কোনা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবে এই গাছ যত্রতত্রভাবে বেড়ে উঠে। কোথাও বীজ ফেললেই অনাদরে অবহেলাতেই দ্রুত বেড়ে উঠে। সড়কপথ, জমির আইল বা পতিত জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা, পুকুরের পাড়ে খেজুর গাছ লাগানো যেতে পারে। এর জন্য তেমন বিশেষ কিছুর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু আন্তরিক সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। এগুলোর সমন্বয় ঘটলে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। এতে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
সলঙ্গা আমশড়া গ্রামের বাসিন্দা বাহের আলী গাছীর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন খেজুর গাছ কাটা ও রস সংগ্রহ করা অনেক পরিশ্রমের বিষয়। এখন মানুষ এত পরিশ্রম করে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে চায় না। এর চেয়ে কম পরিশ্রম করে অন্য কাজ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যায়। তাই এই পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি যারা এখনও দু’একজন খেজুর গাছ কাটে তারা রস চোরের সমস্যার কারনে তাও বন্ধ করে দিচ্ছে। এক গ্লাস খেজুরের রস ৪০ টাকা পর্যন্ত গাছী বাহের আলীকে বিক্রি করতে দেখা গেছে। খেজুরের রস যেন এখন দুষ্প্রাপ্য বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD