চায়ের দোকানে পত্রিকা পড়ার সুযোগ

Spread the love

সিরাজগঞ্জ(সলঙ্গা) থেকে ফারুক আহমেদঃ
সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জ উপজেলা সলঙ্গা সদর থেকে  প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে আমশড়া জোড়পুকুর বাজার। সলঙ্গা থেকে তাড়াশের রোডের মধ্যে এই বাজারে গুরুত্ব অনেক বেশি কারণ এই বাজারটি তিনটি উপজেলার মধ্যেস্থল হাওয়ায় বাজারে সব সময় দুই থেকে তিন হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এই বাজারে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান আছে। তবে রবিউল ইসলামের  দোকানটা একটু আলাদা। কারণ এই দোকানে টেলিভিশনে নাটক-সিনেমা দেখিয়ে ক্রেতা টানা হয় না। রবিউল ইসলামের দোকানে মানুষ চা পান করতে আসেন তার বিভিন্ন কালারের চায়ের স্বাদের কারণে। তাছাড়া তার চায়ের সুনাম রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা জুরে। তার চায়ের সুনাম প্রচারে ব্যস্থ সময় পার করছেন ইউটিউবসহ বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকেরা। রবিউর ইসলামের দোকানে কাস্টুমারেরা  আরো আসেন  দৈনিক স্থানিয় ও জাতিও ১০ থেকে ১২টি পত্রিকা পড়ার টানে। দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য তাঁর এই উদ্যোগ ১৪ বছরের।
গত ৩ মার্চ বিকালে তাঁর দোকানে গিয়ে কথা হলো বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও পাঠকের সঙ্গে। তারা বললেন, এলাকাটি প্রত্যন্ত। পত্রিকা বিক্রেতারা তেমন একটা আসেন না এদিকে। আগ্রহী মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে থানার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে পত্রিকা পড়েন কিংবা কেনেন। তবে পাঁচ কালারের চা-বিক্রেতা রবিউল ইসলামের জন্য পত্রিকা পড়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
৩০ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম জানালেন, ২০০০ সাল থেকে তিনি তার চায়ের দোকানে পত্রিকা রাখা শুরু করেন। সে সময় দেশ বিদেশী বিভিন্ন খবরা খবর  সম্পর্কে এলাকার লোকজন জানতে চাইত। তার চায়ের দোকানে লোকজন এসে বিভিন্ন গল্প করত। রবিউল ইসলাম ভাবলেন, উপজেলা সদর থেকে পত্রিকা আনলে আসল খবর জানা যাবে।সেই থেকে শুরু। এখন পত্রিকার সংখ্যা এবং পাঠকের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন দুই শতাধিক পাঠক এসে পত্রিকা পড়েন রবিউল ইসলামের চায়ের দোকানে, এমনটাই জানালেন তিনি।
স্থানীয় একজন বললেন, দুপুরে পৌঁছায় প্রতিদিনের পত্রিকা। তখন থেকে শুরু হয় পাঠকের আনাগোনা। তবে বিকেল থেকে বাড়ে পাঠকের সংখ্যা। পাঠকের সংখ্যার দিকে নজর রেখে পত্রিকার সংখ্যা বাড়িয়েছেন রবিউল ইসলাম। প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রয়তা কামাল পাসার নিকট থেকে দৈনিক জাতীয় ও স্থানীয়  পত্রিকা কিনেন আমশড়া জোড়পুকুর বাজারের চায়ের দোকানদার রবিউল ইসলাম।
বরাত আলী সরকার,সাবেক মেম্বর সাইদুর রহমান, মাষ্টার আবুল সরকার, ইসমাঈল সরকারসহ অনেকেই প্রতিদিন বিকেলে এসে এই দোকানে পত্রিকা পড়েন। বললেন, ‘রবিউল ইসলাম আসলে মানুষকে পত্রিকা পড়িয়ে মজা পান।’ সাংবাদিক ফারুক আহমেদের কথায়, ‘রবিউল ইসলামের মতো একজন চা-দোকানি নিজের টাকায় এত দিন ধরে মানুষকে পত্রিকা পড়িয়ে আসছেন, এটাই বড় কথা। তাঁর এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।’
রবিউল ইসলাম নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সাংসারে অভাব অনাটনের কারণে পড়া-লেখা করা আর হয়নি।  কিছুদিন গ্রামের দক্ষতার সাথে দর্জির কাছ করেছেন। কিন্ত সখের বসে ভালো লাগা থেকে একসময় চা বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে সে দক্ষতার সাথে চা বিক্রতা। তখন থেকে এই আয়ের টাকায় সংসার চলে তার। সংসারে আছেন বর্তমানে দুইজন  স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও বাবা মা।  রবিউল ইসলামের ছেলেগুলিকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্থানীয় কয়েকটা স্কুলে। চায়ের দোকানে পত্রিকা রাখতে মাসে ৬০০ টাকার মতো খরচ হয় রবিউল ইসলামের। কিছু টাকা বাঁচিয়ে পরিশোধ করেন পত্রিকার বিল। রবিউল ইসলাম বললেন, সংসারে অভাব থাকলেও মানুষকে পত্রিকা পড়ানোর কাজটি তিনি চালিয়ে যেতে চান।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD