সাব্বির আহম্মেদঃ শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল এলাকায় চলতি ক্ষীরা আবাদের মৌসুমে ক্ষীরার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ভাল দাম পাওয়ায় ক্ষীরা চাষী কৃষকদের চোখে-মুখে হাঁসি ফুটে উঠেছে। আর বর্তমানে চলনবিলের প্রত্যন্ত এলাকায় ওই ক্ষীরা বিক্রির অস্থায়ী আড়তকে কেন্দ্র করে চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক এলাকা সরগরম হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি বছর চলনবিল এলাকায় ক্ষীরা চাষে মল্লিকা ও ঝুমকা জাতের ফলনে বাজিমাত হয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নওগার আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে পলি দো-আশঁ মাটিতে চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে নিবির ভাবে ক্ষীরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ২৫০ হেক্টর বেশী। স্থানীয় তাড়াশ উপজেলার দিঘুরিয়া গ্রামের ক্ষীরা চাষী কৃষক রেজাউল করিম জানান, বোরো ধান আবাদের চেয়ে ক্ষীরা আবাদ লাভ জনক হওয়ায় চলনবিল এলাকায় ক্ষীরা চাষ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও এ বছর সার্বিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বীজ, সার ও কীটনাশক সংকট না থাকায় চলনবিল এলাকায় ক্ষীরার বম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে চলনবিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের ১০ টি উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের ফসলী মাঠে আগাম জাতের ক্ষীরা যেমন মল্লিকা, ঝুমকা, নওগাঁ গ্রীণ-১, বারি ১,২,৩, এফ-১, ইউনিক, রায়হান ও প্রতীক জাতের ক্ষীরার আবাদ হয়েছে বেশী। বিশেষ করে মল্লিকা ও ঝুমকা জাতের আবাদে ফলন ভাল হয়েছে। আর বর্তমান ক্ষীরা বিক্রির ভরা মৌসুমে চলনবিল এলাকায় ক্ষীরা চাষী কৃষকেরা সরাসরি জমি থেকে ও নিকটবর্তী ক্ষীরা বিক্রির অস্থায়ী আড়ৎ গুলো থেকে ভাল দামে ক্ষীরা বিক্রি করছেন দেদারচ্ছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইকার ও বিক্রেতা বেচা-কেনা করে থাকেন। ওই সকল অস্থায়ী ক্ষীরা বিক্রির আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টি ট্রাকে টন টন ক্ষিরা বেচা-কেনা হচ্ছে । চলনবিলের কৃষকের উৎপাদিত ক্ষীরা যাচ্ছে ঢাকা সহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায়।
নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার বিয়াস গ্রামের ক্ষীরা চাষী আকবর আলী মন্ডল জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে ক্ষীরার চাষ করেছেন এবং তুলনামূলক বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৪২ মণ ফলন পাচ্ছেন। আর বাজারে ক্ষীরার দামও ভাল। তিনি আরো জানান, চলনবিলের অস্থায়ী ক্ষীরা বিক্রির আড়তে বর্তমানে ২৫ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ক্ষীরা বিক্রি করছেন। আবার তাড়াশের মনোহরপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছেন। এতে তার বীজ,রাসায়নিক সার, সেচ, কৃষি শ্রমিক সহ আনুসঙ্গিক খরচ হয়েছে, বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর তিনি ৩ বিঘা জমির ক্ষীরা বিক্রি করবেন প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর সব খরচ বাদে ওই ৩ বিঘা জমি থেকে তার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে। যা বোরো ধান আবাদ করে পাওয়া সম্ভব না।গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের কৃষক আলতাব আলী জানান, সাম্প্রতিক বছর গুলোতে চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষীরার চাষ তুলনামূলক বাড়ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, টাঙ্গাইল , চট্রগ্রামসহ বড় বড় শহরে খাবারের সালাদ হিসেবে ক্ষীরার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি মৌসুমেই ওই সকল শহর থেকে চলনবিল এলাকায় অস্থায়ী ক্ষীরা বিক্রি আড়ৎ গুলো থেকে এমনকি কৃষকের জমি থেকে সরাসরি মহাজনরা ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে প্রতি দিন ট্রাক ভর্তি ক্ষীরা কিনে শহরে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ দিকে ঢাকার ক্ষীরা ক্রেতা মহাজন আব্দুস সালাম তরফদার জানান, বর্তমানে তারা ২৫ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ক্ষীরা কিনে তা শহরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর চলনবিলের ক্ষীরা বিক্রির আড়ৎ গুলোতে শহরের ক্ষীরা ক্রেতা মহাজনরা ভীড় করছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, চলতি বছর চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার ফসলী জমিতে ক্ষীরা চাষে ফলন ভালো হয়েছে। ক্ষীরার বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় কৃষক দামও পাচ্ছেন ভাল।