সলঙ্গা বিদ্রোহ ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত সিঁড়ি

Spread the love

(সলঙ্গা বিদ্রোহে বীর শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি বিন¤্র শ্রদ্ধা)

মোঃ আবুল কালাম আজাদ ]]

আজি হতে শতবর্ষ আগে ১৯২২সাল। ২৭ জানুয়ারী । সলংগা হাটের দিন। উপ মহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে সলংগা হত্যাকান্ডের ঘটনা যেমন সবচেয়ে নৃশংস ও পাশবিক, তেমনি নিহত – আহতের সংখ্যা সর্বাধিক । বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সলংগা হত্যাকান্ডের তথ্যাবলী জানা একান্ত প্রয়োজন। কেননা সলঙ্গা বিদ্রোহই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের “ রক্তসিঁড়ি” হিসেবে পরিচিত। সলংগা বিদ্রোহের মূল নায়ক ছিলেন চলনবিলের বাগ্মীনেতা ২২ বছরের টসবগে তরুন যুবক মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ।

১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন।পলাশীর আ¤্রকানন। এখানেই বাংলার শেষ নবাব সিরাজ উদদৌলার পরাজয় ঘটে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। যুগে যুগে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা বৃটিশ শাসন, শোষন,নির্যাতন আর অবিচারের ফলে দেখা দেয় বিদ্রোহের পর বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহগুলি হচ্ছে ১৭৬০ সালে সন্যাসী বিদ্রোহ,১৭৬৮ সালে সমশের গাজী বিদ্রোহ,১৭৬৯ সালে সন্দ্বিপ বিদ্রোহ,১৭৭৬-৮৭ সালে চাকমা বিদ্রোহ,১৮৩১ সালে ওহাবী আন্দোলন,১৮৩৭-৮২ সালে গারো বিদ্রোহ,১৮৩৮-১৯৪৮ সালে ফরায়েজী বিদ্রোহ, ১৮৫৫-৫৮ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ,১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ, ১৮৫৯-১৯৬১ সালে নীল বিদ্রোহ , ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জ বিদ্রোহ এবং ১৯২২ সালে সলঙ্গা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন, সন্ত্রসবাদী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, চট্রগ্রাম অস্ত্রগার লুন্ঠন এবং দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শেষে ইতিহাসের ধারাবহিকতায় ভারতবর্ষ দ্বিখন্ডিত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র জন্ম নেয়।

তিতুমির থেকে সূর্যসেন। মজনুশাহ থেকে শুরু করে সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম বিদ্রোহী সিপাহী মঙ্গল পান্ডে সবাই বাংলার। এই বাংলাদেশের।

বৃটিশ সম্রাজ্যবাদের শাসন-শোষন থেকে ভারত উপমহাদেশের মুক্তি,ভারত-পাকিস্তান আন্দোলন,পাকিস্তানের উপনিবেশিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও বল্গাহীন শোষনের কবল থেকে বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন , স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক জাতীয় নেতা মনিষী মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। তিনি ছিলেন বৃটিশ স¤্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহের মহা নায়ক, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসেনানী,ঋন শালিশী আইন প্রনয়নের উদ্যোক্তা, ১৯৪৬ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপস্থাপক ও পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পুরধা। পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চ কন্ঠ,বাঙলা ভাষা আন্দোলনের আদর্শিক মহাপুরুষ।

উপরোল্লেখিত দীর্ঘকালীন ইতিহাসে গনমানুষের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক,শিক্ষা- সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রামে যাঁরা মহান নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, জনগনমননন্দিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খেতাবে ভুষিত হয়েছিলেন- ‘মহাত্মা গান্ধী’মোহন দাস করমচাঁদ, ‘‘ কায়েদে আজম’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ‘পন্ডিত’ জওয়াহের লাল নেহেরু, ‘স্যার’ সৈয়দ আমেদ, ‘দশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশ, ‘ নেতাজী’ সুভাষ চন্দ্র বসু, ‘শেরে বাঙলা’ এ কে ফজলুল হক, ‘ বিশ^ কবি- কবিগুরু’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলাম, ‘মাস্টারদা’ সুর্যসেন, ‘মীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গাফ্ফার খান, ‘ কাশ্মীর শার্দুল’ শেখ মোহম্মদ আব্দুল্লাহ,‘গনতন্ত্রের মানষপুত্র’ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এবং ‘বঙ্গবন্ধু’শেখ মুজিবুর রহমান।

এমনি একজন ঐতিহাসিক খেতাবধারী ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ । তাঁর খেতাব ছিল- ‘তর্কবাগীশ ’ ও ‘শেরে বাবুর’। বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক ‘সলঙ্গা’ রক্তাক্ত বিদ্রোহের মহানয়ক মাওলানা তর্কবাগীশের বিপ্লবী কর্মোদ্দীপনার ইতিহাস এবং কুখ্যাত জমিদার -মহাজনদের সীমাহীন অত্যাচার শোষনে জর্জরিত বাংলার রায়ত-খাতক তথা কৃষক প্রঝাসাধারনের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক ‘ঋনশালিশী আইন’ প্রনয়নের দাবী উত্থাপন করে তা বাস্তবাযনের লক্ষ্যে তাঁর আপোষহীন কর্মতৎপরতায় মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং মহাত্মাগান্ধী ১৯৪২ সালে তাঁকে ‘ শেরে বাবুর’ খেতাবে ভুষিত করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকেও ‘ কায়েদে আজম’ খেতাবটি মহাত্মা গান্ধীজীই প্রদান করেছিলেন।

উপমহাদেশে স্বাধীনতার ইতিহাসে সলঙ্গা বিদ্রোহ একটি হিরন্ময় অধ্যায়ের সংযোগ ঘটিয়েছে । সল্গংা বিদ্রোহের বাস্তব গুরুত্ব এবং মর্যাদা এত বিশাল এবং গভীর যা কারো মুল্যায়ন করার অপেক্ষা রাখেনা । চলনবিল অঞ্চল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক যুক্ত বাংলার সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে ্ ব্রিটিশ বিরোধী, পল বিরোধী, কৃষক বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সিংহপুরুষ চলনবিল অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রানের দ্রোহের এক ভাস্বর ইতিহাস হয়ে আছেন চলনবিলের প্রানপুরুষ এক ক্ষনজন্মা বাগ্মী বিপ্লবী প্রতিবাদী কন্ঠস্বর মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ । যার শিশুকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষা, সামাজিক, রাজনৈতিক,ধর্মীয় কর্মময় জীবনের ইতিহাস লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লিখলেও লেখার সাধ অপুর্ন থেকেই যাবে । মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রানপুরুষ আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের অনবদ্য অবদান নিঃসন্দেহে জাতির চেতনা বিকাশের এক গৌরবোজ্জল অধ্যায় । তদানিন্তন পুর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অভ্যন্তরে তাঁর বলিষ্ঠ ভ’মিকার মধ্যদিয়ে মাতৃভাষা আন্দোলন যৌক্তিক পরিনতি লাভ করে। মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাওলানা তর্কবাগীশের মহিমান্বিত অবদান সত্যি অতুলনীয় । কেননা ভাষা আন্দোলনের তাঁর সেই বীরত্বগাঁথা ভুমিকার ফলেই জাতীয় জীবনে সুচিত হয় মুক্ত স্বাধীন চেতনার চরম বিস্ফোরন । আর ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ তারই চুড়ান্ত ফসল ।

১৯১৫ সালে চির বিদ্রোহী আব্দুর রশীদ অসাধারন সাংগঠনিক ক্ষমতা ও অসম সাহসিকতার সাথে অনাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে শেরপুরের কেলাকুশি মেলা থেকে দুইটি পতিতালয় উচ্ছেদ করেন । তঁরই প্রচেষ্টায় দেহ ব্যবসা দুইটি উৎপাটিত হওয়ায় সমগ্র অঞ্চলে তাঁর নামে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয় । এসময় আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ তৎকালীন বাঙালী মুসলমান সমাজের মুসলিম পূনর্জাগরনের নকিব অন্যতম বিখ্যাত বাগ্মী নেতা রেনেসাঁ কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সহযোগী হিসেবে তিনি সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান‘ খাদেমুল ইসলাম’ নামক সংগঠনে যোগ দেন । সারা বাংলায় সন্ত্রসবাদী আন্দোলন ছিল সম্পুর্ন গোপন রাজনৈতিক দল । মাওলানা তর্কবাগীশ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর অনুপ্রেরনায় এই বিপ্লবী দলে যোগ দেন ।

১৯২২সালের ২৭ জানুয়ারী শুক্রবার সলংগা হাটের দিন উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে সলংগা হত্যাকান্ডের ঘটনা যেমন সবচেয়ে নৃশংস ও পাশবিক, তেমনি নিহত – আহতের সংখ্যা সর্বাধিক । বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সলংগা হত্যাকান্ডের তথ্যাবলী জানা একান্ত প্রয়োজন । সলংগা বিদ্রোহের মূল নায়ক ছিলেন চলনবিলের বাগ্মীনেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা হাট ছিল অত্র এলাকার বিখ্যাত হাট । তখন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে চলছিল অসহযোগ এবং বিলেতী পন্য বর্জন অভিযান। ২৭ জানুয়ারী শুক্রবার সলঙ্গার হাট খুব জমজমাট অবস্থানে থাকার প্রক্কালে তর্কবাগীশ তিন শতাধিক স্বেচ্ছসেবক কর্মীবাহিনী নিয়ে‘ বিলেতী দ্রব্য বর্জন কর, এ দেশ থেকে বৃটিশ খেদাও’শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করেন । সলঙ্গার মাটিতে যখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে , ঠিক তখনই এই আন্দোলন রুখতে ছুটে আসেন পাবনা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি. আর এন সাহা, পাবনার পুলিশ সুপার এবং সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক মি. এস কে সিনহা। ৪০ জন স্বশস্ত্র পুলিশ নিয়ে সলঙ্গা হাটে উপস্থিত হয়ে কংগ্রেস অফিস থেকে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার তা্রঁ উপর বর্বরোচিত নির্যাতন করে। নির্যাতনে তর্কবাগীশের নাক, কান ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। দেহের নানা স্থানে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে সলঙ্গার মাটি রক্তে ভিজে যায় । সঙ্গে সঙ্গে হাটের জনতার মধ্যে অগ্নীস্ফুলীঙের ন্যায় বারুদ জ্বলে উঠে । বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের প্রিয় নেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে ছারিয়ে নিতে পুলিশ সুপার, ম্যাজিষ্ট্রেট এবং মহকুমা প্রশাসককে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ঘিরে ধরে । উত্তেজিত জনতার ঢল আর আক্রোশ থেেেক বাঁচার জন্য জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশকে গুলি চালাতে নির্দেশ দেন । নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সাথে সাথে ৩৯ টি রাইফের থেকে উত্তেজিত জনতার উপর নির্মমভাবে গুলি চালালে হাটে আসা বহু নিরিহ লোক নিহত এবং আহত হয় । যার প্রকৃত কোন হিসাব কেউ দিতে পারেনাই । সরকারী হিসেবে ৩৭৯ জন কিন্তু বেসরকারী হিসেবে ১৫-২০ হাজারেরও অধিক বলে কথিত আছে।সিরাজগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে রহমতগঞ্জে একটা গনকবর আছে। এই গনকবরে কতজন মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছিল আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারে নাই ।

মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ পুলিশ সুপারের নির্মম নির্যাতনে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন । সাথে সাথে তর্কবাগীশ মারা গেছেন মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে । যুবক তর্কবাগীশের দাদা ও পিতার মুরিদ এবং জনতা একত্রিত হয়ে লাঠি-সোটা, তীর-ধনুক, সড়কি,বল্লম,দা-কুড়াল নিয়ে সজ্জিত হয়ে নাড়ায়ে তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে পুলিশ, মহকুমা প্রশাসক, ্এসপি ্এবং ম্যাজিষ্ট্রেটদের ওপর চড়াও হলে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা মাওলানাকে আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে তাদের প্রান বাঁচানোর জন্য আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের কাছে আকুল আবেদন করেন। তারা তর্কবাগীশকে ছেড়ে দিয়ে মারমুখী জনতার কবল থেকে রক্ষা পান। অহিংস নেতা মাওলানা তর্কবাগীশ সেদিন অহিংস আন্দোলনের নেতা হিসেবে জনতার কবল থেকে বৃটিশের এসপি, ম্যাজিষ্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক , পুলিশসহ সকলের প্রনরক্ষার বিরাট ভ’মিকা রেখেছিলেন । তা নাহলে ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারতো । বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের উপমহাদেশের ইতিহাসে সলঙ্গার ভয়াবহ ঘটনার সাথে তুলনা করা হয় ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ান বাগের হত্যাকান্ডের ।

তর্কবাগীশকে জীবিত দেখতে পেয়েই হাজার হাজার জনতা প্রচন্ড উল্লাস ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে উঠে ।অতঃপর উত্তেজিত বিক্ষুব্দ জনতাকে শান্ত থাকা ও ধৈর্য্য ধারনের জন্য মাওলানা সাহেব তাঁর স্বভাবসুলভ বাগ্মিতা দিয়ে আহবান জানালে মুহুর্তে শান্ত হয়ে যায় । বৃটিশ বাহিনীর এই গনহত্যার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে খেলাফত আন্দোলন এবং কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মী , মেডিক্যাল টিম, সাংবাদিক এবং স্বেচ্ছাসেবক টিম ঘটনাস্থলে যান । স্বেচ্ছসেবকেরা বহু আহতকে সিরাজগঞ্জ বা আশেপাশে চিকিৎসা করার উপায় না দেখে কোলকাতায় নিয়ে যায়। ঘটনার ভয়াবহতার বিবরন দিয়ে সাংবাদিকরা বিষÍারিত খবর পাঠালে দেশ- বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে খবর ছাপা হলে চারিদিক থেকে তদন্তের জোড় দাবী উঠে । যদিও দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত হলেও তদন্তের রিপোর্ট আজও বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ পায়নি।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ তিনটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিন্তু বৃটিশ-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুর্ববাঙলার তীর্থভুমি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বিদ্রোহের রক্তাক্ত ইতিহাস আজো লেখা হয়নি।

বৃটিশ বাহিনীর এই গনহত্যার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে খেলাফত আন্দোলন এবং কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মী , মেডিক্যাল টিম, সাংবাদিক এবং স্বেচ্ছাসেবক টিম ঘটনাস্থলে যান । স্বেচ্ছসেবকেরা বহু আহতকে সিরাজগঞ্জ বা আশেপাশে চিৎিসা করার উপায় না দেখে কোলকাতায় নিয়ে যায়। ঘটনার ভয়াবহতার বিবরন দিয়ে সাংবাদিকরা বিষÍারিত খবর পাঠালে দেশ- বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে খবর ছাপা হলে চারিদিক থেকে তদন্তের জোড় দাবী উঠে । যদিও দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত হলেও তদন্তের রিপোর্ট আজও বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ পায়নি। পরবর্তীতে এবছরই বৃটিশ বাহীনি এই বাগ্মী চলনবিলের গনমানুষের নেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে গ্রেফতার করে। ১৯২৩ সালের শেষের দিকে প্রায় এক বছর পর তিনি জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ তিনটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিন্তু বৃটিশ-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুর্ববাঙলার তীর্থভুমি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বিদ্রোহের রক্তাক্ত ইতিহাস আজো লেখা হয়নি।

প্রথমতঃ এদেশের মাটিতে স¦াধীনতা সংগ্রামীদের গনকবর রচিত হয়। দ্বীতিয়তঃ সিপাহী বিদ্রোহের পরে এই বিদ্রোহে সর্বাধিক পরিমান স্বধীনতাকামী বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গর্বিত শহীদ হন । তৃতীয়তঃ অসহযোগ আন্দোলনের মূলমন্ত্র অহিংসার এক অসামান্য ত্যাগ স্বীকার উপমহাদেশের একমাত্র সলঙ্গাতেই রক্ষা করা হয়েছে ।

আজ যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার বুকে স্বাধীন নাগরিকদের অবাধ বিচরন তার পেছনে রয়েছে অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস । সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের যাঁরা মহা নায়ক তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন চলনবিলের কৃতি সন্তান মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ । তাঁর দীর্ঘ জীবনের শেষমুহুর্ত পর্যন্ত এই মহান নেতা জাতির কল্যানে সুচিন্তা করেছেন । জাতির বৃটিশ শোষনের হাত থেকে মুক্তির ভীষন কান্ডারী হিসেবে দেশ ও জাতিকে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন এসব ক্ষনজন্মা প্রানপুরুষেরা । মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ তাঁর মেধা, মনন,দক্ষতা ,যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা ও কঠোর পারিশ্রম দিয়ে এ দেশের বিপদসংকুল রাজনৈতিক অঙ্গনকে করে গেছেন মসৃন ।

মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ দু‘দুটি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সম্মুখ পানে এগিয়ে গেছেন। পরাজয়কে তিনি কঠোর হসেÍ জয়করেছেন ।তিনি কখনো হতাশ হননি । আর হতাশ হননি বলেই তিনি উপমহাদের ঐতিহাসিক দলিলে গুরুত্বপুর্ন স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছেন । সেই অবস্থান থেকে তাঁকে কেউ অদ্যাবধি সরাতে পারে নাই । বৃটিশ হটাও আন্দোলনে তিনি চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবেন ।

# আবুল কালাম আজাদ,সভাপতি, চলনবিল প্রেসক্লাব, গুরুদাসপুর, নাটোর,০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩, তারিখ- ২২৭/০১/২০২২ #

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD