‘শোকাহত’ হওয়া-কতটুকু সমিচিন

Spread the love

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ
বিশ্বব্যাপী একটি সংস্কৃতির প্রচলন গড়ে উঠেছে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি যে কোন জাতির মানুষই মারা গেলে প্রচার করা হয় ‘একটি শোক সংবাদ’। আসলে মৃত্যু কী কোন শোকের বিষয়? এটিই একমাত্র সত্য যে, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অনিবার্য। আর সেই মৃত্যু কবে, কখন ও কীভাবে হতে পারে তার কোন নিশ্চয়তা কারো কাছেই নেই। মৃত্যুর জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকাই জ্ঞানির কাজ। সকলেরই মৃত্যু হবে বিধায় মৃত্যুর জন্য সবারই সচেষ্ট থাকতে হবে। কারো মৃত্যু হলে সেটা কোন শোকের বিষয় নয়। এটিকে প্রচার করা যেতে পারে ‘একটি মুত্যু সংবাদ’। যেহেতু মৃত্যু প্রতিরোধ করার কোন সুযোগ বা ক্ষমতা কারো নেই, মৃত্যুর ভয়ে পালানোরও কোন জায়গা নেই। আবহমান কাল থেকে জন্মগ্রহণকারীর মৃত্যু হয়ে আসছে। কেউ মারা গেলে প্রথমতঃ প্রচার করা হয় ‘একটি শোক সংবাদ’। অতঃপর মৃত্যের পরিবারের কাছে প্রেরণ করা হয় শোক বার্তা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নেতা হলে বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল বা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্র শোক বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে মৃত্যের পরিবার বা রাষ্ট্রকে শোকের সমবেদনা জানানো হয়। কারো কারো জন্য তিনদিন, সাতদিন বা চল্লিশ দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় শোক পালন করতে প্রজাদের বাধ্য করা হয়। কালো ব্যাজ ধারণ করা, কালো পতাকা উত্তোলন করা, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ করা হয় উপর মহল থেকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ভবনে, গাছে গাছে কালো রং এর ব্যানার, ফ্যাস্টুন, পোস্টারে শোকাহতের ছবি, মৃত্যের ছবি দিয়ে সাজানো হয় পুরো শহর। ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে লেখা হয় অমুকের মৃত্যুতে আমি বা আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে কাগজে বা কাপড়ে শোকের বড় বড় গর্ত সৃষ্টি লেখা হচ্ছে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। কি শান্তি কামনা করছেন আপনি? কার কাছে আবেদন করলেন? কি দোয়াই করেছেন তার পরকালের জন্য? হিসেব মিলিয়ে দেখুন নেতার মরদেহ সামনে রেখে রাজনৈতিক মঞ্চ সাজিয়ে শোকে কারো কারো হাটু ফেটে কান্না বের হচ্ছিল অথচ দাফনের তিন ঘন্টা যেতে না যেতেই প্রয়াত নেতার আসনে আসিন হতে আত্ম-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়ে যায়।
রাজনৈতিক অভিনয়ে মায়া কান্না না করে যদি তার কল্যাণ চান আল্লাহ’র কাছে দোয়া করুন। অন্যথায় লোক দেখানো শোকাহত হয়ে শোকের গত তৈরি করায় মৃত্যের কোন কল্যাণ হয় না। এ সকল ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে শোকাহত লেখা রাজনৈতিক কৌশলের নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, ব্যবসায়িক সঙ্গি ও কর্মজীবনের সহকর্মী আপনাদের নিজ নিজ উদ্দেশ্য সফলের জন্য মৃত ব্যক্তি প্রিয় কালো কাপড়ে শোকাহত লিখে ধোকা না দিয়ে তাদের পরকালের জীবনের জন্য কিছু করাই উত্তম। মনে রাখতে হবে মৃত্যু আপনারও নিকটেই রয়েছে হয়তোবা আপনার নেতার কুলখানি শেষ করার আগেই আপনার কুলখানি হতে পারে। প্রত্যেক জীবের মরণের আগেই মৃত্যের সংবাদ দেয়া হয়েছে।
সারা বিশ্ব মৃত্যু নিয়ে যা করছে করুক, আমরা বাংলাদেশী বাঙালি, আর এদেশের অল্প কিছু সংখ্যক অমুসলিম বাদে সকলেই মুসলমান। তাই একজন মুসলমান অমুসলিমদের সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট না হয়ে মুসলিম ধর্মীয় কৃষ্টি কালচার লালন করাই উত্তম। তাই আসুন আমরা কারো মৃত্যু সংবাদকে শোক সংবাদে পরিণত না করি। কাগজে, ব্যানারে বা দেয়ালে শোকাহত না হয়ে মৃত ব্যক্তির ও নিজের কল্যাণে দোয়া করি।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ।

 

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD