উপজেলায় ২২ হাজারের মতো ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করছেন। তারা অধিকাংশই ভূমিহীন ও কৃষি শ্রমিক।
গোলাম মোস্তফা, তাড়াশ : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বন্যার কারণে নৃ তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। মাঠে কাজ না থাকায় তারা বিন্যার ফুল, খেজুর পাতা ও তালপাতার ঝাটা, সাপটা, পাটি বুনে বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন।
তাড়াশের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী অধ্যূষিত মানিকচাপর গ্রামের সুমুতি উরাঁও, সন্ধা উরাঁও, শান্তি উরাঁও, শাপলা উরাঁও ও ববিতা উরাঁও বলেন, আমরা সহায় সম্বলহীন। দিন মজুর খেটে পেট চলে। বাড়িতে কোনো খাবারের মজুদ নেই। ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে আমন রোপনের পড় থেকে মাঠে কাজও নেই। সেই ধান পাকতে তিন মাসের মতো সময় লাগবে। এরপর আগামী কার্তিক মাস পর্যন্ত তেমন কাজ নেই। বলতে গেলে, “আড়াই থেকে তিন মাস আমাদের অর্ধাহারে দিন কেটে যাবে।
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী অধ্যূষিত গুল্টা গ্রামের ইষাণ কুজুর, অমৃত এক্কা ও রঞ্জনা টপ্য বলেন, পেটের দায়ে তারা কম দামে কৃষকের কাছে আগাম শ্রম বিক্রি করছেন। অনেকে ঋণ ও ধার দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন। এদিকে উপজেলা উরাঁও ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যমতে তাড়াশ উপজেলায় ২২ হাজারের মতো ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করছেন। জাতিগতভাবে তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারা অধিকাংশই ভূমিহীন ও কৃষি শ্রমিক।
(৩ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে দেখা গেছে, মানিক চাপর গ্রামের ছয়জন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারীরা রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের বেরখালি এলাকায় খালের পাড় থেকে বিন্যার ফুল সংগ্রহ করছেন।জানা গেছে, ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষজন বিন্যার ফুল, খেজুর পাতা, তালপাতা ও বাঁশের ঝাটা, সাপটা, পাটি, কুলা, ডালি, টোপা, চালুন, খালই ও মাছের ওড়া তৈরি করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে মাছ ধরে ও শালুক কুড়িয়ে বিক্রি করেন। এরপরও কাকড়া ও শামুক, ঝিনুক ধরে তারা পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটান।
উপজেলা উরাঁও ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিরেন্দ্র নাথ বাঁরো বলেন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষজন বংশ পরম পরায় কুটির শিল্পের নানা রকম জিনিস তৈরি করতে পারদর্শী। তিনি তাদের জন্য সরকারিভাবে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও মূলধন হিসেবে সুদমুক্ত ঋণ সহায়তার দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, পর্যায় ক্রমে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনকে কুটির শিল্প প্রশিক্ষণের আওতায় এনে তাদের আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।