মোঃ আকছেদ আলী :
এক সময় পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার ৯ টি উপজেলার ৮৫৫ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে চলনবিলের বিস্তৃতি থাকলেও ক্রমশই তা কমছে। নদ-নদী, খাল-বিলের নাব্যতা সংকট ও চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে অসংখ্য নতুন রাস্তা ঘাট নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হলেও চলনবিল তার স্বকীয়তা হারিয়েছে, হারাচ্ছে। তাছাড়া চলনবিলের নদী গুলোর মাধ্যমে প্রতি বছর ২২২.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বিলে প্রবেশ করে এবং ৫৩ মিলিয়ন ঘন ফুট পলি নদী পথে বিল থেকে বেড়িয়ে যায়। অবশিষ্ট ১৬৯.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রতি বছর বিলে স্থিত হয়ে বিলের গড় উচ্চতা ০.৫ ইঞ্চি বাড়ায়।অনেক রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় এবং ক্রমশই বিলের উচ্চতা বাড়ায় নৌপথ যেমন কমছে তেমনি কমছে নৌযানের সংখ্যা ও। আনুমানিক ৫০ বছর পূর্বে ও গভীর, বিপদসঙ্কুল চলনবিলের পানির ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে নৌপথে যাতায়াত করতো মানুষ। কয়েক বছর পূর্বেও আষাঢ়-শ্রাবণে বিল জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতো নৌকা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বিলে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় নৌযানের সংখ্যা দ্রত হ্রাস পাচ্ছে।
চলনবিল অধ্যুষিত এ এলাকার বিল গুলোতে পূর্বে আষাঢ় শ্রাবন মাসে বন্যার পানিতে থৈ থৈ করতো। এ সময় কদর বাড়তো ছোট ছোট ডিঙি নৌকার। এ বছর বর্ষা কাল প্রায় শেষ হয়ে এলেও চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়াসহ বৃহৎ চলনবিলের অন্যান্য অনেক এলাকার ছোট ছোট বিলে এখনো প্রবেশ করেনি বন্যার পানি। কোন কোন বিলে পানি প্রবেশ করলেও তা যথেষ্ট নয়। তাই চলনবিল এলাকায় কদর কমছে ডিঙি নৌকার। তবে কিছু কিছু মানুষ এখনো ডিঙি নৌকা তৈরী ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।ভাঙ্গুড়ার জগাতলা গ্রামের ডিঙি নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, পানি স্বল্পতার কারণে এ বছর ডিঙি নৌকা খুব কম বিক্রি হচ্ছে। নৌকার হাট গুলোতে সামান্য ডিঙি নৌকা উঠলেও দেখা মিলছে না ক্রেতার। ১২ হাত মেহগনি কাঠের টিনের বডির ডিঙি নৌকা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়, কড়ই কাঠের ১১ হাত ডিঙি নৌকা ৩ হাজার টাকায়, শিমুল কাঠের ১০ হাত ডিঙি নৌকা ২ হাজার ৬শ টাকায়, লাটিম কাঠের ১০ হাত ডিঙি নৌকা ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকায়, আম কাঠের ১১ হাত ডিঙি নৌকা ৩ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিঙি নৌকা তৈরীর উপযোগি প্রতি সিএফটি মেহগনি কাঠ ৩৫০ টাকা, কড়ই কাঠ ২৪০ টাকা, শিমুল কাঠ ১৮০ টাকা, লাটিম কাঠ ১৪০ টাকা, আম কাঠ ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত ১১ হাত একটি নৌকা তৈরী করতে ৬ থেকে ৭ সিএফটি কাঠ, ১শ টাকার লোহা প্রয়োজন হয় এবং মিস্ত্রীকে ৬শ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। ক্রেতা সংকটের কারণে এ বছর কাঙ্খিত পরিমান ডিঙি নৌকা বিক্রি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
হান্ডিয়ালের জাকির সেলিম জানান, মাছ ধরা, নদী পারাপার, ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে যাতায়াত, আমন ধান ক্ষেতে ধানের উপর জমে থাকা কচুরী পানা অপসারণে, গরুর খাদ্য হিসেবে কচুরী পানা কাটার কাজে ডিঙি নৌকা বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেকে ডিঙি নৌকা কিনে ভাড়ায় মানুষ পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার এখনো বন্যা না হওয়ায় পথ ঘাট শুকনো থাকায়, জলাশয় গুলোতে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় ডিঙি নৌকার কদর নেই।জানা গেছে, চলনবিলের সব উপজেলাতেই এখনো কম বেশি ডিঙি নৌকা তৈরী হয়। মঙ্গলরার চাঁচকৈড়, বুধবার এরশাদনগর, সোমবার সলঙ্গাসহ আরো কিছু হাটে ডিঙি নৌকা বিক্রি হয়। মির্জাপুর হাটে প্রতিদিনই নৌকা বিক্রি হয়। কারখানা মালিকেরা ডিঙি নৌকা তৈরী করে পাইকারী বিক্রি করেন। উৎপাদক থেকে পাইকার এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট থেকে ব্যবহারকারীরা ডিঙি নৌকা কিনে থাকেন। মালিকানা পরিবর্তনের ফলে এক শ্রেণীর মধ্য স্বত্ত¡ভোগী মধ্য স্বত্ব ভোগ করেন।