জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর
পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাট সংগ্রহ ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। চাটমোহরে পাটের ফলন ও দাম ভালো হলেও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটছেন বিল-ডোবা ও পুকুর-নালার খোঁজে। অনেকে কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালোর পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পাট চাষিদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় ৮ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেশী ১৩৫ হেক্টর, তোষা ৮ হাজার ৪৪৫ হেক্টর এবং মেসতা ১৪০ হেক্টর। গত বছর চাটমোহরে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,পাট কাটা,জাগ দেওয়া, ধোয়া এবং শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার পাটের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় পাট চাষিরাও খুশি। উপজেলার বালুদিয়ার গ্রামের চাষি আকতার হোসেন জানালেন, প্রায় ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। ৭০ থেকে ৭২ মণ পাট হবে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ পাট হবে। ন্যায্য মূল্য পেলে লাভবান হবেন।
শাহপুর গ্রামের চাষি আ. কাদের বলেন, পাট চাষের জমি উপযোগী করা থেকে নিড়ানি দেওয়া, পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোতে শ্রমিকের মজুরি খরচ অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি পড়ছে। পাট জাগের পানির অভাবে পরিবহন খরচ গাড়ি প্রতি হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
চাষি ফজলুর রহমান বলেন, পানির জন্য ৫/৬ কিলোমিটার দূরে গাড়িতে করে পাট জাগ দিতে নেওয়া হচ্ছে। পাটের বর্তমান বাজার ২২ থেকে ২৪ শ টাকা মণ চলছে। কমে গেলে কৃষকেরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। হান্ডিয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে এম জাকির হোসেন বলেন, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গগ্রাম থেকে বিল এলাকায় পাট জাগ দেওয়ার জন্য আসছেন। এলাকার চাষিরা পাট জাগ দিতে সংকটে পড়ছেন। এবার অধিক পরিমাণে পাটের চাষ হওয়ায় পানি সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুমবিল্লাহ জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে পাট চাষে বিভিন্ন পরামর্শসহ মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাট চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চাষিদের বিনা মূল্যে পাট বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদানসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পাট চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
তিনি আরো বলেন, আগে চাষিরা বৃষ্টিপাত নির্ভর ছিল। আর বর্তমানে চাষিরা জমিতে সেচ ব্যবস্থায় পাটের চাষাবাদ করছেন। যার কারণে উৎপাদন হচ্ছে অনেক বেশি। এবার তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম। যার কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চাষিদের কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে চাষিরা রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট প্রক্রিয়া করতে পারেন। এতে অল্প পানিতে বেশি পরিমাণ পাট জাগ দিতে পারবেন। সাধারণত পাট জাগে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। আর রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ১০-১২ দিনে হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে পাটের রং ও মান অনেক ভালো হয়।