তাড়াশে সফল জয়িতারা

Spread the love

গোলাম মোস্তফা :
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের পাঁচজন পিছিয়ে পড়া নারী জীবনে সংগ্রাম করে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সফল হয়েছেন। ফলে তারা ২০২১ সালে জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন। যাদের জয়িতা হওয়ার পেছনে রয়েছে দুঃখ কষ্টের অনেক কাহিনি ! জয়িতা আমিনা খাতুন বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি এসএসসি পাস করেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বিয়ের পর তিনি এলাকার নারীদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেন। তার সংগঠনে ৩৮১ জনের মতো সদস্য রয়েছেন। তারা নিজেদের সঞ্চয় থেকে নিজেরা ঋণ গ্রহণ করেন ও সময় মতো পরিশোধ করে দেন। এখন তাদের অনেকের নেতৃত্ব মনোভাব গড়ে উঠেছে।
আমিনা খাতুন আরো বলেন, গ্রামীণ সমাজে নারী শিক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক বিরোধী কার্যক্রম, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা, নারীর ক্ষমতায়নে তাদের সহায়তা করা ও তাদের আয়বর্ধনমূলক কাজে সহায়তা করা দেখে তার মতো অনেক নারী উৎসাহ পাচ্ছেন। সেবামূলক কাজ করে তিনি নিজে সফল হয়েছেন। একই সাথে এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের চকজয়কৃষœপুর গ্রামের আলতাব হোসেনের স্ত্রী।
জয়িতা বাসন্তী রানী বলেন, তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পূর্ণ একজন বিধাবা নারী। কিন্তু তার পাঁচ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক টান পোড়েন তাকে থামাতে পারেনি। তার মেয়ে প্রভাতী মাহাতো উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। আরেক মেয়ে অনিমা মাহাতো রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নিলীমা মাহাতো নামে আরেক মেয়ে বিএ পাশ করে নিমগাছি কিল্ডার গার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। চতুর্থ মেয়ে প্রীতিলতা মাহাতো চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত বছর বিএসএস অনার্স ও এমএসএস সম্পূর্ণ করেছেন। তার একমাত্র ছেলে সজিব কুমার মাহাতো নিমগাছি কলেজের প্রভাষক। বাসন্তী রানী উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের দত্তবাড়ি গ্রামের মৃত নিমাই চন্দ্র মাহাতোর স্ত্রী।
জয়িতা নাছিমা আক্তার বলেন, কিশোরি বয়সে তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে বহু কষ্টে লেখাপড়া করছেন। বর্তমানে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করছেন। একই সাথে সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছেন। নাছিমা আক্তার উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর মেয়ে। জয়িতা নুসরাত আক্তার বলেন, তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ২০০৫ সালে কুটির শিল্পের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালের দিকে তার ব্যবসায় সফলতা আসতে শুরু করে। এখন তার উপার্জনে পুরো সংসার চলে। নুসরাত আক্তার তাড়াশ পৌর শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার মৃত নওশের আলীর মেয়ে।
জয়িতা নাসরিন খাতুন বলেন, তার স্বামী মাদকে আসক্ত ছিলেন। টাকার জন্য তাকে প্রায়শই বেদম মারধর করতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। পরে দর্জির কাজ শিখে বাবার সংসারে ডাল-ভাত খাওয়ার অবস্থা তৈরি করেছেন। নাসরিন খাতুন উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ছোট মাঝদক্ষিনা গ্রামের বাহাদুর আলীর মেয়ে। এদিকে জীবনে সংগ্রাম করে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সফল হওয়ার জন্য পাঁচ জয়িতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাছরিন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক কার্যক্রম সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. মেজবাউল করিম বলেছেন, জয়িতারা উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD