একমুঠো চাউল বেশী রান্না করায় গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা

Spread the love

ভাঙ্গুড়া(পাবনা) প্রতিনিধিঃ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেম করে বিবাহ ,যৌতুক না পেয়ে তিন বছর ধরে নির্যাতন ও ঘটনার দিন একমুঠো চাউল বেশী নিয়ে ভাত রান্না করার অপরাধে ৪ মাসের অন্তসত্ত্বা সীমা (২১)নামের গৃহবধূকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে উঠেছে। মঙ্গলবার (২৭) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মাবোলা হলদার পড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে,স্বামী সুব্রত হলদার, শ্বশুর ঝাড়– হলদার, শ্বাশুড়ী অলোকা ও ননদ অষ্টমীসহ ঘটনার দিনে লাঠি দিয়ে পিটানোর এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন রাতেই তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনায় মেয়ের বাবা পরিমল বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ গৃহবধূর স্বামী সুব্রতকে আটক করেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে,মোবাইল ফোনের সূত্রধরে তিন বছর আগে ভাঙ্গুড়ার পৌর এলাকার মাবোলা হলদার পাড়া গ্রামের ঝাড়–র ছেলে সুব্রতর সাথে জয়পুর হাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পাশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের দরিদ্র পরিমল এর মেয়ে সীমার প্রেম হয়। সেই প্রেমের সূত্র ধরেই তাদের উভয়ের পারিবারিকভাবেই বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়েতে কোন ধরণের যৌতুক দিতে পারেনি হৃত দরিদ্র পরিমল। সে কারণে বিবাহের কিছু দিন পর থেকেই কারণে বা অকারণে স্বামী সুব্রত হলদার, শ্বশুর ঝাড়– হলদার, শ্বাশুড়ী অলোকা ও ননদ অষ্টমীসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। মাঝে মাঝে ওই গৃহবধূর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোক ওই বাড়িতে আসতে চাইলে তারা বাড়ির প্রধান টিনের গেট বন্ধ করে রাখত।

ঘটনার দিনে সকালে ওই গৃহবধূ তার শ্বাশুড়ী অলোকা বাড়ির পাশে বেড়াতে গেলে চাউলের হাড়ি থেকে নিজেই চাউল নিয়ে ভাত রান্না করেন। এর কিছু সময় পর তার শ্বাশুড়ী অলোকা বাড়িতে এসে জানতে পারেন যে গৃহবধূ সীমা একমুঠো চাউল বেশী রান্না করেছেন। সকালের খাবার না দিয়ে বরং তিনি সহ তার পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে(গৃহবধূকে) গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার স্বামী সুব্রত বাড়িতে আসলে তাকে জানায় এবং গৃহবধূর স্বামী গৃহবধূকে মারধর করে বাড়ি থেকে বেড় করে দেন। তখন ওই গৃহবধূ পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন । ঘটনাটি শুনে স্থানীয় কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বিকালে দিকে গৃহবধূ সীমাকে পাশের বাড়ি থেকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি দিয়ে আসে এবং ঘটনার পুর্নাবৃত না করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কাউন্সিলর চলে যাওয়া মাত্রই আবারো সকলে মিলে ওই গৃহবধূকে লাঠি দিয়ে পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে গৃহবধূ সীমা অচেতন হয়ে পড়লে অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এসময় তিনি প্রায় ৪ মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলেন।স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, বিবাহের পর থেকেই গৃহবধূ সীমাকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন সকলেই নির্মম নির্যাতন করত। কিন্তু হৃত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বলেই কখনো স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যায় নি। কিন্তু কী নির্মম পরিহাস লাশ হয়ে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হল।
তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলছে ওই গৃহবধূ গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এ বিষয়ে নিহত সীমার কাকি সান্তনা রানী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তরত চিকিৎসক বলেন,সীমা নামের এক গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। তবে তার গলায় তেমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি।এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মুঃ ফয়সাল বিন আহসান বুধবার বিকালে বলেন, হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। অপরদিকে মেয়ের বাবা পরিমল বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। গৃহ বধূর স্বামী সুব্রত কে আটক করা হয়েছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD