নাটোর হাসপাতালে ৭০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ৯১

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ

নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা রোগিদের চাপে ঠাঁই নেই। ৭০ শয্যার বিপরীতে সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৯১ জন রোগি। শয্যা না পেয়ে করোনা ইউনিটের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগিদের। তারপরও সংকট কাটছে না হাসপাতালের।
করোনা রোগিদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ৩জন চিসিৎসক সহ মোট ১৬জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নাটোরের পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা বেশির ভাগ রোগিই গ্রামের।এদিকে, নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটের চিকিৎসা নিয়ে বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জরুরী সভা ডেকেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নাটোর সদর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন এবং উপসর্গে একজন জন মারা গেছেন। এনিয়ে জেলায় মোট ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরে ১৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৭৮ জন করোনা সনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৪২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪০৮৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৮০৮ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানায়, সদর হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে শয্যাসংকটের কারণে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। করোনার উপসর্গ নিয়ে এলে নমুনা নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন, এমন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালের নির্ধারিত ৭০টি শয্যা অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থাও নেই। নাটোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আনিছুজ্জামান পিয়াস বলেন, কোভিড রোগিদের এত পরিমান চাপ, চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া চিকিৎসা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। রোগি এবং তাদের স্বজনদের ভিড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়াচ্ছে।
এদিকে, করোনা রোগিদের চিকিৎসার জন্য জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে সদর হাসপাতালে করোনা রোগীরা ভিড় করছে। এতে করে প্রতিদিনই রোগির সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তবে ভর্তি রোগিদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামের।
নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, ‘সর্বত্রই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামে রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে। যেখান থেকেই আসুক তাঁকে আমরা জরুরি মনে করলে ভর্তি না নিয়ে পারছি না। পরিস্থিতি অনেকটা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, করোনার উর্ধ্বগতি কমিয়ে আনতে প্রথম দফায় ৯ থেকে ১৫জুন নাটোর এবং সিংড়া পৌরসভায় লকডাউন ঘোষণা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: শাহরিয়াজ। এরপর গত ১৫জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় আরো সাত দিন বাড়িয়ে ১৬ থেকে ২২জুন লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু তাতেও কমেনা করোনা সংক্রমণ। এরপর ২২জুন আবারো জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় ২২ থেকে ২৯জুন জেলার ৮টি পৌরসভায় লকডাউন ঘোষণা করেন বর্তমান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
সবশেষ করোনার উর্দ্ধগতির কারনে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শে ১ জুলাই থেকে আরো সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে মোট ২৮দিন লকডাউনের ফাঁদে পড়ছে নাটোর। তারপরও সংক্রমণ কমেনি।
সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার সর্বত্রই করোনা রোগী বাড়ছে। কয়েক দিন আগেও অনেকে ভাবতেন, এই রোগ গ্রামে ঢুকবে না, গরিব মানুষ সংক্রমিত হবেন না। এখন তাঁদের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা রোগিদের চাপ কমিয়ে আনার জন্য সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেছি। শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে জরুরী সভা আহবান করেছি। সভায় পরিস্থিতি কিভাবে উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD