শাহ আলম-দেশীগ্রাম প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ জেলার উত্তর তারাশের নিভৃত পল্লী ৮ নং দেশীগ্রাম ইউ.পি.। এই ইউনিয়নের কিছু কিছু গ্রামের যেমন দেশীগ্রাম সদর, কাটাগারি বাজার, নাড়া তেঘরী, পশ্চিম পাইকোড়া, গুড় পিপুল, ভোগল মান চারমাথা, শাকমাল, দুলিশ্বর, সিংগা পাড়া, বলদি পাড়া, এই গ্রাম গুলো মাদার খেলার জন্য প্রতিবছর জৈাষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশেষ ভূমিকা রাখতো। ছোট বেলায় দেখতাম জৈাষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে মাদার বা নিশান তেল সিন্দুর বাঁশের গায়ে লাগিয়ে তোলা হতো। একটা বিশাল বড় লম্বা বাঁশ কেটে তারপর সেই বাঁশকে লাল শালু কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। ২ হাত পর পর লম্বা লাল শালু পতাকা লাগানো থাকে। বাঁশের মাথায় ঝাকড়া মানুষের চুলের মতো দেখতে চামর লাগানো থাকে। এই মাদার কে নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যান্ড পার্টি, বাংলা বাইজ নিয়ে খেলাধুলা করা হয়। সেই সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আনন্দ খুশির বন্যা বয়ে যায়। বাজনার তালে তালে চলে লাঠি বাড়ি খেলা, লম্বা লাঠি মাথার উপর ঘোরানো, ঢেঁকি খেলা, ছুরি খেলা, মুখের জিব্বের ভিতর সুঁচ ঢুকানো খেলা, মানুষের বুকের উপর ইট রেখে বাড়ি মেরে ইট ভাঙ্গা, সড়কী খেলা ইত্যাদি খেলায় জনগনকে মাতিয়ে রাখা হয়। এই মাদার খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে মেলা বসত। ঈদের মতো আনন্দ করে জামাই ঝি কে পরবি বা সেলামি দেওয়া হতো। হরেক রকমের মিষ্টি, ফল, দই, মাছ, মাংস, আসবাসপত্র মেলা থেকে কেনা হতো। উল্লেখ যোগ্য বাঁশের মেলার মধ্যে রাণীরহাট মেলা, কাটাগাড়ী বাজার মেলা, দেশীগ্রাম সদর মেলা, গুর পিপুল বাজার মেলা, নিমগাঁছি বাজার মেলা, শালিয়াগাড়ি বাজার মেলা, ধামাই নগর বাজার মেলা ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। ঈদের মতো আনন্দ উল্লাস করে খাওয়া দাওয়া বেড়ানো চলত সব পরিবারেই কিন্তু দুই বছর হলো করোনার জন্য এই অনুষ্ঠান গুলো হচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২ একটি গ্রামে মাদার খেলা দেখা গেছে। কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে এই ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো। শিল্পীর গানের মতো আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা অথবা কফি হাউজের সেই গানের মতো হারাতে যাচ্ছে মাদার খেলা। এই পুরনো ঐতিহ্য কে টিকিয়ে রাখা দরকার নতুন প্রজন্মের জন্য।