সুজন কুমার মাল
করোনার ভাইরাস কোভিড-১৯র ভয়াল থাবা পড়েছে সংস্কৃতিতেও। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমবেত হওয়া কঠিন বিষয়। যার ফলে গত বছর থেকে চলনবিল অধুষ্যিত তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ব্যাবসায়ী মন্দা যাচ্ছে। যেমন গত বছর করোনা এবং এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের কারনে বাঙ্গালীর শত বছরের বেশী ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতি বৈশাখ পালন হয়নি তেমন জাঁক জমক ভাবে। যাও হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বলতে গেলে অনারম্ভর ভাবে।
এদিকে করোনার কারনে বারুহাঁস ইউনিয়নের বেহুলার মেলা, পৌর এলাকার উলিপুরের মেলা, সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল মেলা, তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে গুড়মা মেলা সহ বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ মেলা এ বছরও হবে কিনা ? তাও রয়েছে সন্দেহ।এ সকল গ্রামীণ মেলায় সারা বছরে প্রয়োজনীয় মশলা কিনে থাকেন অনেকে। এছাড়াও মেলায় আসবাবপত্র, মিষ্টান্ন, মাছ, মাংশ, ঝুড়ি, মুড়কিও বেচাকেনা কম হয়না। সারা বছরের আয় রোজগারের পথ এ সকল মেলায় পণ্য বেচাকেনার মাধ্যমে অনেকেরই। পরিবার পরিজন নিয়ে অধীর আগ্রহে থাকেন মেলায় দোকানপাট খুলে পসরা সাজিয়ে বেচাকেনার জন্য। কিন্ত মেলা না বসায় তাদের আয়ের পথও হুমকির মুখে। আবার মেলাগুলো আয়োজন হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও হয় বেশ। কিন্ত মেলা না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায়ও হয়না বললেই চলে। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন বা করতে হবে।মেলা উপলক্ষ্যে মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করে।
জামাই ঝিঁ’দের নাইওরে বা দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। আর প্রতিটি পরিবারের সাধ্যমত জামাই, ছোট ছেলে মেয়েদের মেলা দেখার খরচাও দেয়া হয়।
অনেকগুলো মেলা ধান কাটার পরে হওয়ায় জমেও ওঠে বেশ। কেননা কৃষির সাথে জড়িত প্রতিটি কৃষক পরিবারের হাতে টাকা পয়সা থাকে বেশ।
মেলায় চিত্ত বিনোদনের জন্য সার্কাস, গান বাজনা খেলাধুলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। শুধু কি তাই? এ সকল মেলায় নারী, পুরুষ, যুবক, বৃদ্ধ সকলের মিলন মেলায় পরিণত হয়।অনেকে এ সকল মেলায় এসে সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়ায়। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অন্য রকম উৎসব বিরাজ করে।মেলা সমূহে নারীরা তাদের পছন্দের প্রসাধনী সামগ্রী সহ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করে থাকে। এছাড়াও গত বছর থেকে ধর্মীয় অনেক উৎসব আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও তা হয় স্বল্প পরিসরে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানের মত চিত্ত বিনোদনও মানুষের মৌল মানবিক অধিকার। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এ সকল মেলার গুরুত্বও কম নয়।