-এম. রহমত উল্লাহ্
দোবিলা, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ।
জন্ম মৃত্যুর এই দুনিয়ায় কেহই চিরঞ্জিব নয়। তাই মানুষ মরে যায় বেঁচে থাকে তার কীর্তি মানুষের কল্যাণে দেশের কল্যাণে ও বিশ^ মানবতার কল্যাণে মানুষ যা করে তা চিরদিন তাকে অমর করে রাখে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা মোহাম্মাদ আমজাদ হোসেন মিলন এমনই একজন সুপুরুষ। দেশের জন্য দেশের স্বাধীনতার জন্যে তার অনণ্য অবদান তাঁকে চিরদিন অমর করে রাখবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মিলন ১৯৪৯ সনে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার মাগুড়াবিনোদ গ্রামে পিত্রালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোল্লা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান। তিনি বাল্যকাল থেকেই জ্ঞানী সাংস্কৃতিকমনা বুদ্ধিমান সৎ সাহসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জ্ঞানীগুণি জনের সম্মান দিয়ে চলা ছিল তাঁর স্বভাব। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী মানুষটি সব সময় দেশের কথা ভাবতেন। অজপাড়া গাঁয়ে চলনবিলের মাঝে তাঁর জন্ম হেতু অত্যন্ত কষ্ঠ সহিষ্ণু ও পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ৭১ সৎসর বয়সে ও তাকে বৃদ্ধ বলে মনে হতো না। পাঞ্জাবী পাজামা কালো মুজিব কোর্ট এই ছিল তার সাদা সিদা পোষাক। কখনও বাড়ীতে শার্ট ও গেঞ্জি পড়তে পছন্দ করতেন। চলন বিলের মাছ ভাত ছিল তাঁর প্রিয় খাদ্য। তিনি গ্রামের সাদা সিদে মানুষের সাথে চলতে বসতে ভাল বাসতেন। তাঁর গুরু গম্ভীর ভাষণ সবাইকে মুগ্ধ করতো। তিনি বাল্যকাল থেকেই সংগ্রামী ও উদ্দমী হিসাবে সবার আদর কুড়িয়েছেন। চলনবিলের দারীদ্রতার মাঝে তাঁর জন্ম। তাই সব সময় বিলের দুঃখি মানুষের কথা ভাবতেন। তাঁর জন্মভূমি মাগুড়া চলনবিলের মাঝের একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম-।তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যাবস্থা করে মানুষের অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। প্রত্যান্ত চলনবিলের দুঃখী মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়াতেন। এথেকেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। মানুষের পক্ষ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাই ছিল তার জীবনের ব্রত।
এমনিভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে রাজনীতির ডামাডোলে পড়ে নিজের গতিপথ খুঁজছিলেন। সেই মূহুর্তে বঙ্গ বন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে উদ্ভুদ্ধ হয়ে মুক্তি বাহিনীতে যোগদেন। এবং চলনবিল অঞ্চলের যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। আব্দুল লতিফ মির্জাসহ আরও অনেকের সহযোগীতায় মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস অবিরাম যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধের শেষে দেশ স্বাধীন হলে তিনি প্রথমে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত প্রধান ও পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে নানা জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মিলন তিনবার ইউ.পি চেয়ারম্যান, দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং একবার এম.পি হয়ে দেশ সেবা করে গেছেন। তাঁর সময়ে অসংখ্য স্কুল কলেজ মাদ্রাসা গড়েছেন। অনেক অজপাড়া গাঁয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি দীর্ঘ দিন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের সাংগঠনিক কাজ করেছেন। এমন দুর্দিন ছিল যখন আওয়ামী লীগের লোক বলে পরিচয় দিতে লোকে ভয় পেত; গুম খুন হতো তখনও সাহসের সাথে তিনি দলের কর্ণধার ছিলেন। বিভিন্ন সামরিক ঝড়েও তার উপর অকথ্য শারিরিক নির্যাতন নেমে এসেছে। কিন্তু তাতেও তিনি দলের সাথে বেঈমানী করেন নাই। তার মতো কর্মী গুণি ব্যক্তির গুণ র্কীতন করে শেষ করা যাবে না। তিনি বিবাহিত জীবনে দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক। ১ম স্ত্রী জাহানার মৃত্যুর পর হোসনেয়ারা ডেইজীকে বিবাহ করেন। বর্তমানে তিনি দলের সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমজাদ হোসেন মিলন সত্যিকারের একজন দেশ প্রেমিক নেতা ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধারার আজীবন একজন সুশৃঙ্খল কর্মী ছিলেন। মাগুড়াবিনোদ জন্মস্থান হলেও তাড়াশের বাসা বাড়ীতেই তিনি অধিক সময় বসবাস করতেন। সহসা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে এনায়েতপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ১৮ই এপ্রিল ২০২১ তারিখ দুপুর ১২.০০ টায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। আসুন আমরা তাঁর বিদায়ী আত্মার মাগফেরাৎ কামনা করি।
(লেখক: বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যিক।)