মোঃ মুন্না হুসাইন
চলনবিলে এ বছর উনএিশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু ধান আর ধান। মাঠে মাঠে রং ছড়াচ্ছে সোনালি ধান। সোনালি ধানে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। সিরাজগঞ্জ উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে উনএিশ ধানের চাষাবাদ হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে প্রায় ৫৫ হেক্টর বেশি জমিতে উনএিশ চাষাবাদ হয়েছে।
বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান পাকতে শুরু করেছে। আবার অনেক কৃষক ধান কাটতে শুরু করেছেন। তবে আসন্ন রমজান মাস ও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার দুই দফায় ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় শ্রমিক সংকটের কারণে চাষিরা ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এদিকে গত কয়েকে দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও গরম আবহাওয়ায় পুড়ে গিয়ে উনএিশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই দ্রুত ধান কেটে ঘরে না তুলতে পারলে কালবৈশাখীর ছোবলে বিপুল পরিমাণ ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জুড়ে শুধু ধান আর ধান। গাঙ্গ ও খাল খননে জলাবদ্ধতা না থাকায় এ বছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায়,নাটোরের গুরদাসপুর উপজেলায় ও পাবনার চাটমোহর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে উনএিশ-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ২২ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে উনএিশ বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও ধানের মূল্য বেশি হওয়াতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬০০ হেক্টরের বেশি জমিতে উনএিশ আবাদ হয়েছে। তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী জানান, গাঙ্গ খননের সুফল আমরা পাচ্ছি। আবহাওয়া ও প্রকৃতির কারণে এবং গাঙ্গ খননে জলাবদ্ধতা না থাকায় গতবারের চাইতে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো, তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাল বৈশাখীর ঝড়ে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১০/১২ দিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে বিলম্ব হলে বৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই মাঠ থেকে ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত চিন্তার শেষ নেই।
তাড়াশ ইউনিয়নের নওগাঁ মহেশরৌহালী গ্রামে তোফায়েল সরদার জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর উনএিশ ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে উনএিশ ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শুরু করবেন। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ঠিকমত ধান ঘরে তুলতে পারব। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। নওগাঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজনু জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর ধান ভালো ও রোগ বালাই কম। তাছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শেই কৃষকরা উনএিশ ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে ধান কেটে ঘরে না তোলা পর্যন্ত কৃষকের চিন্তার শেষ নেই। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার পারভীন বলেন, ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রেখেছি ও পরামর্শ দিয়েছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির সতর্কতার বিষয়ে আগেই আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ধানের শীষ ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কেটে ফেলতে বলা হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬০০ হেক্টরের বেশি জমিতে উনএিশ চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর উপজেলায় উনএিশ-ধান ২৮ বেশি পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তাছাড়া উনএিশ-ধান ৬৭, বিনা-১০ হাইব্রিড ধানের চাষ ও কিছু এলাকায় লবণ সহিষ্ণু ধান চাষাবাদ হয়েছে। ‘অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। ফলন হয়েছে বাম্পার। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পুরো ধান পাকার আগেই কেটে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি। অবশ্য গত সপ্তাহকাল যাবত চলনবিল তথা তাড়াশের বিভিন্ন এলকায় পোকার আক্রমনে আগামজাত বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সেসব অঞ্চলের কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক ক্ষেতের পাকা ধান পোকা কাটার কারণে খড় বা ডাটাসহ কালো হয়ে গছে। কিছ প্রান্তিক শ্রেণির কিষাণ-কিষাণীদের কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে তাদের সামান্য জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ার জন্য।