মোঃ মুন্না হুসাইন :
উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের চলনবিল এলাকায় বর্তমানে খিরার ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় চোখেমুখে হাসি ফুটেছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত শত শত টন খিরা কেনাবেচা। চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ও উল্লাপাড়ায় উৎপাদিত খিরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এখন প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের খিরা চাষ করা হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার পাশাপাশি বীজ, সার এবং কীটনাশক সুলভমূল্যে পাওয়ায় খিরার বাম্পার ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে খিরা চাষ করতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আর প্রতি বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত খিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে খিরা আবাদে পোকামাকড়ের ঝামেলা কম হওয়ায় অনেকটা নিশ্চিন্তেই এটি চাষ করা যায়। এ কারণে খিরা চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন আরও বাড়ছে। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিলের তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুরের কৃষকদের উৎপাদিত খিরা বেচাকেনার জন্য তাড়াশ উপজেলার দিঘুরিয়া খিরার আড়ত প্রায় ২০ বছর আগে চালু হয়। সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও বগুড়া জেলার খিরাচাষিরা এই হাটে খিরা বিক্রি করতে আসেন। সেখানেই প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক সর্বদা প্রস্তুত থাকে খিরা পরিবহণের জন্য। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে আড়তটিতে শুরু হয় কেনাবেচা। মহাজনরা খিরা কিনে ট্রাকে লোড দিতে থাকেন। আর তাদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক, যাদের পেশাও এখন এটি।
এক আড়তদার বলেন, অনেক সময় হাটে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি খিরা আমদানি হয়। তখন ওজনের পরিবর্তে বস্তা চুক্তিতে বিক্রি হয়। প্রকারভেদে প্রতি ছোট বস্তা খিরা বিক্রি হয় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা এবং প্রতি বড় বস্তা খিরা বিক্রি হয় সাড়ে ছয়শ থেকে সাতশ টাকা পর্যন্ত। খিরা কেনাবেচার এ হাটটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে বলেও জানান তারা। তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের নামা সিলোট গ্রামের খিরাচাষি মো. রায়হান আলী জানান, ‘তার প্রতি বিঘা জমিতে খিরার আবাদ করতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন প্রতি বিঘা জমির খিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। খিরা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন শেখ ও রফিকুল ইসলাম জানান, তাড়াশ অঞ্চলের উৎপাদিত খিরার মান ভালো ও তুলনামূলক দামও কম। খিরার মান ভালো হওয়ায় এর কদর রয়েছে সারাদেশেই’।
রাজধানীসহ পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ঢাকার কারওয়ান বাজার, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার উৎপাদিত খিরা রপ্তানি হচ্ছে। উল্লাপাড়া উপজেলার নজরুল ইসলাম ও জালাল উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক বলেন, আগে অনেক জমি পাওয়া গেলেও এখন এলাকায় খিরা চাষের জন্য জমি লিজ পাওয়াই যায় না। কারণ খিরা চাষে কৃষক ভালো লাভ পাওয়ায় তারা খিরা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। আর যাদের নিজস্ব জমি আছে তারা আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ জানান, জেলায় এ বছর ৬৮০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে খিরার সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে তাড়াশ উপজেলায়।
এ বছর খিরা চাষে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। খিরা চাষে অল্প সময়ে এবং স্বল্প বিনিয়োগেই অধিক লাভ করা যায়। কৃষকরা বিঘা প্রতি খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে লাভ করছেন। এতে করে আগামীতে কৃষকরা খিরা চাষে আরও বেশি উদ্যোগী হবেন বলেও জানান তিনি।