লুৎফর রহমান ,তাড়াশ :
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার দিনব্যাপী দইয়ের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় তিন শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলায় বেচাকেনা চলছে। দিনব্যাপী এ মেলায় দইসহ রসনাবিলাসী খাবার রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়ে থাকে বলে স্থানীয় মুরুবীরা জানান।
তাড়াশে দইমেলা নিয়ে নানা গল্পকাহিনি রয়েছে তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী জানান, তাড়াশের তৎকালীন জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দইমেলার প্রচলন করেছিলেন। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বাৎসরিক রেওয়াজ এখনও বিরাজমান। জনশ্রতি আছে জমিদার রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন খুব পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক লাল রায় মন্দিরের পার্শ্বের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দইমেলা বসত। প্রতিবছর মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দইমেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে কেনাবেচা করতেন।
কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করা রেওয়াজ ছিল। দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে যেমন ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, ডায়বেটিস দই সহ এ রকম হরেক নামের-দামের দই বিক্রি হয় । বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা, শ্রীপুর ও তাড়াশের তৈরি দই বেশী বেচাকেনা হয়।
মেলায় একাধিক ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দইয়ের পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বৃদ্ধিও পাচ্ছে। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।