জাহাঙ্গীর আলম : মানুষের চলাচলের সড়ক নেই, নেই যোগাযোগ ব্যবস্থা অথচ নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেও সেতু তৈরি করা হয়েছে। সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই কোন রকম সংযোগ সড়ক। তাই সেতুর সাথে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয় এলাকাবাসীকে।
এমন নানা অসঙ্গতি, অপ্রয়োজনীয় আর অপরিকল্পিত সেতুর দেখা মেলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এ সেতুগুলো উপকারের পরিবর্তে দূর্ভোগ বাড়িয়েছে এলাকাবাসীর। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন সেতু নির্মাণের নামে সরকারের লাখ লাখ টাকা কেন অপচয় করা হয়েছে ? দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রামের সিংগার জোলা। জোলার উপর রেলওয়ে ব্রিজ। এই জোলার ওপরে নয়, জোলার পাশে কুদ্দুস সরকারের জমির পাশে একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। কোন গ্রামের বা কোন ফসলের মাঠের সাথে এর কোন সংযোগ নেই। প্রয়োজন না থাকলেও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সেতুটি নিমার্ণ করা হয়েছে ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাবা ব্যয়ে। নদীর পাড়ে খালের উপর সেতুটি নির্মাণের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি এলাকাবাসী। একই অবস্থা উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের সোনাহারপাড়া গ্রামের পাশের সেতুটির। খলিশাগাড়ি বিলের পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। সেতুর উত্তর পাশে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। যা এখন পরিত্যক্ত। এলাকাবাসী জানান, গ্রামে ও বিলে যাতায়াতের জন্য দরকার রাস্তার। কিন্তু রাস্তা না বানিয়ে বানানো হয়েছে সেতু। যা এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছে না। অপরদিকে উপজেলার নিমাইচড়া গ্রামে সেতু নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়কে মাটি ফেলা হয়নি। ফলে কষ্ট বেড়েছে মানুষের। উঁচু বা খাড়া সেতুতে উঠতে নামতেই কষ্টের শেষ নেই শিশু ও বয়স্কদের। উপজেলার পাশর্^ডাঙ্গা ইউনিয়নের রাউৎকান্দি বিলে এমনই একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পরপরই সেতুটি ফেটে যায়। সংযোগ সড়কে মাটি ফেলা হয়নি।
এনিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করলেও সেসময়ে উপজেলা প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেয় কমিটি। কিন্তু তা ধাসাচাপা পড়ে গেছে। ঠিকাদার পুরোপুরি কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছে। এরকম সেতু রয়েছে হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, ডিবিগ্রাম ইউনিয়নেও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও এমন ৬টি সেতু নির্মাণ করেছে সংশ্লি¬ষ্ট দপ্তর।এসব সেতু উপকারের পরিবর্তে উল্টো দূর্ভোগ বাড়িয়েছে এলাকাবাসীর।
অভিযোগ, এসব সেতু নির্মাণ কাজও করা হয়েছে নিম্নমানের। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদার। ঠিকাদারের সাথে সংশ্লি¬ষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এবিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম শামীম এহসান। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সৈকত ইসলাম জানিয়েছেন, সেতুগুলো নির্মাণ হয়েছে অনেক আগে। আমি আসার পর এমন সেতু নির্মাণ হয়নি। তারপরও অপ্রয়োজনীয় সেতুর বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি না দিলে তা দিতে বলা হবে। আর রাস্তা নির্মাণেরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।