সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের জন্য বিভাগীয় প্রার্থীতা বহাল রাখা প্রসঙ্গে।

Spread the love
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে
মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদ এর লেখা
 —একটি খোলা চিঠি—-
তারিখঃ ১১-১২-২০২০ ইং
বরাবর,
সচিব
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
সচিবালয়, ঢাকা।
বিষয়ঃ-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের জন্য বিভাগীয় প্রার্থীতা বহাল রাখা প্রসঙ্গে।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আমরা আজ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।  জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ও অনুমোদিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছিল আটটি।
আটটি লক্ষ্যের মধ্যে দুই নম্বর লক্ষ্য ছিল সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন।
আটটি লক্ষ্য অর্জন করার জন্য জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্র গুলোকে ২০০১-২০১৫ পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেন। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল। দুই নম্বর লক্ষ্য অর্জনে দেশের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। কারণ বিদ্যালয়ের পাঠদানের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। আবার বিশ্বসংস্থাটি কর্তৃক ২০১৬-২০৩০মেয়াদে নেয়া হয় SDG বাস্তবায়নের পরিকল্পনা । এর সতেরোটি লক্ষ্যমাত্রার চার নম্বর  লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। এই মানসম্মত শিক্ষা অর্জনেও দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাই সম্মুখ যোদ্ধা।
কিন্তু আজ এই সহকারী শিক্ষকরা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। তাদেরকে বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং আতংকগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্প্রতি  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা -২০১৯ নামে একটা খসড়া করা হয়েছে। যেখানে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি কেড়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ ১৯৯৪ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোন শিক্ষককে বুঝাবে এবং থানা শিক্ষা অফিসার নিয়োগে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে কোন শিক্ষককে বুঝাবে। ২০০৩ সালের ৩১শে আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত আরেক প্রজ্ঞাপনেও একই বিধান বহাল ছিল। এরই মধ্যে থানা শিক্ষা অফিসার পদে সরাসরি নিয়োগ বাতিল করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পদায়ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কিন্তু সহকারী উপজেলা/থানা অফিসার  পদে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি বহাল রাখা হয়। উক্ত পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বুঝানো হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোন শিক্ষককে। এই সূত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে  ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারতো। এই সুযোগ ব্যবহার  করে অনেক  সহকারী শিক্ষক সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে সুনামের সাথে চাকরি করছে। কিন্তু ২০১৯ সালের প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালায় সেই সুযোগ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা অসন্তোষ ও ক্ষোভ। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। আর মেধাবীদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হলে তাদেরকে দিতে হবে বিভাগীয় সুযোগসুবিধা। যা সে ব্যবহার করে প্রশাসনের উপর পর্যায় যাওয়ার চেষ্টা করবে। যদি এই সুযোগ রহিত করা হয় তাহলে মেধাবী তরুণ-তরুণীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আসবেই না বরং যে সমস্ত মেধাবী সহকারী  শিক্ষক বর্তমানে কর্মরত আছেন তারাও অন্য বিভাগে চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজবে যা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে এসএসসি পাস করে চাকরি পাওয়া কনস্টেবলদের বিভাগীয় সুবিধা ব্যবহার করে ১০গ্রেডের এএসআই / এসআই হওয়া সুযোগ আছে। আবার খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মচারীরা বিভাগীয় সুবিধা ব্যবহার করে কর্মকর্তা হতে পারে। এরকম উদাহরণ বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি বিভাগেই আছে। তাহলে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর, তিপিএড, বিএড এবং এমএড পাস করা সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কেন বিভাগীয় সুবিধা পাবে না সেই প্রশ্ন অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকদের । সাধারন কোটায় নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ ছিল। তাই সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা বহাল রাখার জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অতএব,জনাবের নিকট বিনীত প্রার্থনা আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা যাতে  বিভাগীয় প্রার্থীতা ফিরে পেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে আপনার একান্ত মর্জি হয়।
নিবেদক
মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদ
যুগ্ন আহ্বায়ক-
বিভাগীয় প্রার্থীতা বাস্তবায়ন পরিষদ, নাটোর জেলা এবং
আহ্বায়ক –
১১তম গ্রেড আন্দোলন
গুরুদাসপুর উপজেলা, নাটোর
 এবং
সহকারী শিক্ষক 
দড়িকাছিকাটা সরকারী প্রাঃবিঃ
উপজেলাঃ-গুরুদাসপুর
জেলাঃ- নাটোর।
মোবাইল নং ০১৭১১৪৩৩৮৬৫।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD