লুৎফর রহমান : চলনবিলের তাড়াশের শাহ শরীফ জিন্দানী (রঃ)এর পুন্যভুমি নওগাঁয় ছোট করতোয়া নদীতে এবারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ দিকে পাখির আগমন দেখে শিকারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে পাখি শিকারে। অথচ এক সময় ছোট করতোয়া সহ গোটা চলনবিল ছিল মাছ আর পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দেশীয় পাখির সাথে সহাবস্থান ছিল অতিথি পাখি আর শত প্রজাতির জলজ প্রানীর। সে চিত্র এখন ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবে গত বছর থেকে দৃশ্যটা ভিন্ন। অতিথি পাখি এসেছে চলনবিল তথা এলাকার ছোট বড় নদী খালে। শীত প্রধান দেশ বিশেষ করে সাইব্রেরীয়া থেকে বালিহাঁস, খয়রা,পানকৈর, চকাচকি, বুনোহাঁস, কাদাখোঁচা ও সরালি ইত্যাদি জাতের পাখি চলনবিলের করতোয় নদীতে এসেছে।
ঐতিহাসিক তথ্য ও স্থানীয় বয়স্ককদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলমান জলরাশির কারণে এ বিলের নাম হয় চলনবিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদী-চিলাহাটি রেলপথ নির্মাণের ফলে প্রথম চলনবিল দ্বি খন্ডিত হয়ে পড়ে। এরপর মহাসড়ক, সড়ক ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে একে একে বিলটি আরো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। আশির দশকে আরো ব্যাপকভাবে পাল্টে যেতে থাকে এ চিত্র। বোরো আবাদের বিস্তার আর খালবিল সেচে শুকিয়ে চলতে থাকে মাছ ধরা। এ প্র্রেক্ষাপটে জীববৈচিত্র্য ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে। পাখি হারাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কমেছে অতিথি পাখিদেরআনাগোনা।
কিন্তু হঠাৎ করেই গত বছর থেকে চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছির জয়সাগর ও নয়াপুকুর, তাড়াশ উপজেলার নওগাঁওয়ে অবস্থিত ছোট করতোয়া ও মথুরাদিঘীতে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখিসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছোট করতোয়া নদীতে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে।
তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ এলাকা। দলে দলে পাখিরা পানিতে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। আহারে বিরতি দিয়ে ছোট পানকৌড়ি বসছে নদীর তীরে গাছের ডালে। দিনভর নদীতে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে সাদা বক, ধূসর বক ও মাছরাঙা। মাঝে মধ্যে গাঙচিলের আক্রমণে ঝাঁক বেঁধে উড়ে উঠছে পাখিগুলো। সব মিলিয়ে করতোয়া এখন বিভিন্ন প্রজাজিতির আগমনে মুখরিত ।বিশিষ্ট ব্যাংকার নওগাঁ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বাবলু বলেন, গত বছরের ন্যায় ্এ বছর অনেক প্রাখী খাবারের আশায় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় এসেছে। তবে নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে তারা জড়ো হচ্ছে করতোয়া নদীতে। এখানে গাছপালা বেশি থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় মনে করে।একই সাথে আমরা পাখি শিকার না করার ব্যাপারে একমত হয়েছি। সবাই মিলে অতিথি পাখি ও দেশীয় পাখির একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছি তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি।চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন , এই মুহূর্তে জরুরী কাজ হচ্ছে পাখিদের কোনোভাবে বিরক্ত না করা। এ ছাড়াও এই এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে বিলবোর্ড, লিফলেট বিতরণ করা দরকার। আমরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও চলনবিল এলাকার পাখি রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।