জাহাঙ্গীর আলম: পাবনার চাটমোহরে সৌখিন মৎস্য শিকারীরা বাউত উৎসবে মেতে উঠেছে। চাটমোহরসহ বৃহত্তম মৎস্য ভান্ডার চলনবিলে পানি কমতে শুরু করেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল, নদী-নালা। জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির দেশি মাছ। একই সাথে বিল ও নদীতে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের বাউত উৎসব শুরু হয়েছে। নানা প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে পলো ও জাল দিয়ে। প্রতি বছরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার সৌখিন মৎস্য শিকারীরা বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’ পালন করেন। প্রতি বছর বর্ষার পানি বিল থেকে নেমে যাওয়ার শেষ দিকে সাধারণত হেমন্তকালে বিভিন্ন বিল নদীতে এমন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
মৌসুমের শুরুতে শত শত সৌখিন মৎস শিকারী মোবাইল ফোনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে বিলে মাছ শিকারে আসেন। পলো দিয়ে প্রথম দফা মাছ শিকারের পর পুনরায় কবে কোন বিলে মাছ শিকারে যাওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শনিবার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাটমোহর উপজেলার রামের বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ শিকারের বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। রামের বিলে হাজার হাজার সৌখিন মৎস শিকারীকে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। এর আগে ৩ নভেম্বর এ বিলে প্রথম দফায় মাছ ধরার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বাউত উৎসবে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, পাবনা সদর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রুট হয়ে নসিমন, করিমন, অটোভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল যোগে চলে আসেন রামের বিলে। রেল লাইনের ধারে গাড়ি রেখে অনেকে পায়ে হেটে এসে একযোগে মাছ শিকারে পানিতে নামেন।
হাত পলো, পাও পলো, নেট পলো ছাড়াও খেওয়া জাল, ঠেলা জাল, কারেন্ট জাল, ডোরা জাল, কোঁচ, হাত খড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায় সৌখিন মৎস শিকারীদের।
কৃষক, জেলে, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় রামের বিল। মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয় এ উৎসবে অংশ গ্রহনেই আনন্দ বলে জানান সৌখিন মৎস শিকারীরা। ফরিদপুরের হাদল গ্রামের মকবুল হোসেন, চাটমোহরের মহেলার আক্কাস আলী, গুনাইগাছার মতিউর রহমান, গুরুদাসপুরের সাবেদ আলীসহ অন্যরা জানান, প্রায় প্রতি বছরই এ সময় বিভিন্ন বিলে মাছ শিকারে যান তারা। অন্য বছরের তুলনায় এবার মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
তারা জানান, বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকারের আনন্দ অনুভূতি অন্যরকম। মাছ শিকারের সময় অপেক্ষাকৃত ছোটরা থাকেন স্বল্প পানিতে। কারো পলোর মধ্যে মাছ পরলে অন্যরা মাছটি ধরতে তাকে সহায়তা করেন। শোল, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, মিনার কার্প, বড় টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরতে দেখা যায় মাছ শিকারীদের। পলোর বাউতদের সামনে থাকেন অন্যান্য জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসা সৌখিন ব্যক্তিরা।