অবাধ পূজাপার্বন ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহমর্মীতার অনন্য নজির

Spread the love

সনাতন হিন্দু ধর্মের বারো মাসে তেরো পূজা পার্বন বাঙ্গালী কৃষ্টি সংস্কৃতির এক চিরায়ত ঐতিহ্য। তার মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজা মনে হয় আনন্দে উৎসবে সবচেয়ে বড় তথা বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। সেজন্যই এটাকে প্রায়শ: শুধুমাত্র পূজা বলে অভিহিত না করে উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দুর্গাপূজা আমাদের দেশে সর্বজনীন রূপ নিয়েছে কালের পরিক্রমায়। প্রায় প্রতি বছরই এ অনুষ্ঠান শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয় বলে এটা শারদীয় দূর্গোৎসব নামে প্রচলিত হয়েছে। যদিও এবছর তা অন্য ঋতুতে  চলে এসেছে। এই পূজা উৎসব উপভোগ করে থাকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সবাই। তাই দূর্গোৎসবের মহানন্দে ভেসে সকলেই এক সমাবেশে শামিল হয় একটা পর্যায়ে এসে। তখন এটা জাত-পাতের উর্দ্ধে এক  মহা মিলন মেলায় পরিণত হয়। এখানেই এর মাহাত্ম্য ও মুগ্ধতার অন্তর্নিহিত দিক । এখানেই মানবতার বিজয় ও সাফল্য। মানুষে মানুষে এই সম্প্রীতি, সহমর্মিতা , সৌহার্দ্য ও সহৃদয়তা চিরকালই কাম্য। একটি শান্তিপূর্ণ, সভ্য আর সমৃদ্ধ দেশ-জাতি ও সমাজ বির্নিমাণে মানুষের এই আন্তধর্মীয় সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধনের কোন তুলনা হয় না। দুর্গাপূজা মানুষের সেই আকাংখা ও অভিপ্রায় পূরণের অবারিত সুযোগ এনে দেয় এক জায়গায় এনে। বাঙ্গালী সমাজে দুর্গাপূজার আমেজ ও অনূভূতি স্বতন্ত্র এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এক্ষত্রে প্রাণের সাড়া ফেলে সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই। শান্তি ও সম্প্রীতির এমন নজির মনে হয় বিশ্বে কম দেশেই আছে।

তাসত্বেও আজকে প্রশ্ন জাগে, পূজাকে নিষ্কন্টক ও নিরাপদ করতে পুলিশ টহল লাগবে কেন। কেবল মন্ডপের যতœ পরিচর্যায় সতর্ক দৃষ্টি ছাড়া সশস্ত্র পাহাড়া কেন দরকার পরল। সেই আত্মজিজ্ঞাসার জবাব ও তার সমাধান আমাদের নিজেদের মধ্যে খুঁজে পেতে হবে। আমাদের ছোট কিশোরকালে একেবারে মুক্ত খোলাখুলিভাবে দুর্গাপূজা উপভোগ করেছি। সেখানে দ্বেষ-বিদ্বেষ আঘাত-আক্রমন থাকবে তা কল্পনাও করা যায়নি। তাতে নিরাপত্তা নিয়ে কোন  আশংকা-আতংক ছিল না। তখনো হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খৃষ্টান সবাই মিলে এ অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে দেখা গেছে। সীমাহীন আবেগ আনন্দের ঢেউ বয়ে গেছে দুর্গাপূজার দিনগুলোতে। এ উপলক্ষে বিচিত্র ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে অংশ নিতো বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ একত্রে । তখন মানুষে মানুষে মমত্ববোধ ছিল অকৃত্রিম। মনুষ্যত্বের তেমন ঘাটতি ছিল না। একে অপরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে উজার করে ঢেলে দিতো প্রেম,প্রীতি ও সহানুভূতি। কেউ কাউকে ভয়-ভীতি,সন্দেহ-সংশয় করবে তেমন প্রশ্ন বা পরিবেশ মাথায়-চিন্তায় ছিল না। বরং “সকলের তরে সকলে আমরা-প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”- এমনটিই বাস্তবে দেখা গেছে। আজকে আমাদের সেই দিনের মন মানসিকতা, দৃষ্টিভংগি, সহনশীলতা ও মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটা দুর্গাপূজাসহ সব ধর্মের সকল আচার অনুষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য।  এটাই হোক আজকের দিনে একমাত্র কামনা ও বাসনা। জয়তু হৈমন্তী দুর্গোৎসব।  আসুন,সবাই স্বাস্থ্য নিয়মাবলী, সামাজিক দূরত্ব  ও সরকারী বিধি বিধান  এবং নির্দেশনা মেনে ও প্রতিপালন করে এবারের করোনাকালের  অনাড়ম্বর দুর্গা উৎসব উদযাপন করি।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD