গোলাম মোস্তফা: জনবল শূন্যতা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর রুগ্ন দশার ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের ইএমও পদে নেই কোন চিকিৎসক। অপারেশন থিয়েটার চালু করা যাচ্ছেনা কনসালটান্টের অভাবে। নেই ডেন্টাল সার্জনও।
এদিকে ২৮ বছর আগের একটি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে কোনমতে চলছে রোগী স্থানান্তর। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নাই। ইসিজি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দাঁত স্ক্যালিংয়ের নেই কোন যন্ত্রপাতি। নেই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনও। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর জনবল তালিকা সূত্রে জানা যায়, এনেসথেসিয়া বিভাগের ১জন জুনিয়র কনসালটান্ট, সার্জারী বিভাগের ১জন জুনিয়র কনসালটান্ট, মেডিসিন বিভাগের ১জন জুনিয়র কনসালটান্ট, গাইনী বিভাগের ১জন জুনিয়র কনসালটান্ট ও ১জন ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য। এছাড়াও সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ১জন, প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ১জন, চিকিৎসা সহকারী ১জন, লেপ্রসী কন্ট্রোল সহকারী ১জন ও ১২ জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদই শূন্য। আর প্রেষণে কর্মরত ৩জন চিকিৎসা সহকারী ও ১জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট। ১জন স্বাস্থ্য সহকারী আছেন আইএসটিতে। একই সঙ্গে ১জন প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ২জন অফিস সহকারী, ১জন সহকারী সেবক, ৩জন অফিস সহায়ক, ১জন মালি, ১জন কুক/মশালচী, ১জন নৈশ প্রহরী ও ৪জন ঝাড়দারের পদও শুন্যই রয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী আয়শা খাতুন, শিরিন পারভিন, কদভানু ও খদেজা খাতুন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি’র আধুনিকায়ন করা হলেও চিকিৎসক ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি কম থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। অধিকাংশ রোগী জেলা শহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এতে তাদের মতো দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষদের শহরের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রবিবার দুপুরে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে ৬ জন রোগী। আর মহিলা ওয়ার্ডে ৪ জন রোগী ভর্তি। এ সময় তামান্না খাতুন, পিয়ারা খাতুন, সানোয়ার হোসেন ও সাগর হোসেন জানান, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক পাখা অচল। অসুস্থতার সঙ্গে ভ্যাপসা গরম যেন তাদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বুলেন্স চালক আব্দুল মমিন জানান, নতুন এম্বুলেন্সটি ২০১৬ সালে হস্তান্তরের ঠিক ৫দিন পর সামান্য দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ২৮ বছর আগের একটি সরকারি পুরানো গাড়ি দিয়ে চলছে রোগী স্থানান্তরের কাজ। গাড়িটি মাসে ৩/৪ বার নষ্ট হয়। আর দ্রুত গতির না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গোন্তব্যে পৌঁছাতে চরম বেগ পেতে হয়। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিচ্ছন্ন কর্মী অর্চনা রানী জানান, পাঁচ জনের কাজ ১জনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ২জন দিয়ে তা কোনরকমভাবে করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মিজানুর রহমান জানান, জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগ মিলে প্রতিদিন ২৫০/৩০০ রোগী হয়। জরুরি বিভাগে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার পদে চিকিৎসক না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ের মেডিকেল অফিসার দিয়ে জরুরি বিভাগ চালানো হচ্ছে। আর কনসালটান্ট চিকিৎসকের অভাবে সামান্য অপারেশনের রোগীও বিভিন্ন জেলা সহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জামাল মিয়া শোভন বলেন, চিকিৎসাসেবা একটি টিম ওয়ার্ক। যা সকল পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য পদের স্টাফদের স্বমন্বয়ে এবং যথাযথ চিকিৎসার সরঞ্জামাদি দিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো। উত্তরোত্তর আরো ভালো করার জন্য জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির আবেদন করে দাপ্তরিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মো. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যা সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।