মুখ থুবরে পরেছে তাড়াশের টেলিফোন সার্ভিস

Spread the love

স্বাধীনতার অনেক বছর পর সম্ভবত ৮০’র দশকে তৎকালীন তাড়াশ থানায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় ল্যান্ড লাইন টেলিফোন স্থাপিত হয়। তখনো মোবাইল ফোন চালু হয়নি। তাই থানা সদরে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন অফিসে, ব্যবসা দোকানপাটে ও ব্যক্তি পর্যায়ে টেলিফোন গ্রাহক সেবা চালু হয়। মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে থাকে দুরালাপনী সুবিধা নিতে। যদিও সেসময় টেলিফোন ব্যবস্থা ছিল এনালগ ধরণের। ডিজিটাল পদ্ধতি এসেছে আরো পরে। প্রথমে টেলিফোন সেটের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে লাইন চাইতে হত একচেঞ্জ অফিসে। তারপর কাংখিত গ্রাহকের সাথে সংযোগ ঘটত। তখনকার দিনে এক গ্রাহক হতে সরাসরি অন্য গ্রাহককে ফোনে সংযুক্ত হওয়ার উপায় ছিল না। অর্থাৎ একচেঞ্জে ফোন করে ইপ্সিত নম্বরে লাইন দিতে বলতে হত। মোবাইলের ধারণা কারো মাথায় ছিল না।
৮০’র দশকে তাড়াশ থানা উপজেলায় উন্নীত হলে টেলিফোনের চাহিদা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে দেড় শতাধিক টেলিফোন গ্রাহক ছিল তাড়াশ সদরে। যা আজ চল্লিশের নীচে নেমে এসেছে। আগেকার দিনে বিভিন্ন পোলের বা খুঁটির সাহায্যে তার টানিয়ে টেলিফোন সংযোগ দেওয়া হত। কানেকশন নিতে অবশ্য বখেরা দেয়া লাগতো। বিনে লেনদেনে এ টেলিফোন সংযোগ বরাদ্দ মিলতো না। সরকারী অফিস ছাড়া প্রাইভেট কানেকশনে টেলিফোন সেট কিনে নিতে হত বাইরের বাজার থেকে। প্রথমদিকে টেলিফোনের লাইন বিকল হলে সরকারীভাবে “কেবল তার” বরাদ্দ দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। লাইন চেকিংও চলতো মাঝে মাঝেই। ফলে গ্রাহকসেবা সার্ভিস মোটামুটি চলছিল।
পরে ৯০’দশকের শেষের দিকে মোবাইল সেল ফোন চালু হয়। মোবাইল পরিসেবার দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে সরকারী টেলিফোন ব্যবস্থা ভেঙে পরতে থাকে। এদিকে দেশী বিদেশী মোবাইল কোম্পানীর রাতারাতি স¤্রসারণ ও সমৃদ্ধির জয়জয়কার। অন্য দিকে দেশী টেলিযোগাযোগ সেবা সার্ভিসের উন্নতি না হয়ে শনৈ শনৈ অধ:পতন। শুধু প্রতিযোগীতাতেই সরাকারী টেলিফোন যে হেরে যেতে থাকে তাই নয়। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাও চরমে উঠতে থাকে। এমনকি জনসাধারণকে হয়রানির একশেষ করতে থাকে বকেয়া বিলের জন্য কোর্টে মামলা দিয়ে। সততা ও নৈতিকতার মধ্যে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি ও গাফিলতি থাকলেও উৎকোচ নেওয়া আর ভূয়া ভুতুরে বিল দিয়ে গ্রাহককে মামলার ফাঁদে ফেলা তাদের কৌশলগত নীতিরূপে অবলম্বন করে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতই তাড়াশে টেলিফোন বিভাগের দুর্দশা ও দুর্দিন নেমে আসতে থাকে। এরই মধ্যে গত এক বছরের বেশী হল তাড়াশ টেলিফোন একচেঞ্জ অফিসের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে আছে। তারা একবার ঢাকা একবার বগুড়া এমনি নানা ছলচাতুরী মেরামতের কথা বলে চলেছে বছরের পর বছর ধরে যার কোন উন্নতি বা পরিবর্তন নেই। বর্তমানে মাসের পর মাস ধরে তাড়াশের টেলিফোনগুলো অকেজো তথা বন্ধ পরে আছে। ফলে গ্রাহকের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে বিটিআরসি নামক সরকারী দপ্তরের টেলিফোনের প্রতি।
ইতোমধ্যে মাটির নীচ দিয়ে আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন টানা হলেও অধিকাংশ টেলিফোন লাইনের তার নষ্ট বা চুরি হয়ে গেছে যার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না সংশ্লিষ্ট লোকজন। এদর কেউ কেউ দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ বাড়ী থেকে চাকরী করার সুবাদে কারচুপি ও কারসাজিমূলক টেলিফোন সার্ভিস কায়েম করায় উপজেলার টেলিফোন ব্যবস্থাপনা আরো করুণ ও শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে। এখানকার একচেঞ্জ অফিসটি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। অফিস ভবনের সামনে মাটি বহনের ড্রাম ট্রাকের গ্যারেজ চোখে পড়ে। অবনতিশীল এ পরিস্থিতি এমনিভাবে চলতে থাকলে মুখ থুবরে পরার কারণে তাড়াশে টেলিফোন পরিসেবা বিলুপ্ত হতে আর বেশী দেরি নেই। এখন এটা একটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথচ এর দুর্নীতিগ্রস্থ কমকর্তা কর্মচারীদের সরকারী কোষাগার থেকে জনগণের পয়সায় চাকুরী, পদোন্নতি ও বাড়ী বসে কাজ ফাঁকী দিয়ে বিরাট আরামে তাদের ডিউটি চলছে। টেলিফোন এমন একটি বিভাগ যার অধীনস্ত কর্মচারীদের মনে হয় কোন জবাবদিহি নেই। দেশের জনসাধারণের কাছে তাদের দায়িত্বশীলতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না।
মোট কথা আইনের শাসন বা সুশাসন না থাকায় টেলিফোনের মত একটি জরুরী জনসেবা কার্যক্রম কীভাবে ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয়, অকার্যকর তথা মৃত অবস্থায় উপনীত হয়েছে আজকের তাড়াশের অচল টেলিফোন সার্ভিসের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হবে। এই দেশপ্রেমবিহীন কর্মচারীরাই এটাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে বরং এই সরকারী জনগুরুত্বপূর্ণ খাতকে লোকসানে ফেলে দিয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোকে বিশাল মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনের এই সংকটময় দুরাবস্থা খেকে পরিত্রাণের উপায় ভেবে দেখা উচিত বলে জনগন মনে করে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD