বগুড়ার শেরপুরে প্রায় ৫‘শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ

Spread the love
খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কি:মি: দক্ষিণে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন সু-প্রাচীন শহর শেরপুর। বগুড়া পৌরসভার একদিন আগে ১৮৭৬ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। এখানে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। খেরুয়া মসজিদের সুনিপুন নির্মাণ শৈলী এখনও মানুষের মন কাড়ে। শাহতুর্কান, শাহবন্দেগীর মাজার এখানে মুসলিম ঐতিহ্যেরই স্বাক্ষী। ইতিহাস খ্যাত অনেক কাহিনী বর্তমান এই প্রজন্মের কাছে আজও  প্রায় অজানা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এখানে ৩৬০ জন আউলিয়া সমাহিত আছেন। তাদের অনেক স্মৃতি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও এখনো অনেক স্মৃতি চিহ্ন বিদ্যমান। ইতিহাস খ্যাত হযরত শাহ তুর্কান ও গাজী শাহ বন্দেগী এর সমাধিস্থান, দরগাহ শরীফ আমাদের মাঝে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও বিদ্যমান।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ার শেরপুর শহরের অদূরে মাত্র ১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় সাড়ে ৫শত বছরের প্রাচীন খন্দকার টোলা খেরুয়া মসজিদের অবস্থান। গ্রামীণ নিরিবিলি  সবুজ শ্যামল পরিবেশে অপূর্ব নির্মাণ শৈলী সম্বলিত খেরুয়া এই মসজিদ আজও দর্শনার্থীদের হৃদয় কাড়ে।
মসজিদের গায়ে সংস্থাপিত ফার্সি শিলালিপি থেকে জানা যায়, জওহর আলী কাকশালের পুত্র মীর্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্টপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ৯৮৯ হিজরীর ২৬ জিলকদ (১৫৮২ খ্রিঃ) সোমবার মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। উত্তর দক্ষিণ লম্বা মসজিদের বাইরের মাপ দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ২৪ ফুট। আর ভিতরের মাপ দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও প্রস্থে সাড়ে ১২ ফুট। চারিদিকের দেওয়াল গুলো প্রায় ৬ ফুট পুরো। মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার ও পূর্ব দেওয়ালে ৩ টি দরজা রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মাঝের দরজাটি অন্য দুটি থেকে আকারে অনেক বড়। আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধগোলাকার মেহরাব গুলো স্থাপিত। মসজিদের কার্নিস বাঁকানো আছে। দেওয়ালে কিছু কিছু পোড়া মাটির চিত্র ফলকও ছিল। তবে সংখ্যায় খুবই কম, দেওয়ালগুলো সাদাসিধে ধরনের বলা যেতে পারে। বাগেরহাটের ৬০ গম্বুজ মসজিদ ও শাহজাদপুরে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের নির্মাণ শৈলীর সাথে এই খেরুয়া মসজিদের অনেক মিল দেখা যায়। ইট ও চুন সুড়কি ছাড়াও খেরুয়া মসজিদের নির্মাণ কাজে বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের গায়ে দুইটি শিলালিপি ছিল, যার একটির ভিতরে রক্ষিত ছিল মুল্যবান সম্পদ যা পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয়। আর একটি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি যাদুঘরে রয়েছে।
সম্রাট আকবরের আমলে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এর গাঁয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যতিক্রম অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে। স্থাপত্য বিশারদদের মতে, খেরুয়া মসজিদে সুলতানী ও মুঘল আমলের মধ্যবর্তী স্থাপত্য নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এতে ১২ কোণা ও ৮ কোণা কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাংলার স্থাপত্য শিল্পে বিরল। এই মসজিদটি বহুদিন অনাদরে পড়ে ছিল। এর মধ্যে অনেক গাছ-পালা জন্মে চারিদিকে জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ৯০ এর দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদটি সংস্কার করার ফলে মসজিদের আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৮ সাল থেকে মসজিদের ৪৮ শতক জায়গাসহ দেখাশুনার জন্যে একজন খাদেম নিয়োগ করেছেন। দেশ বিদেশের বহু পর্যটক দর্শনার্থী ও স্থাপত্য বিশারদরা এই মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেম আব্দুস সামাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সাবেক জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস এর আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে এই সুরম্য মসজিদ স্থলে যাওয়ার জন্যে পাকা  রাস্তা নির্মিত হয়েছে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক থেকে আনুমানিক ১ কি:মি: দূরে অবস্থিত  মসজিদটি  পরিদর্শনে আসা দেশ বিদেশের ভ্রমন পিয়াসী মানুষের যেমন তৃষ্ণা মেটাবে তেমনি মুসলিম স্থাপত্য সর্ম্পকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ধারণা জোগাবে।
লেখক তরুণ আলোচক ও গবেষক 
খোন্দকার ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ  ।
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক : 
 মারকাযুদ্ দাওয়াহ উচ্চতর গবেষণা ও সেবা কেন্দ্র  ।
সীমাবাড়ী , চান্দাইকোনা , শেরপুর বগুড়া  ।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD