গাজী সৈয়দ শুকুর মাহমুদ
যুদ্ধ শুরু হয়েছে আত্মঘাতি যুদ্ধ। এবারে স্বপক্ষীয়রাই প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে। তথাকথিত নামিক মুসলিমরাই এখন যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হয়েছে। আর প্রয়োজন নেই ইহুদী, খ্রীষ্টান, কাফের, মুশরিক, মুনাফিক ও জালিমদের। এখন নিজেরাই নিজেদের বিপক্ষে মোতায়েন হয়েছে। ধর্মহীনরা এখন ধর্মীয় আলোচনায় ব্যস্ত। পরিবর্তনের চেষ্টা করছে ধর্মীয় বাণী। ধর্মে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে যা ইসলামী আইনে বিদআত বা শিরক।
হে ঈমানদার-মুমিন, মুসলিমগণ আর নিরবে ঘুমানোর সময় নেই। সতর্ক হও, হুশিয়ার থেকো, চোখ-কান খোলা রেখো শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হও। নিজের ঈমানী শক্তির হাতিয়ার শকত করে আঁকড়ে ধরো। এ যুদ্ধে অস্ত্রের দরকার নেই। ঈমানী শক্তিতে দৃঢ় হতে হবে, শিরক বিদআত এর অপশক্তি রুখতে।। বাতিলেরা মহড়া দিচ্ছে হক্ক’কে পরাজিত করতে। বাতিলেরা উস্কানি পেয়েছে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুশরিক, মুনাফিক ও অমুসলিমদের থেকে। ইসলাম ধংস করতে মাঠে নেমেছে তথাকথিত নামিক মুসলিমেরা’ই।
পৃথিবীর ইতিহাসে এযাবত যত যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে তা ছিলো পক্ষ আর প্রতিপক্ষের মধ্যে। এবারের যুদ্ধ স্বপক্ষিওরা’ই দাড়িয়েছে নানা পক্ষ হয়ে ইসলামের বিপক্ষে। তথাকথিত শিয়া মুসলিমরা জাগ্রত হয়েছে হক্ক এর বিরুদ্ধে। তারা নবী করিম (স.) এর একজন সাহাবীকে নবী মেনে মন গড়াভাবে ধর্মীয় কাজ করে আসছে। তারাও নিজেদের’কে মুসলিম বলে দাবি করছে। কাদিয়ানি মুসলিম, ইসলামের ইতিহাসে জঘন্যতম অপরাধী আহম্মদ কাদীয়ানি’কে নবী দাবি করে ধর্ম কর্ম করছে। তারাও নিজেদের’কে মুসলিম বলেই দাবি করে। অপর এক ফেরকা ফকিরি (না রাহা) এরা নিজেদের’কে মুসলিম বলে দাবি করলেও ইসলাম পরিপন্থি সকল কাজ করে আসছে। অতঃপর দেশে নামীক কিছু পীর তারাও মুসলিম পরিচয়ে থাকলেও ইসলাম পরিপন্থী কাজ করছে। এরকম মুসলিম পরিচয়ে নানা দল নানা সংগঠন হক্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। হে ঈমানদার মুমিন মুসলিমগণ, সতর্ক হও যুদ্ধের মুকাবিলা করতে। প্রস্তুত হও ঈমানী হাতিয়ার নিয়ে হক্কের পতাকা হাতে নিয়ে দাড়াও বাতিলের বিরুদ্ধে। কেননা মহানবীর(স.) ভবিষ্যত বাণী মতে ইসলামের মধ্যে তথাকথিত মুসলিম কর্তৃক বহু ফ্যাৎনা-ফ্যাসাদ, ব্যাখা-বিকৃতি ও মনগড়া কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে।
¯্রষ্টার সৃষ্টি সকল মাখলুকই তার বান্দা (গোলাম)। তার মধ্যে শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে। তিনি কত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন তার কোন হিসেব বান্দার কাছে নেই। কথিত আছে আঠার হাজার মাখলুক, তবে এটিও সঠিক নয়। এই বাক্যটিও অনুমান নির্ভর। শুধু আমাদের বসবাসের জগত পৃথিবীতে যা আছে তার হিসেবই মানুষের কাছে নেই। তারপরও আসমানে বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ, নক্ষত্র রয়েছে কত তার হিসেবও আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া ঐগুলো অহেতুক সৃষ্টি করেননি। সেখানে কোন না কোন মাখলুক রয়েছে। সে যাই হোক, কোটি কোটি মাখলুক থাকলেও আল্লাহ পাক তাঁর কালামুল্লাহ শরিফ পবিত্র কোরআন শরিফে ঘোষণা দিয়েছেনÑ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সকল সৃষ্টির সেরা। তিনি আরও বলেছেনÑ এই শ্রেষ্ঠ জাতির মধ্য হতে যারা বিশেষ কিছু গুণের অধিকারী বা বিশেষ গুণ অর্জন করতে পারবে তারা হবে আমার বন্ধু অর্থাৎ আল্লাহ’র ওলি। দেখুন জগতে কোন মনিবের গোলাম কখনই মনিবের বন্ধু হয় না, অনেক ব্যবধান থাকে। সম্পর্ক হয় মনিব আর গোলাম। অথচ যিনি সকল মনিবের মনিব, সকল সৃষ্টির ¯্রষ্টা তিনি তার বান্দাকে বন্ধু বলে মেনে নিবেন। এর মধ্যে আবার কিছু মানুষকে সৃষ্টি লগ্নেই তার বন্ধু হওয়ার চরিত্র দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যেও আবার শ্রেণিÑ ১ম শ্রেণির বাছাই করা বন্ধু নবী-রাসুল আম্বিয়াগণ। দ্বিতীয় হলেন সাহাবীগণ। তাছাড়া অন্যান্য মানুষ যারা আল্লাহ’র হুকুম (কোরআন) মোতাবেক চলবে, নবী ও রাসুলের আদর্শ, হুকুম নিষেধ অনুকরণ অনুসরণ করে চলবে তারা আউলিয়া বা ওলি হতে পারবেন। তা না করে যদি কেউ কোরআন হাদিসের বাইরে মনগড়া ফতোয়া জারি করে নিজেকে ওলি বা আউলিয়া বলে দাবী করে তারা ভন্ড, ফাসিক, প্রতারক, বিদ’আতী ও শয়তানের দোসর। সাধারণতঃ ওলিগণ অশিক্ষিত ও মূর্খ মানুষদের জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে থাকেন। হক্কানী আলেম ওলামাগণ রাসুল (স) এর পরে সাহাবিগণ, তাবেঈগণ, তাবে-তাবেঈগণ তারপর ইমামগণ, খলিফাগণ সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বীন প্রচার করেছেন।
এরপর পীর-মুরিদী পদ্ধতিতে দ্বীন প্রচার চালু হয়েছে। তখন যারা পীর মুরিদী করেছেন তারা ভিন্ন ভিন্ন তরিকা সৃষ্টি করলেও প্রত্যেকেই ছিলেন হক্কানী আলেম। পরবর্তীকালে ইহুদী-খ্রিস্টান, নাছারাদের চক্রান্তে পরে নামধারী কিছু মুসলমান পীর মুরিদীর নামে বাতিল ফেরকায় জড়িয়ে পড়েছে। এরাই মুসলমানদের করছে বিপথগামী। এখান থেকেই শুরু হয়েছে মুসলমানদের নানা মত নানা পথ। দ্বিধাদ্বন্দ্বে আজ মুসলমান নামের শব্দটি যেন খেলনায় পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে কোন কোন পীর বা ওলীর মাজারে বাৎসরিক ওরশের নামে চলছে ইসলাম পরিপন্থী অসামাজিক কাজ। ওরশের দিন হলেই আয়োজন করা হয় গান-বাজনা, গাঁজা-মদের আড্ডা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা যা শরিয়তে সম্পূর্ণ হারাম। তবে এখনও অনেক হক্কানী পীর মাশায়েখ, মুর্শীদ বা শায়েখ আছেন তাদেরকে খুঁজে বের করে হক্কানী মুর্শীদের মুরীদ হলে দ্বীনের সঠিক বুঝ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হবে। ইসলাম প্রচারের শুরু থেকেই ছিল বাতিলের বিরুদ্ধে হক্ক এর জিহাদ। আর এখন শুরু হয়েছে হক্ক আর বাতিলের যুদ্ধ। এই বিপৎজ্জনক পরিস্থিতিতে মুসলিম সম্প্রদায়কে সদাসর্বদা সতর্ক অবস্থায় শুধুমাত্র আল্লাহর কোরআন আর শেষ নবীর(সা.) সুন্নাহর ওপর দৃঢ়ভাবে কায়েম থেকে তাওহীদের সঠিক ও শুদ্ধ পথে অবিচল থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
লেখক : বিশিষ্ট কলামিস্ট, কবি ও সাহিত্যিক , শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ।