আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার : নাম তার আলহাজ্ব খোন্দকার খাদেমূল ইসলাম। বাড়ী রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউপির দেওভোগ গ্রামে। পাটের বাণিজ্য করেন বৃটিশরা এদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় হতে। পাকভারত ভাগ হয় যখন তার বয়স ১৩ বছর তখন। ঐ সময় আড়াই টাকা মন দরে পাট কিনতেন। নিমগাছি থেকে কিনে চান্দাইকোনা বা সলংগা হাটে বেচতেন। আবার দেওভোগ হাট থেকেও কিনতেন। ঐ সময় দেওভোগে বড় হাট লাগতো। বড় বড় কোষা নৌকা আসতো ছোট নদীতে, যখন পানি থাকতো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এবং তাতে ৫০০ মন পর্যন্ত বা তারও বেশী পাট বোঝাই দিয়ে নিয়ে যেত বেড়া বা আরও দূরের মহাজনেরা। তিনি সিরাজগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী মাড়োয়ারী মহাজন মানিক বাবুর সাথেও ব্যাবসা করতেন। একবার আড়াই টাকা মন দরে ৫০০ মন পাট কিনে মজুত করে রেখে পরে সাড়ে সাত টাকা মন দরে বিক্রয় করেন। ঐ সময় সের দরে বিক্রয় হতো পাট এবং সের ছিল ৬০ তোলায়। পরে সরকার ৮০ তোলায় সের হবে এমন আইন জারী করলে একমন পাট অনেক বেশী হতো। এখন যেমন কেজি হিসাবে পন্য বিক্রয় হয় সরকারী বিধি মোতাবেক ঐ সময়েও তেমন হত। তিনি তার প্রতিবেশী মজুপুরের জোতদার জুব্বার খাঁর নিকট হতে টাকা কর্জ নিয়ে কারবার করতেন। অবশ্য নিজ গ্রামের মোকছেদ তালুকদারও তাকে টাকা দিতেন এবং দেওভোগ হাটের গোডাউনও ছেড়ে দিতেন পাট রাখার জন্য। আজ ওরা কেউ নেই, তিনিই মাত্র রয়েছেন, আর স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। আজ তিনি ৮০ টাকা কেজি পাট বিক্রয় করছেন, তাও মাত্র ২ কেজি পাট তার মূলধন। কিন্ত এই ২ কেজিরও গ্রাহক নেই। এছাড়া কয়েকটা গরুর গলাসী রয়েছে তার দোকানে, যা দিয়ে গরুকে বেঁধে রাখে গলায় আটকে যাতে অযথা ছুটে না যায়। চিকন গুলো ৫ টাকা পিচ আর মোটা যেগুলি তার দাম ১০ টাকা। কিন্ত কিনবে কে, করোনা আতংকে হাটে লোকজনই নেই বলা চলে। বয়স হয়েছে তবে কেন হাটে সামান্য পাট নিয়ে বসে থাকেন এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, বাড়ীতে বসে থেকে ভাল লাগেনা তাই হাটে আসেন। বাণিজ্য মূখ্য নয়। এখানে এলে নানান লোকজনের সাথে দেখা হয়, এতে মনও ভাল থাকে।