তাড়াশ পৌরসভার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

Spread the love

আবু শাহীন খান চৌধুরী

তাড়াশ উপজেলাকে পৌরসভায় রূপান্তর করার জন্য বর্তমান সরকারকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। একটি সুন্দর পরিকল্পিত শহর তৈরীর পূর্বশর্ত হলো পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করা। তাড়াশ উপজেলা সদর পৌরসভায় রূপান্তরিত করা হোক এটাই ছিল অত্র এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী। যখন কোন একটি স্থান বা এলাকা পৌরসভায় উন্নীত হয় তখন তার অবকাঠামো উন্নয়ন তথা রাস্তাঘাট,পানি নিস্কাশন (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা,সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পাবলিক সৌচাগার,বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন,বিনোদনকেন্দ্র,খেলার মাঠ,সুন্দর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, বাজারে দোকানপাট তথা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তরান্বিত হয়। আর এগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর অর্থের। কোন বড় কিছু অর্থাৎ টেকসই কোন কিছু করতে গেলে প্রথম প্রয়োজন হয় একটি সুন্দর বাস্তবমুখি ও দির্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা। আর এই টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় সুন্দর ও বাস্তবমুখি আয় ব্যয়ের বাজেট। আয়ের সঙ্গে যদি ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকে তবে সে পরিকল্পনা ব্যাহত হয় এবং অবশেষে তা বিফলে পর্যবসিত হয়। কোন এলাকার উন্নয়নের জন্য সেই এলাকায় কিছু নিজিস্ব সম্পদ থাকে। তাড়াশ পৌরসভার অভ্যন্তরে তেমন কিছু সম্পদ রয়েছে।

আর তাহলো বিশাল আয়তনের বেশ কিছু পুষ্কুরিনী বা জলাভূমি যেগুলো মৎস্য চাষের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এবং সেগুলো সরকারী সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত। শুধু তাড়াশ গ্রামেই পূর্বে প্রায় তিন শত দীঘি-পুকুর ছিল বলে জানা যায়। জানিনা এই সম্পত্তিগুলি ভূমিমন্ত্রনালয়ের নাকি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। সে যাইহোক, সকল মন্ত্রনালয়ই গুপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন। তাড়াশ পৌরসভার অভ্যন্তরে এই বিশাল বিশাল আয়তনের পুষ্কুরনীগুলো সঠিক পরিকল্পনা  না থাকার কারণে কিছু অসাধু কর্মখর্তা ও ক্ষমতাধর ব্যক্তির যোগসাজসে অল্পমূল্যে এই পুষ্কুরনীগুলো লিজ দেওয়া হয়। কিছু ইতোমধ্যেই নামে-বেনামে বেদখল হয়ে গেছে এবং সে তৎপরতা এখনো অব্যাহতভাবে চলছে। এতে রাষ্ট্র তথা সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়, জনসম্পদ হচ্ছে লুটপাট। তাই তাড়াশ পৌরবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের পরামর্শ হলো, পুষ্কুরনীগুলো যে মন্ত্রনালয়ের অধীনেই হোক না কেন; এগুলো তাড়াশ পৌরসভার সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে অবহিত করে নিলামের মাধ্যমে (মৎস্যচাষের জন্য) প্রতিবছর লিজের ব্যবস্থা করলে তাড়াশ পৌরসভা প্রচুর রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। আর এই আহরিত অর্থ দ্বারা তাড়াশ পৌরসভাকে একটি আদর্শ সুন্দর তিলোত্তমা পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা খুবই সহজ হবে। একই সাথে সরকারি সম্পদ বেহাত ও বেদখল এবং অব্যবস্থাপনার হাত থেকে রেহাই পাবে।

আবার এই বিশাল আয়তনের পুষ্কুরনীগুলো বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সিরাজগঞ্জের পৌরসভার ভিতর এম মনসুর আলী অডিটরিয়ামের উত্তর পার্শ্বে ক্ষুদ্র আয়তনের একটি পুষ্কুরনী রয়েছে। যেটি আজ থেকে ৫/৬ বছর পূর্বে ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকতো। শহরবাসী উক্ত পুকুরটিকে ময়লা আবর্জনার ভাগার হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু বিগত জেলা প্রশাসক কামরুন্নাহার সিদ্দিকা  উক্ত পুকুরটি সংস্কার করে সুন্দর বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যেটি এখন “পদ্ম পুকুর” হিসেবে পরিচিত। সেখানে সকাল ও বিকেল প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্য পিপাসু লোকেরা ভির জমায়। এক সময় পুকুরটির পাশ দিয়ে চলার সময় লোকেরা নাক চেপে নি:স্বাস বন্ধ করে যেত। আর এখন পুকুরটির পাশ দিয়ে চলার সময় মানুষ পুকুরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। অনুরূপভাবে তাড়াশ পৌরসভার অভ্যন্তরে বিশাল আয়তনের দু একটি পুকুর পদ্ম পুকুরের ন্যায় গড়ে তোলা যেতে পারে। সবশেষে যেটা বলার, তাড়াশ চলনবিলের অন্যান্য পৌরসভা এলাকার মত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প-কলকারখানা সমৃদ্ধ নয়। এখানকার পৌরবাসীর ৯০ ভাগই কৃষি পেশা নির্ভর ও  অধিকাংশই ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষক ও শ্রমজীবি। কিছু  দরিদ্র মৎস্যজীবিও আছেন।  ফলে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার পৌর করের বোঝা না চাপিয়ে তা বিকল্প পুকুর লিজ বা মৎস্য চাষের মাধ্যমে উত্তোলনের ব্যবস্থা নিলে সেটা গরীব পৌরবাসির জন্য কল্যাণকর ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে স্থানীয় পৌরবাসিগণ মনে করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুচিন্তিতভাবে ভেবে দেখতে পারেন।

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, তাড়াশ ডিগ্রি কলেজ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD