নজরুলের দৃষ্টিতে বিশ্বসাহিত্য

Spread the love

কে এম আব্দুল মোমিন

‘দেখব এবার জগতটাকে আপন হাতের মুঠোয় পুরে। কাজী নজরুল ইসলাম

[কে এম আব্দুল মোমিন  তাড়াশের বিনসাড়া গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি তাড়াশ তথা চলনবিলের গর্ব।  বর্তমানে চলনবিলের প্রেক্ষাপটে ইংরেজী সাহিত্যের উঁচু মাপের একজন সমঝদার ও লেখক যা বিরল প্রতিভা ও পান্ডিত্যের পরিচায়ক। তিনি নিজেও ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে উচ্চতর লেখাপড়া করেছেন। তার প্রকাশিত কয়েকটি বইয়ের অধিকাংশই ইংরেজী সাহিত্য থেকে বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের অনুবাদ । লেখক বর্তমানে রাজশাহীতে বসবাস করছেন এবং পেশাগত জীবনে তিনি  রাজশাহী সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, নাটোর এর রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ,লেখক ও গবেষক। ]

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯Ñ২৯ আগস্ট ১৯৭৬) এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার,  ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বাদক, সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীত শিক্ষক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, সম্পাদক, সাংবাদিক, অনুবাদক এমন কী বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম তাত্ত্বিক ও প্রবক্তা। বহুমুখী এ বিরল প্রতিভা কেবল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তুলনীয়।

বাংলাসাহিত্য গগন যখন দেদীপ্যমান ‘রবি’র আলোয় উদ্ভাসিত, অপর কবি-সাহিত্যিকেরা যখন নিষ্প্রভ, তাঁরা যখন সেই বলয়বন্দি, তখন ‘বিদ্রোহী’ শুধু ‘রবি’র মহাবলয় ভেদ করেননি, বিশ্ব কাঁপানো বৃটিশ সিংহাসনকে পর্যন্ত প্রকম্পিত করেছেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির সমস্ত শাখায় নজরুল ধুমকেতুর মতো বিচরণ করেছেন। সর্বত্র বিদ্রোহ করেছেন। ভাঙ্গার গান গেয়েছেন। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতেছেন। উদয়ের সাথে সাথেই মানবসমাজের সকল স্তরের মানুষের তিনি স্বতন্ত্র মহিমায় নজর কেড়েছেন।

নজরুল যে ধুলির ধরায় জন্মেছেন সেই জীবন ও মহাজগতকে আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখার স্পৃহা ছিল তাঁর প্রবল। এ স্পৃহাই তাঁকে বাউণ্ডেলে করেছে। আত্মোপলব্ধির সুযোগ দিয়েছে। জীবনদর্শন গভীর করেছে। মা-মাটি-মানুষের বাস্তব অস্তিত্ব পর্যবেক্ষণে তীক্ষè দৃষ্টি দান করেছে। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন ভৌগলিক সীমারেখায় বন্দি জীবন যাপনের জন্য তিনি জন্মগ্রহণ করেননি। গতানুগতিক জীবনধারা তাঁর কাম্য হতে পারে না।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুরন্ত ডানপিটে শিশুর কৈশোর অতিবাহিত হয় বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। প্রচলিত বিধিবদ্ধ শিক্ষা পদ্ধতি তাঁর অদম্য জ্ঞানস্পৃহাকে পরিতৃপ্ত করতে পারেনি। আজন্ম বিদ্রোহী সত্ত্বা তাঁর চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করে। তিনি মক্তব, মাদ্রাসা, হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। বিদ্যালয়ের পর বিদ্যালয় পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু নিজেকে জীবনযুদ্ধে প্রস্তুত করতে ভুলেননি। ছাত্রাবস্থায় তিনি মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও ইংলিশ, আরবি, পার্শি, সংস্কৃত, হিন্দি ও উর্দু ভাষা রপ্ত করেন। এ সমস্ত ভাষায় রচিত প্রধান প্রধান সাহিত্যকর্ম সম্পর্কেও ধারণা লাভ করেন। যৌবনের প্রারম্ভে অংশগ্রহণ করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। ভর্তি হন ৪৯তম বেঙ্গল রেজিমেন্টের করাচী ক্যান্টনমেন্টে। নিষ্ঠা ও দক্ষতাবলে সাধারণ সৈনিক থেকে কয়েক বছরের মধ্যেই হাবিলদার মেজর পদে উন্নীত হন।

মসজিদের মুয়াজ্জিন, মক্তবের শিক্ষক, যাত্রাদলের গায়ক, কবিয়াল, রুটির দোকানের কর্মচারীর বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন মাত্র আঠারো বছর বয়সের মধ্যে। আঠারো বছর পূর্ণ হতেই বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে! অতিবাহিত হয় চার বছরের সৈনিক জীবন (১৯১৭-১৯২১)। তখন সংঘটিত হয় আইরিশ বিপ্লব (১৯১৯Ñ১৯২১), টার্কিশ বিপ্লব (১৯১৯Ñ১৯২২) ও রুশ বিপ্লব (১৯১৭Ñ১৯২৩)। এ সমস্ত সমসাময়িক বিপ্লবও তাঁকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।

যেখানেই গিয়েছেন অধ্যয়নের সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তা সে রুটির দোকানেই হোক, আর যুদ্ধের ময়দানেই হোক। মহাভারত, রামায়ন, গীতা, বাইবেল, কুরান, হাদিস, ইসলামি দর্শন, কালীদাস, কবির, নানক, চৈতন্য, তুকারাম, চণ্ডিদাস, লালন, হাসন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ফয়েজ আহমদ, শেখ সাদি, রুমি, জামি, হাফিজ, খৈয়াম, মার্ক্স, এঞ্জেলস, গোর্কি, টলস্টয়, শেক্সপীয়র, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী, কীটস, বায়রন, উইটম্যান-সহ অনেক সাহিত্য তিনি অধ্যয়ন করেছেন। আত্মস্থ করেছেন। লেখনীতে তার যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

ফলে, নজরুলের চিন্তা-চেতনা শুধু নিজের জন্মভূমিকে ঘিরেই আবর্তীত হয়নি, তাঁর দৃষ্টি বর্হিবিশ্বেও সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশ্বের সকল নিপীড়িত, নির্যাতীত মানুষের জয়গান গেয়েছেন। সকল প্রকার অত্যাচার, অনাচার, নিস্পেষণ, শোষণ, বঞ্চণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন ঝরিয়েছেন। কার্ল মার্ক্স বলেছেন, ‘তোমার ধারণাগত ব্লকগুলি এমনভাবে ঘষবে যেন তা থেকে আগুন জ্বলে!’ নজরুলের অগ্নিবীণা (১৯২২), সাম্যবাদী (১৯২৫), সর্বহারা (১৯২৬), প্রলয়শিখা (১৯৩০), বিষের বাঁশী (১৯৩১), ভাঙার গান (১৯৩১), যুগবাণী (১৯২২) ও রুদ্র-মঙ্গল (১৯২৭) তার জলন্ত দৃষ্টান্ত। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শব্দে-শব্দে তিনি শুধু আগুন জ্বালাননি, বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। তা কেবল বাংলাসাহিত্যে নয়, বিশ্বসাহিত্যেও অনন্য দৃষ্টান্ত। মাটির মানুষের এ এক মহাবিদ্রোহ। বিশ্বসাহিত্যে তিনি একমাত্র সাহিত্যিক যাঁর ছয়টি গ্রন্থ রাজনৈতিক কারণে সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়েছে।কোনো নির্দিষ্ট শিল্পসম্মতরূপে লিখা বা কোনো লিখার শিল্পসম্মত বা বুদ্ধিবৃত্তিক গুণ থাকলে তাকে সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যে ভাষা প্রয়োগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে যা সাধারণ ভাষা থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে। আর বিশ্বসাহিত্য বলতে সাধরণত বিভিন্ন দেশের জাতীয় সাহিত্যের সমাহারকে বুঝায়। বস্তুত কোনো সাহিত্যকর্ম দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করলে তাকে বিশ্বসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত বিবেচনা করা হয়।

১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মান কবি ও লেখক জোহান পিটার একারম্যান (১৭৯২-১৮৫৪)এর নিকট অপর বিশ্বনন্দিত জার্মান সাহিত্যিক জোহান উলফগ্যাঙ ভন গোথা (১৭৪৯-১৮৩২) ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘আসছে বছরগুলোতে বিশ্বসাহিত্য দেখা যাবে জাতীয় সাহিত্যগুলোকে অপসারণ করবে এবং সাহিত্য সৃষ্টির প্রধান ধারায় পরিণত হবে: ‘আমি নিশ্চিতভাবে মনে করি, কাব্য মানুষের বৈশ্বিক সম্পদ। সবখানে ও সবসময় শত শত মানুষের প্রকাশ –আমি নিজেকেও বিদেশি জাতির মানুষ হিসেবে ভাবি। সবারই তা ভাবা উচিৎ। জাতীয় সাহিত্য এখন নিরর্থক পরিভাষা। আমরা বর্তমানে বিশ্বসাহিত্যের দ্বারপ্রান্তে। প্রত্যেকের উচিৎ বিশ্বসাহিত্যের দ্বার উন্মোচন করে ভিতরে প্রবেশ করা।’১

অতীতে প্রায়শ পশ্চিমা তথা ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রধান সাহিত্যকর্মগুলোকে বিশ্বসাহিত্য মনে করা হতো। পশ্চিমা সাহিত্য পরিচিতি লাভ করে ইউরোপীয় সাহিত্য হিসেবে। ইউরোপীয় ভাষায় পশ্চিমা সংস্কৃতিপুষ্ট হচ্ছে ইউরোপীয় সাহিত্য।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক জন সিয়ার্ল বলেন, পশ্চিমা রীতিনীতিকে মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে একটি বিশেষ পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য যা সাহিত্য জগতে সক্রেটিস থেকে উইটজেনস্টিন এবং হোমার থেকে জেমস জইস পর্যন্ত বিস্তৃত।২

কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঞ্জেলস ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টোতে বিশ্বসাহিত্যের অর্থনৈতিক বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাণিজ্যিক বিনিময় প্রক্রিয়াকে বুর্জোয়া সাহিত্যিক উৎপাদনের বিশ্বজনীনরূপ হিসেবে বর্ণনা করেন। বলা হয়, ‘দেশজ উৎপাদন সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছিলে পুরাতন চাহিদার পরিবর্তে দূরদেশ ও অপরিচিত জলবায়ুতে উৎপাদিত পণ্যের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আমরা নতুন চাহিদা বোধ করি। — এটা বস্তুগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উভয় প্রকার পণ্যের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।’ মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতিতে সৃষ্ট বাইবেল একটি শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে পশ্চিমা সংস্কৃতির রূপদান করে এবং মানবচিন্তা, সাহিত্য ও কলা বিষয়ক ধারণায় উদ্বুদ্ধ করে অনেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সহায়তা করে।

সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে নজরুলের স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বার্ষিক ‘প্রাতিকা’য় প্রকাশিত ‘বর্তমান বিশ্বসাহিত্য’ প্রবন্ধে। এখানে তিনি বলেন, সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্য তাঁর দৃষ্টিতে দুটি ধারায় রচিত হচ্ছে। প্রথমত, ইংলিশ রোমান্টিক কবি শেলী যেমন স্কাইলার্কের মতো যাঁরা নীল আকাশে কল্পনার রঙিন ডানা মেলে দিয়েছেন অথবা মিল্টনের মতো বার্ডস অব প্যারাডাইস হয়ে ধুলোর ধরনী ছেড়ে ঊর্দ্ধাকাশে স্বর্গের সন্ধানে উড়ে বেড়াচ্ছেন, যাঁদের মাটিতে পা পড়ে না। কেবল স্বপনলোকের গান শোনায়। তাঁরা স্বপন বিহারী। তাঁদের দলে আছেন নোগুচি, ইয়েটস, রবীন্দ্রনাথের মতো রথী-মহারথীরা।

দ্বিতীয়ত, যাঁরা মাটির পৃথিবীকে অপার মমতায় আঁকড়ে ধরে আছেন যেমন অন্ধকার নিশীথে ভীত-বিহ্বল শিশু তার মাকে জড়িয়ে থাকে, তরুলতা যেমন শত-সহস্র শিকড় দিয়ে ধরনী মাকে ধরে থাকে। দুঃখিনী ধরনীকে ছেড়ে তাঁরা সুন্দরের স্বর্গালোকে যেতে চান না, তা নয়। তাঁরা চান, স্বর্গ যদি থাকেই তাকে তাঁদের সাধনা দিয়ে ধূলির ধরনীতে নামিয়ে আনবেন। যে পৃথিবী এতদিন তার দাসীবৃত্তি করেছে তাকেই এনে মাটির মায়ের দাসী করবেন। তাঁদের দলে আছেন উইটম্যান, গোর্কি, জোহান বোয়ার, বার্নাড শ’, বেনাভাঁতের মতো রথী-মহারথীরা।

বিশ্বসাহিত্যের এ দুটি চরমপন্থী ধারা ছাড়াও অন্য একটি ধারা তিনি লক্ষ করেছেন যে ধারার কবি-সাহিত্যিকেরা ‘মাটির মায়ের কোলে শুয়ে স্বর্গের কাহিনী শোনে।’ জন্মভূমি তাদের মা ও স্বর্গ হচ্ছে মাসি-মা। মাসি-মা মহারানি। তার বিত্ত-বৈভবের অন্ত নেই। দুঃখ তাকে স্পর্শ করে না। কিন্তু এজন্য তার প্রতি মাটির মায়ের সন্তানদের কোনো ঈর্ষা বা ক্ষোভ নেই। মাটির ঢিল তারা স্বর্গের দিকে ছোঁড়ে না। কেবল নিজেদের বেদনার গান একলা বসে গায়। দুঃখিনী মাকে শোনায়। এদের দলে আছেন লিওনিঁদ, আঁদ্রিভ, ক্লুট হামসুন, ওয়াদিশ্ল, রেমঁদের মতো তৃতীয় ধারার কবি-সাহিত্যিকেরা। তাঁরাও বার্নার্ড শ’, আনাতোল ফ্রাঁস, বেনাভাঁতের মতো হলাহল পান করে নীলকণ্ঠ হয়েছেন কিন্তু সে হলাহল উদগীরণ করেননি।৩

‘বর্তমান বিশ্বসাহিত্য’ প্রবন্ধে নজরুল বিশ্বসাহিত্য বলতে শুধু ইউরোপীয় ভাষায় পশ্চিমা সংস্কৃতিপুষ্ট ইউরোপীয় সাহিত্যের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ রাখেননি। কোনো ভৌগলিক সীমারেখার ধার ধারেননি। আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বময় এর ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়। যথার্থরূপ পরিগ্রহ করে। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কিত তাঁর এ তাত্ত্বিক ধারণা ও মূল্যায়ণ বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। নজরুল স্কাইলার্ক বা বার্ডস অব প্যারাডাইস রূপে কাব্যজগতে আবির্ভূত হননি। তিনি মা-মাটি-মানুষের কবি। দুঃখিনী ধরনীকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। এই ধরনীতে যারা শাসন-শোষণ, জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-উৎপীড়নের মাধ্যমে নারকীয় রাজত্ব কায়েম করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহ। তিনি তাদের উৎখাত করে ধুলির ধরায় স্বর্গীয় শান্তি-সুষমা প্রতিষ্ঠার জন্য সাধনা করেন। তিনি বলেন, প্রথম মহাযুদ্ধের পরের মহাযুদ্ধ শুরু হয় এখান থেকেই।৪

নজরুলের সাহিত্য সাধনাও শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বপর্যন্ত (১৯১৯Ñ১৯৪২)। মাত্র ২৪ বছর। প্রথম বারো বছর তিনি তদনীন্তন বিশ্বসাহিত্যের দ্বিতীয় ধারার কাব্য জগতে উইটম্যানদের মতো বিদ্রোহের আগুন ঝরিয়েছেন এবং শেষ বারো বছর তৃতীয় ধারার সঙ্গীত জগতে নীলকণ্ঠ হয়ে লিওনিঁদদের মতো নিজের বেদনার গান একলা বসে দুঃখিনী মাকে শুনিয়েছেন। (চলবে)

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD