কাশ্মীর ইস্যুর মূল টার্গেট মুসলিম জনগোষ্ঠী

Spread the love

দক্ষিন এশিয়ায় শুধু নয়- সাড়া পৃথিবীতেই ভারতের গণতন্ত্রের সুনাম ছিল দীর্ঘদিন। পাশ্চত্যের বৃটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পরেই প্রাচ্যের ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বলা হয় বিশে^র বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। এমনকি ভারতের একেবারে ঘনিষ্ট প্রতিবেশী পাকিস্তান কেবলমাত্র অগণত্রান্তিক শাসনতন্ত্রের কারণে ভেংগে দু’ভাগ হল। পাকিস্তানের ইতিহাস মানেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সেনা শাসনের ইতিহাস তা সবারই জানা। বিগত অনেক বছর যাবত সে দেশে একই সাথে উগ্রবাদ,জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ ও মৌলবাদ সক্রিয় থাকার ফলে সাড়া দুনিয়ার কাছে পাকিস্তান নিন্দিত হয়েছে, আজো হচ্ছে। পক্ষান্তরে সাংবিধানিকভাবে ভারত একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচিত। যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু জনগোষ্ঠী ভারতে বরাবরই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তথাপি সুদীর্ঘ কংগ্রেসী শাসনামলে এবং জোট সরকারগুলোর রাজত্বকালে ইন্ডিয়ার ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি, বহুত্ববাদী ও গণত্রান্তিক শাসনব্যবস্থা অক্ষুন্ন ছিল আদর্শ হিসেবে। এমনকি এই দুই ক্ষেত্রে আমরা ভারতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতাম আমাদের রাজনৈতিক ও শাসন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কথা বলতে গিয়ে অথবা লিখতে গিয়ে। অর্থাৎ উপমহাদেশে ভারতীয় গণতন্ত্রই ছিল একমাত্র আদর্শ মডেল যা অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় মনে করা হতো। আর ভারত সর্বদাই পাকিস্তানকে ধিক্কার দিতো তাদের অগণতান্ত্রিক, জঙ্গীবাদ এবং মৌলবাদী বৈশিষ্ট্যের কারণে। পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হওয়ার যে মূল তত্ব দ্বিজাতি তত্ব ইতিহাস এই দ্বিজাতি তত্বকে ভুল বলে সাব্যস্ত করেছে। অথচ বিজেপি শাসিত ভারত সেই দ্বিজাতি তত্তকে এতকাল পরে আজ আবারো উসকে দিল। ফলে পাকিস্তানকে যে দোষে এযাবত ভারত দুষে আসছিল কাশ্মীর ইস্যুতে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আজ সে নিজেই সেই কালিমা গায়ে মেখে নিল।

 

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের বর্তমান সরকার পর পর দুই দফায় ক্ষমতায় এসে ভারতের সেই সুদীর্ঘকালের গণত্রান্তিক ও ধর্ম নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বিসর্জন দিতে দিতে এখন হিন্দুত্ববাদের চরম শিখরে উঠে গেছে। তারা ভারতে মুসলিম, খৃষ্টান নির্বিশেষে বিজাতীয় নির্মূলে একেবারে প্লান-পরিকল্পনা তথা ইশতেহার প্রকাশ করে তা উগ্রবাদ-জঙ্গীবাদের সর্বোচ্চ চরম পন্থা বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। শুধু গোরক্ষার নামে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ, বিভিন্ন রাজ্যে এনআরসির অজুহাতে মুসলিম জনগোষ্ঠী বহিস্কার, তিন তালাক প্রথা বাতিল ইত্যাকার অমানবিক, অনৈতিক,অসাংবিধানিক ও বেআইনী কর্মযজ্ঞই চালাচ্ছে না; সর্বশেষ কাশ্মিরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে সেখানে রামরাজত্ব কায়েমের যাবতীয় কার্যকরী ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফেলেছে। তবে এতদিন এই হিন্দু মৌলবাদী দল ও সরকার সে দেশে মুসলিম নির্যাতন  ও হত্যা অব্যাহত রাখলেও  কেবল তাতে তারা তৃপ্ত না হয়ে এবার কাশ্মীরে তাদের বিষাক্ত ছোবল মেরেছে প্রবলভাবে। মোদী মোহিত সরকার এর সপক্ষে যত ছলছুতো আর যুক্তিই তুলে ধরুক না কেন মূল কথা হল কাশ্মীরীদের তথা সেখানকার মুসলিম নিধন যজ্ঞ শুরু করা অথবা কাশ্মীরীদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করে তাধের অস্তিত্ব ও বিকাশের মূলে কুঠারাঘাত করা। বিজেপি সরকার কাশ্মিরকে করতলগত করার যে বিভিন্ন লোকরঞ্জনবাদী যুক্তি দেখাচ্ছে তা আসলে জুয়া ও জাদুকরী ভাষ্য ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা, বিজেপির কাশ্মীর ভূস্বর্গ দখলের লোভের অন্তরালে মুসলিম তকমাটা যে কাশ্মীর থেকে ঝেড়ে ফেলা তা কারো বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।

 

যেমনটি করেছে মিয়ানমার, করেছে ইজরাইল প্যালেস্টাইনীদের ক্ষেত্রে। অতএব আসল টার্গেট এখানে মুসলিম। সুক্ষ্ম ও সুনিপূন কায়দায় ফিলিস্তিনীদের  বিতারণের আদলে ধীরে ধীরে কাশ্মীর থেকে মুসলিমদের নাম চিহ্ন মুছে ফেলে দেওয়া বিজেপী মোড়লদের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। আগামীতে কাশ্মীরে হিন্দু জনগোষ্ঠী  একদা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে। অপরদিকে কাশ্মিরের মূল ধারার ও আদিবাসী মুসলিমরা ক্রমশ হয়ে পড়বে সংখ্যা লঘু। – এই কূট চাল ও চাতুর্য নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। তখন কাশ্মীরীদের নিজস্ব কোন দেশ বা ভূখন্ড থাকবে না। তারা হতে থাকবে নির্মূল ও গণহত্যার শিকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।শুরু করতে বাধ্য হবে অন্যত্র অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমাতে। তখন হিন্দু পন্ডিত ব্রাহ্মনরাই এ রাজ্যের মালিক বনে যাবে যা এতদিন তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকার ভীষণভবে  বিশেষত মুসলিম বিদ্বেষী। “ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি”ভারতের ক্ষেত্রে সে কথা এখন আর খাটে না। সেখানে প্রধান প্রাধান্যকারী হিন্দু ধর্মীয় আদর্শ-মতবাদ সংকীর্ণ  সাম্প্রদায়িক মৌলবাদে রুপ নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তিলে তিলে মারার অথবা সে দেশ থেকে তাড়াবার নীল নকশা নিয়ে এগিয়ে চলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না যেমনটি করেছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মান্ধরা রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বেলায়। কারণ ভারত জানে, পাকিস্তান যত  তর্জনগর্জন করুক না কেন তার শক্তি ভারতের চেয়ে খুব বেশী নয় এক মাত্র পারমানবিক অস্ত্রধারীর পরিচিতি ছাড়া । এছাড়া ভারত তার দাদাগীরি প্রতিপত্তির সুবাদে  প্রতিবেশী কোন দেশকেই গুনবে বা গ্রাহ্য করবে না সেটা সবাই জানে। আর জাতিসংঘ সে তো বহু দিন হলই সাক্ষী গোপাল, নখ দন্তহীন নেকড়ে। ভোটপ্রদানকারী সুপার পাওযারগুলোর বাইরে তার নিজস্ব কোন কর্তৃত্ব নাই। ফলে সেখানে কাশ্মীরীদের ন্যায্য বিচার বা  কার্যকর সমর্থন পাওয়া দুরাশা মাত্র । এখন কেবলি অপেক্ষা করতে হবে বিজেপি তার নিজের ঘরে যে জাতিবিদ্বেষী আগুন লাগিয়েছে তার বিস্তার ও লেলিহান শিখা আরো কতদূর পর্যন্ত পৌছে তা দেখতে। অপরদিকে কাশ্মীরের গণমানুষের ভাগ্য যে গভীর সংকট ও অন্ধকারে নিপতিত হল তার সর্বশেষ পরিণতি দেখার জন্য প্রতীক্ষা করতে হবে বিশ^বাসীকে হয়তো আরো বহুকাল।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD