তাড়াশ সদরে একটিও খেলার মাঠ থাকলো না

Spread the love

আমাদের সন্তানেরা মাদক গিলছে। মাস্তানী-জঙ্গী-সন্ত্রাসে যোগ দিচ্ছে। ইয়াবা খাচ্ছে। খুন ধর্ষণ, ইভটিজিংয়ে লিপ্ত হচ্ছে। ক্রমশ প্রায় সর্বক্ষণ অনলাইনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পারিবারিক শিক্ষা ও সাহচর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আরো নানা রকম নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রজন্মের এই অবনতিশীল পরিস্থিতিরর জন্য দায় কার বা দায়ী কে।
শিশু-কিশোর-তরুণ যুবকেরা শৈশবেই মাতে খেলাা ধুলায়। ক্রীড়া বা খেলা হচ্ছে মানুষের প্রাকৃতিক ও মৌলিক চাহিদা। একটি তরুণ কিংবা যুবক খেলাধুলার জগতে নিজেকে মেলাতে না পারলে সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায়। আরো একটু সোমত্ত হলে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বিনোদনমূলক চর্চ্চার মাঝে সে নিজেকে সমর্পণ করে থাকে। এতে করে তার শারিরিক,মানসিক,সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক মননশীল বিকাশ সম্ভব হয়। জীবনে সে নীতি-আদর্শ সেবা ও কল্যাণের মানবতাবাদী পথে উত্তরণের প্রেরণা পায়। এমন সব নাগরিক আমাদের দেশ ও সমাজের অমূল্য সম্পদ। এই তারুণ্যদীপ্ত মানুষ যৌবনের শুদ্ধাচার অনুশীলন করে সভ্য দেশ ও উন্নত জাতী গঠনের অপরিহার্য উপাদান বা চাবিকাঠি রূপে গণ্য।
অথচ আমাদের সমাজ মানস চলছে কোন পথে। আজকে তাড়াশে একটিও খেলাধুলার মাঠ থাকলো না। কোথায় যাবে আমাদের তরুণ-যুবারা । তাদের নিশ^াস ফেলার জায়গা কোথায়? তাদের আড্ডার মিলন স্থল আর অবশিষ্ট থাকলো কি? ছোট বেলায় গোটা তাড়াশ বাজারটিকে আমরা খেলাধুলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। স্বাধীনতার উত্তাল গণআন্দোলনের দিনগুলিতে এই বাজার খেলার মাঠে ছিল যত সংগ্রাম আন্দোলনের সূচনা। ছোট-বড় কত গণজামায়েত ও সমাবেশ হতে দেখেছি এখানে। তাড়াশে স্থানীয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের তীর্থভূমি বা সূতিকাগার এই খেলার মাঠ। বছরের অন্য সময় তথা বর্ষাকালে চলতো জমজমাট ফুটবল খেলা। ক্রীড়া,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও গণ সমাবেশের জন্য পুরো এই মাঠ থাকতো প্রায় সদা-সর্বদা সরগরম।
সেই মাঠ পুরোটাই আজ তাড়াশ বাজার। বহু দোকাানপাট গ্রাস করে ফেললো একটি মুক্ত খেলার মাঠ। তখন এ মাঠেরই দক্ষিণ পাশের্^ ছিল পুকুর। তার পূর্ব পাশের্^ হিন্দু জমিদার বাড়ী। সেই পুকুর ধীরে ধীরে ভরাট করে ও পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ী দখলে নিয়ে আজকের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। সে সময়ে তাড়াশের তহশিল অফিস ছিল তাড়াশ জামে মসজিদের পূর্ব প্রান্তে। সে অফিস চলে আসে পাশের মাঠের পূর্ব কোনে। তৎকালে এটা গোটাই ছিল খেলার মাঠ। অর্থাৎ আগের বাজার হওয়া মাঠের পরিবর্তে এটা সদরের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। কালক্রমে আজ সেখানে হ্যালি প্যাড, ঈদগাহ মাঠ ও ভূমি অফিস গড়ে উঠেছে। এ মাঠের উত্তর প্রান্ত অনেকেই দখলে নিয়ে আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে চলেছে। ফলে তাড়াশের সর্বশেষ এই খেলার মাঠটিও চলে গেলো মানুষের অন্য নানা প্রয়োজনীয় তালিকায়। গড়ে উঠলো স্থাপনা। তাড়াশে আর একটিও খেলাধুলার মাঠ অবশিষ্ট থাকলো না। তাড়াশ উপজেলা সদর পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত। রয়েছে বহুবিধ অফিস, শিক্ষা ও সামাাজিক প্রতিষ্ঠানসহ হাটবাজার ইত্যাদি সবই আছে। এখন কেবল নাই কোনো সভা সমাবেশ এবং খেলাধুলার একটি প্রশস্থ মাঠ।বর্তমানে বিভিন্ন সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাড়াশ ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে। কিন্তু শিক্ষালয়ের ক্যাম্পাসে এসব হওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এছাড়া তাড়াশ সদরের আর কোথাও এতটুকু খোলা মাঠ নেই যেখানে একটি বড় গণজামায়েত বা জনসমাগম হতে পারে।
বিশেষত: আমাদের তরুণ প্রজন্মের খেলাধুলার জন্য কোন জায়গা না থাকায় তারা ক্রমশ নানা প্রকার বিপথে ও বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়বে তা অসম্ভব নয়। আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দের এই দিকটা উপেক্ষা করা আদৌ সমিচিন হয়েছে বলে মনে হয় না। তারা স্টেডিয়ামের কথা বলছে যা তাড়াশের কোন প্রান্তে মাঠের ধারে হতে পারে। এমনিতে তাড়াশে বসে আড্ডা দেয়ার মত উপযুক্ত স্থান নেই। লাইব্রেরী, ক্লাব কোথাও ভালো কিছু নেই। অপরদিকে খেলার মাঠও হারিয়ে গেল চিরতরে। এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশ আমাদের সমাজের জন্য আদৌ স্বাস্থ্যকর নয়, সুখ, শান্তি ও স্বস্তি বয়ে আনবে না। নতুন প্রজন্মের আনন্দ বিনোদনের অবকাশ না থাকলে তার পরিণাম কী ভয়াবহ হবে ইতোমধ্যেই আমরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আগামীতেও এর ফলাফল ভোগ করতে হবে আমাদের সবাইকে, সন্দেহ নেই। আফসোসের ব্যাপার হলো, সে জন্য আমাদের সন্তানদের আমরা দোষ দিতে পারবো না। কারণ এর জন্য আমাদের সমাজ ও দেশ পরিচালকেরাই সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD