দেশে আবার হাহাকার শুরু হয়েছে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার হেতু। সাড়া দেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ, আলোচনা, দাবি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি ইত্যাকার প্রায় প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কৃষি প্রধান দেশে ধানের ন্যায্য দামের জন্য কৃষককে পথে নামতে হবে এটা দু:খজনক। একদিকে সরকার নির্ধারিত যথাযথ মূল্য কৃষককে দেয়া হচ্ছে না , অপরদিকে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান না কিনে দালাল , ফরিয়া, মিলারদের সিন্ডিকেটে আটকা পরেছে সরকারী দপ্তরগুলো। ধানের ভাল দাম না পেলে কৃষক তথা আপামর জনগনের নানা দুর্দশা দেখা দেয়। কারণ ধানের বাজার মূল্যের সাথে কৃষকের তথা দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য জড়িত। আবার দেশের সকল সেক্টরে স্বচ্ছলতা ও সমৃদ্ধি বিরাজ করলেও কৃষকের মাথায় হাত, অথবা দিশেহারা কিংবা কৃষকের সর্বনাশ হবে এটা কল্পনাও করা যায় না। স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের শোষণ করতো পশ্চিমারা। তখন সে বঞ্চণার জন্য তাদের দায়ী করা হতো। এখন আমাদের এই বৈষম্য এবং অন্যায্যতার জন্য কাকে দায়ী করা যাবে। বলা হয় কৃষক দেশের প্রাণশক্তি, মূল মেরুদন্ড। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। অর্থনীতির সিংহভাগ এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ দেশে কৃষকের সন্তান নয় এমন কাকে পাওয়া যাবে। তাহলে কৃষি ও কৃষকের প্রতি এই অবহেলা, উপেক্ষা কেন? ধানের অত্যধিক ফলন এটা আল্লাহর রহমত ও বরকত, আমাদের জন্য শুভ লক্ষণ। এই নেয়ামতের শুকরিয়া করে এটাকে অবশ্যই ভারসাম্যপূর্ণভাবে ম্যানেজ করা সরকারের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের কর্তব্য। কৃষক যেন হতাশাগ্রস্থ না হয়, দু:খ না পায়, অপমানিত বোধ না করে তা খেয়াল করা সরকারের দায়। কৃষকের লাভ ও মুনাফা মানে দেশের লাভ, দেশের উন্নতি। কৃষকের সুখেই জাতির সুখ। তাদের শান্তি মানেই দেশের স্বস্তি ও শান্তি। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং তৎপরবর্তী অর্জন-সাফল্য সব কিছুর মূলে কৃষক। এই দেশ যেমন নদনদীর দেশ তেমনি কৃষি ও কৃষকের দেশ। কৃষক আমাদের মাতা, কৃষক আমাদের পিতা। দেশের সকল নেতা, নিয়ন্ত্রক ও কৃতি সন্তান কৃষকের পরিবার থেকে জন্ম লাভ করেছে। আমাদের সমস্ত স্বপ্ন কৃষককে ঘিরে । তারা ভাল না থাকলে আমাদের উন্নতি-অগ্রগতি অর্থহীন। কৃষক এ জাতির প্রকৃত পাল্স। তাদের চাওয়া-পাওয়াকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই সকল চক্রান্ত, কারসাজি ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে কৃষকের ধানসহ সকল উৎপাদিত পণ্যের শুধু ন্যায্য মূল্য নয় , সম্ভব হলে উচ্চ মূল্য দিয়ে তাদের সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। তাদের জীবনযাত্রাকে প্রশান্তিপূর্ণ ও সুখময় করাই আমাদের সকল প্রয়াসের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে সময় নষ্ট বা টালবাহানা না করে অবিলম্বে ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সরকারের জরুরী কর্তব্য। রাষ্ট্র এ দায় এড়াতে পারে না, বরং শতভাগ দায় সরকার ও রাষ্ট্রের। বর্তমানে এটাকে বিশেষ জরুরী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখতে হবে। আর যত তাড়াড়াড়ি এর সমাধান হয় জাতির জন্য ততই মঙ্গল । কেননা, তাদের চোখে জল ও বুকে কান্না আমরা দেখতে চাই না , এটা কাম্য , শোভনীয় এবং সহনীয় নয় !