প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশের এক বিশাল রত্নভান্ডার বা রত্নখনি ঐতিহাসিক চলনবিল। এই ঐতিহ্যবাহী জলাভূমির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। চলনবিলকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে কত ইতিহাস, কত কাহিনি, সাহিত্য এবং গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র সমৃদ্ধ কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। এটা বিশেষত উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম খাদ্য ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। এর বিশালতা এক সময় ছিল ছোটখাটো রাজ্যের মতো। এটা উপমহাদেশের বৃহত্তম বিল। দেশে হাওরের যেমন পরিচিতি , চলনবিলের তেমনি সুনাম ও প্রসিদ্ধি। জলবায়ু পরিবর্তন এর দরুন আর মানুষের লোভ-লালসার আগ্রাসনে সেই চলনবিল আজ মৃত প্রায়। বিলের মধ্যের অসংখ্য নদ-নদী, খাল, নালা, জলাশয়, প্লাবনভূমি আজ বিলীনের পথে। এসবের পরিণামে চলনবিলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষের জীবনজীবিকায় পরিবর্তন ঘটে চলেছে। প্রকৃতির নানা বিরূপ প্রতিফলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঠিক এমনি দুর্দশাজনক পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালে চলনবিলের এক কৃতি সন্তান , চিত্তে-মননে সংগ্রামী চেতনার বিপ্লবী সমাজকর্মী চাটমোহরের মো. মিজানুর রহমানের ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে গোটা চলনবিলে শুরু হল বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলন ও সেই সাথে চলনবিল রক্ষা আন্দোলন। এক দশকের সে আনোলন বহু চড়াই-উৎড়াই পেড়িয়ে আজ একটা যুগসন্ধিক্ষণে উপণীত হয়েছে। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ মন্তণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক অনমোদিত ৬ দফা সুপারিশ বড়াল রক্ষা আন্দোলনের শেষ ভরসা। আমরা মনে করি এই সুপারিশ যত দ্রুত বাস্তবায়ন হয় চলনবিলের জন্য ততই মঙ্গল। কেননা, আমরা বিশ্বাস করি বহকাল ধরে বিধ্বস্ত হওয়া চলনবিলের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ধারিত হবে বড়ালকে ফিরে পাওয়ার ওপর। বড়াল যদি তার অস্তিত্ব তথা প্রবাহমানতা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়, বড়াল আন্দোলন পায় সফলতা ; তবে বাদবাঁকী চলনবিল রক্ষার আন্দোলন নি:সন্দেহে এগিয়ে যাবে, বাড়বে সাহস এবং উদ্দীপনা , হতে পারে স্বার্থক , আসতে পারে আরো অনেকখানি সাফল্য তা আশা করা অমূলক হবে না। পরিশেষে আমরা সংগ্রামী মিজান ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য কামনা করি, কারণ তাকে আমাদেরকে সাথে নিয়ে যেতে হবে আরো অনেক দূর। জয়তু বড়াল রক্ষা আন্দোলন !