ভাঙ্গুড়ায় অন্যরকম সংবর্ধনা

Spread the love

ভাঙ্গুড়া থেকে মনিরুজ্জামান ফারুক ও মাসুদ হাসান ঃ গভীর রাত। সবাই ঘুমিয়ে । কেবল ঘুম নেই ওদের চোখে! ওপারে কে যেন এসে ডাকছে ‘ও দাদা ,পার করে দিয়ে যাও’। নদীর এপার আর ওপার করতে করতে কেটে গেছে দীর্ঘ ৩০ বছর। দুই সহোদর বিমল (৫০) ও সাধন (৪০) । পেশায় তারা ঘাটমাঝি। চলনবিলের ভাঙ্গুড়া উপজেলার নৌবাড়িয়ায় গুমানী নদীর ঘাট মাঝি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তারা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন । বিমল ও সাধন পাশের চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের নিমাইচড়া গ্রামের পাটুনী রামপ্রসাদের ছেলে। নৌকায় মানুষকে পারাপার করে দিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়েই চলতো তাদের সংসার। পূর্ব পুরুষদের এ পেশা সযতেœ এতো দিন আঁকড়ে ধরে ছিলেন তারা। কিন্তু এলাকাবাসির দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে নৌবাড়িয়া ঘাটে সম্প্রতি নৌবাড়িয়া ব্রিজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখন আর নৌকায় পারাপারের প্রয়োজন নেই। ব্রিজটি দিয়েই চলছে মানুষ ও যানবাহন। আর এতেই যেন কপাল পুড়েছে বিমল আর সাধনের! গত রোববার বিকালে এক ব্যতিক্রমধর্মী বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৌবাড়িয়া গ্রামের যুবসমাজ। নবনির্মিত নৌবাড়িয়া সেতু চত্বরে দুই সহোদর ঘাটমাঝিকে জানানো হয় আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা। গ্রামের শত,শত মানুষ অংশ গ্রহণ করে ঘাটমাঝিদের এ বিদায় অনুষ্ঠানে। সেই সাথে তাদের দু’জনকে দুইটি অটোভ্যান দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়। এক সময়ের বিপদের বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই যেন গ্রামবাসির এই উদ্যোগ । অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সমাজসেবক আহম্মেদ মাজহারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাদের হাতে অটোভ্যানের চাবি তুলে দেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল হিরোক। এছাড়াও গ্রামবাসির সহায়তায় দুইজনকে লুঙ্গি,গামছা ও তাদের স্ত্রীদেরকে একটি করে শাড়ী কাপড় উপহার দেওয়া হয়। আখিরুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ওয়াজেদ আলী, ফিরোজ আহম্মেদ, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুব-উল-আলম প্রমুখ। বক্তারা, দুঃসময়ের বন্ধু বিমল ও সাধনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন কর্মজীবনে ভালো থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সাথে তাদেরকে আজীবন নৌবাড়িয়া গ্রামের সমাজভুক্ত বলেও ঘোষনা দেন। ঘাটমাঝি সাধন জানান, এটি তাদের পিতৃ পেশা । এতো দিন অতি সযতেœ ধরে রেখেছিলাম। এভাবেই কখন যে কেটে গেছে জীবনের ৩০ টি বছর তা বুঝতেই পারেনি। এখন নতুন অটোভ্যান পেয়ে বেশ ভালোই লাগছে ।’ পারাপারের জন্য গুমানী নদীর ওই ঘাটে হয়তো আর কোন দিন নৌকার প্রয়োজন না হলেও বৃহত্তর এলাকার মানুষ চিরদিন মনে রাখবে তাদের বিপদের বন্ধু বিমল আর সাধনকে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD