রুপা হত্যার বিচার শেষ হবে কবে

Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি: দেখতে দেখতে বিচারের দীর্ঘ সুত্রিতায় পেরিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। তারপরও চাঞ্চল্যকর চলন্ত বাসে মেধাবী কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণ ধর্ষন ও হত্যা মামলায় বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। আর গত তিনটি বছর বিচারের আশায় বুক বেঁধে থাকা রুপার বৃদ্ধ মা হাসনা হেনা মেয়ে হত্যার বিচার তার জীবনদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন এমন আশা ছেড়েই দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
অপরদিকে রুপা হত্যা মামলার বাদী রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামানিক তার প্রিয় বোনের হত্যা মামলার দীর্ঘ সুত্রিতা নিয়ে তিনি রীতিমত হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান ,বিচারের আশায় বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়েও কিছুই করতে পারছিনা । পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম রুপাকে হারিয়ে শোকাহত পরিবারটি নি¤œ আদালতে স্বল্প সময়ে বিচার পেয়ে আশস্ত হয়েছিলেন যে, রুপা হত্যার বিচার দ্রুত শেষ হবে । কিন্তু হাইকোর্টে গত দুই বছর নয় মাস যাবৎ আপিল শুনানি শুরু না হওয়ায় চাঞ্চল্যকর রুপা গনধর্ষন ও হত্যা মামলা কবে শেষ হবে তা নিয়ে ওই পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজন রীতিমত হতাশ হয়ে পড়েছেন ।
তাড়াশ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন ,চাঞ্চল্যকর রুপা হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে আপিল শুনানীতে আটকে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। আবার হাইকোর্টে আপিল শুনানী শুরু হলেও মামলার আরও পর্যায়গুলো পেরুতে সময় লাগবে। দুঃখ জনক হলেও সত্য দীর্ঘ সময়ে মামলাটির স্থবির অবস্থা আমদেরকেই ভাবিয়ে তুলছে । আর রুপার পরিবারের সদস্যদের বিচারের দীর্ঘ সুত্রিতায় হতাশা প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক।
জানা গেছে, গত দুই বছর নয় মাস মাস যাবৎ হাইকোর্টে ঝুলে আছে রুপা গনধর্ষন ও হত্যা মামলার আপিল শুনানি। আপিল শুনানী প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলে নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিশেষ পিপি নাসিমুল আক্তার নাসিম জানান, নি¤œ আদালতে রায় ঘোষণার পর আসামীদের মৃত্যুদন্ড হলে তার নথিপত্র দ্রুততম সময়ে মহামান্য হাইকোর্টে চলে যায়। পরে আপিল হলে তা কার্য তালিকায় আসলে পযায়ক্রমে আপিল শুনানী হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যকর রুপা গণ ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আপিল শুনানী হয়তো এখনো মহামান্য হাইকোর্টের কার্য তালিকায় আসেনি। তাই শুনানিও শুরু হয়নি। বিষয়টি সম্পুর্ণ মহামান্য আদালতের এখতিয়ার।
রুপা হত্যা মামলার বাদী রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন,গত ৩ বছরেও আমার বোনের হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। আর এবছরও চলে যাচ্ছে। অথচ রুপা হত্যার পরে বিভিন্ন স্তরের নেতারা মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মহোদয় বেঁচে থাকলে হয়তো মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের সহযোগীতা করতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে এই দু:সময়ে আমাদের অসহায় পরিবারের পাশে পাওয়া যাবে না।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামের মৃত.জেলহক প্রাং এর মেয়ে মেধাবী তরুণী রুপাকে চলন্তবাসে গণধর্ষণ পূর্বক নির্মমভাবে হত্যা করে পরিবহণ শ্রমিকরা।
পরে চলন্ত বাসেই তাকে হত্যা পর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। পরে খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রুপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় গণ ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরের দিন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রুপার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে ছোট বোন রুপার লাশ শনাক্ত করেন।
২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর এবং চালক হাবিবুর ও সুপারভাইজার সফর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আরো জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী টাঙ্গাইলে নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া রুপা হত্যা মামলার রায়ে ৪ আসামীর ফাঁসি ও ১ জনের ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানার রায় ঘোষণা করেন।
এদের মধ্যে ময়মনসিংহের ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) কে ফাঁসি ও সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) কে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানার আদেশ দেন । এছাড়া ছোঁয়া পরিবহণের ওই বাসটি রুপার পরিবারকে ক্ষতি পুরণ হিসেবে প্রদানেরও আদেশ প্রদান করা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামী খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। তার পর চাঞ্চল্যকর ওই মামলায় আপিল শুনানি আজও শুরু হয়নি বলে জানান মামলার বাদী রুপার বড়ভাই হাফিজুর রহমান প্রামানিক। তিনি আরো জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতে আমরা দ্রুততম সময়ে ১৭১ দিন পর টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলার রায় ঘোষনায় সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামীপক্ষের আপিলের পর মামলাটি দীর্ঘ সময়ে শুনানি না হওয়ায় অসহায় বোধ করছি ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD