সামান্য ভিক্ষুকের জন্য অসামান্য দোয়া

Spread the love

গোলাম মোস্তফা : তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের বাসিন্দা শুকুর আলী ওরফে শুক্রা মিঞা। তার বাবার নাম মৃত হারান আলী ফকির। শুকুর আলী মানুষের দ্বারে-দ্বারে ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পঁচাশি বছর বয়সে সপ্তাহ খানেক আগে তিনি মারা যান। (১৯ ডিসেম্বর) শনিবার বাদ যোহর তারই রুহের মাগফিরাত কামনায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে কয়েক হাজার লোকের দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ঐ গ্রামবাসী।
মাগুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবাহান, উপজেলা কৃষকলীগের দপ্ত সম্পাদক ফেরদৌস জামান বাচ্চুসহ অনেকে বলেন, জমি জমাহীন অতি দরিদ্র শুকুর আলী দিন মজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে ও অসুস্থতার দরুণ তিনি হাত পেতে খাওয়া শুরু করেন। তার সব থেকে বড় গুণ ছিলো, “ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিয়ে চলতেন। তাকে আগে কেউ সালাম দিতেই পারতেন না। সব মানুষকে তিনি হাত ধরে বলতেন, মাফ করে দেবেন, বলা তো যায়না, কে কখন মারা যাই।” মূলত একজন মানুষের প্রতি অনেক ভালোলাগা, গভীর ভালবাসা ও যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ থেকেই বড় পরিসরে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
গ্রামের লোকজন আরো বলেন, মাগুড়া গ্রামে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। সাধ্যমতো যে কয়টাকা পেরেছেন শুকুর আলীর দোয়া অনুষ্টানে দিয়েছেন। আশপাশের গ্রামের লোকজন মিলে প্রায় পাঁচ হাজার জন তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেছেন। সর্বপরি দোয়া শেষে সবাইকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে। পাশের দিঘী সগুনা গ্রাম থেকে শুকুর আলীর জন্য দোয়া করতে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফছার আলী, মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল ও রজব আলী প্রামানিকসহ অনেকেই। তারা জানিয়েছেন, তাদের গ্রামেও ভিক্ষা করতে যেতেন শুকুর আলী। তার ব্যবহার ছিলো শিক্ষণীয়।
শুকুর আলীর ছেলে সিদ্দিকুর রহমান ও মেয়ে শুকজান খাতুন বলেন, তীব্র অভাবের তারনায় তাদের বাবা সাহায্য চেয়ে খেতেন। তারই প্রতি মানুষের এমন ভালবাসা জন্মেছে তা ভাবাই যায়না, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে এক হাজার টাকা ব্যয় করার সামর্থ যাদের নেই, তাদের বাবার দোয়া অনুষ্ঠান হলো প্রায় দুলাখ টাকা খরচ করে।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুড়া গ্রামের মাদ্র্রাসা মাঠে ও ঈদগাহ্ ময়দানে বসে দোয়া করছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ কয়েক হাজার মানুষ। গ্রামের মেয়েরাও আলাদা স্থানে এ দোয়ায় শরীক হয়েছিলেন। দোয়া শেষে সবাই খিচুরি খেতে বসেন। কিন্তু নির্দিষ্ট ছামিয়ানার মধ্যে স্থান সঙ্কুলান হওয়ায় অনেকে সুবিধা মতো স্থানে খেতে বসে যান। শুকুর আলীর দোয়া অনুষ্ঠানে শরীক হয়ে মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মৃত্যুর আগে বা পরে হোক, মানুষ মানুষের জন্য, এটাই তার উজ্জল দৃষ্টান্ত।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD