সীরাত সিরিজ  (পর্ব – ২১)

Spread the love

 রাসূল (ﷺ) এর চেহারা মুবারক আহত হওয়া

মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ 
কুরাইশদের প্রখ্যাত বীর আবদুল্লাহ ইবনু কুমাইয়া সেনাদের সারি ভেদ করে সামনে এগিয়ে যায় এবং রাসূল (ﷺ) এর চেহারা মুবারকে ত/রবারি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। ফলে রাসূল (ﷺ) এর মাথায় পরিহিত শিরস্ত্রাণের (লোহার টুপি) দুটি কড়া মুখ ভেদ করে ঢুকে যায় এবং একটি দাঁত শহিদ হয়। তখন আবু বকর রা. শিরস্ত্রাণের কড়া দুটি ক্ষতস্থান থেকে ওঠাতে এগিয়ে এলে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা. বলেন, ‘আল্লাহর কসম, এ খিদমতটি আমাকে করার সুযোগ দিন।’ তিনি সামনে এগিয়ে গিয়ে হাত না লাগিয়ে নিজের মুখ দিয়ে সেই কড়া দুটিতে টান দেন। এতে করে যদিও একটি কড়া বেরিয়ে আসে; কিন্তু এর সঙ্গে আবু উবায়দা রা. এর একটি দাঁতও উপড়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে আবু বকর রা. দ্বিতীয় কড়াটি বের করতে সামনে এগিয়ে এলে তখন আবু উবায়দা রা. আবারও কসম দিয়ে তাঁকে বিরত রাখেন এবং নিজেই তাতে মুখ লাগিয়ে টান দেন। এবারও তাঁর আরেকটি দাঁত উঠে আসে!(১৪৮)
এ সময় কা/ফিরদের তৈরি একটি গর্তে রাসূল (ﷺ) পড়ে যান। মুসলিমদের ভূপাতিত করতেই তারা এটা খুঁড়েছিল।
🟩 সাহাবিদের আত্মত্যাগ
এ অবস্থা দেখে প্রাণোৎসর্গকারী সাহাবিরা রাসূল (ﷺ) কে চারদিক থেকে ঘিরে দাঁড়ান। তখন তরবারির ঝনঝনানি ও তীরবৃষ্টি হচ্ছিল। সাহাবিরা ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে সেগুলো নিজেদের শরীরে বিদ্ধ করতে থাকেন। আবু দুজানা রা. তো নিজেকে রাসূল (ﷺ) এর ঢাল বানিয়ে রাখেন। এদিকে কা/ফিরদের নিক্ষিপ্ত তীরগুলো তাঁর শরীরে বিদ্ধ হতে থাকে। তালহা রা.ও তীর-তরবারির আঘাতগুলো নিজের শরীর দিয়ে প্রতিহত করছিলেন। ফলে তাঁর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।(১৪৯) যু/দ্ধ শেষে হিসাব করে দেখা যায়, তালহা রা. এর শরীরে ৭০টিরও বেশ আঘাত রয়েছে!(১৫০)
আবু তালহা রা. একটি ঢালের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) কে হিফাজত করছিলেন। রাসূল (ﷺ) যখনই ঘাড় উচিয়ে সেনাদের দিকে তাকাতেন, তখন আবু তালহা রা. বলতেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি মাথা ওঠাবেন না। শত্রুরা নিপাত যাক। আপনার শরীরে যাতে কোনো তীর না লাগে, এ জন্য আপনার আগে আমার বুক প্রস্তুত রয়েছে।’
এ সময় এক সাহাবি এসে রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, যুদ্ধে যদি আমি নিহত হই, তাহলে অবস্থান কোথায় হবে?’ তিনি বলেন, ‘জান্নাত।’ এই সাহাবির হাতে তখন কয়েকটি খেজুর ছিল এবং তিনি সেগুলো খাচ্ছিলেন। রাসূল (ﷺ) এর এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে সোজা যুদ্ধের ময়দানে চলে যান এবং বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন।(১৫১)
এদিকে কুরাইশের হতভাগারা রাসূল (ﷺ) এর ওপর নির্দয়ভাবে তির নিক্ষেপ করছিল; কিন্তু রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র জবানে তখন উচ্চারিত হচ্ছিল,
اللهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون
হে আল্লাহ, তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। তারা তো জানে না।
রাসূল (ﷺ) এর চেহারা মুবারক থেকে তখনো রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল; আর রহমতের রাসূল (ﷺ) তাঁর চেহারা থেকে সেই রক্ত মুছে নিচ্ছিলেন। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যদি এই রক্তের একটি ফোঁটাও মাটিতে পড়ত, তাহলে সবার ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসত। ‘(১৫২)
এদিকে রাসূল (ﷺ) এর দৃঢ় অবস্থানের কারণে কা/ফিররা যু/দ্ধের ময়দান ছেড়ে চলে যায় এবং ঘোষণা দেয়, আগামী বছর বদরে আবার মুসলিমদের সঙ্গে যু/দ্ধ হবে।
এ যু/দ্ধে মুসলিমদের পক্ষে ৭০ জন শহিদ হন; আর কা/ফিরদের পক্ষে মাত্র ২২ বা ২৩ জন নিহত হয়।
🟩 বিরে মাউনা অভিমুখে সারিয়ায়ে মুনজির
এ বছরই সফর মাসে রাসূল (ﷺ) ৭০ জন সাহাবির এক বাহিনীকে নাজদের লোকদের কাছে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পাঠান। এ বাহিনীতে বিখ্যাত অনেক আলেম ও ক্বারী সাহাবি ছিলেন।
এ বাহিনী নাজদে পৌঁছে দেখতে পায়, সেখানে আমির, রা’ল, জাকওয়ান ও আসাইয়া গোত্রের লোকেরা তাঁদের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই হয় এবং ঘটনাক্রমে সকল সাহাবিই শহিদ হয়ে যান। রাসূল (ﷺ) কাছে যখন মর্মন্তুদ এ ঘটনার সংবাদ পৌঁছায়, তখন তিনি এতই ব্যথিত ও মর্মাহত হন যে, এই ৭০ জন সাহাবির হ/ত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কয়েকদিন ফজরের নামাজে বদদুআ করতে থাকেন।(১৫৩)
এ বছরের শাওয়ালে হাসান রা. জন্মান এবং উম্মু সালামা রা. রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবন্ধ হন।
টীকা :
(১৪৮) ইবনু হিব্বান, দারা কুতনি, তাবরানি ইত্যাদি। কানজুল উম্মাল : ২/২৭৪।
(১৪৯) সহিহ বুখারি।
(১৫০) ইবনু হিক্যান, দারা কুতনি, তাবরানি ইত্যাদি; কানজুল উম্মাল: ৫/২৭৪।
(১৫১) সহিহ বুখারি, গাজওয়ায়ে উদ্বুদ অধ্যায়।
(১৫২) ফাতহুল বারি: ১৬/৪৮, গাজওয়ায়ে উদ্বুদ অধ্যায়।
সিরাতে মুগলতাই : ৫২।
লেখা : বই – সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া ﷺ ; পৃষ্ঠা : ৯৭-৯৯
লেখক : মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)
অনুবাদক : ইলিয়াস মশহুদ
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD