খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ( সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি )
ঈদকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিগুলো এখন কর্মমুখর হয়ে পড়েছে। দুই বছর করোনার সংকটের পর তাঁতমালিকেরা এবার চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। ইতিমধ্যে তাঁতপণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলার সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা আসতে শুরু করেছেন এবং তাঁতমালিকদের আর্ডার দিচ্ছেন তাদের পছন্দের কাপড়ের জন্য। ইতিমধ্যে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত কারখানাগুলোও চালু করা হয়েছে।
দিন-রাত কাজ করে ব্যাপারীদের চাহিদামতো কাপড় তৈরি করছেন তাঁতমালিকেরা। দুই বছরের তুলনায় এ বছর চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান তাঁতমালিকেরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে মন্দাভাব ইতিমধ্যে কেটে গেছে। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার তাঁতপল্লি। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কেউ তাঁতে শাড়ি বুনছেন, কেউ সুতা রং করছে, আবার কেউ চরকায় সুতা তুলছেন। এদিকে পুঁজির সংকটে অনেক তাঁতমালিক চাহিদামতো শাড়ি, থ্রিপিস ও লুঙ্গি সরবরাহ করতে পারছেন না বলে তাঁতসংশ্লিষ্টরা জানান।সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের তাঁতমালিক সাহাব উদ্দিন বলেন, করোনার পর এবার অন্য বছরের তুলনায় শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। দিনদিন এই অর্ডার বেড়ে চলেছে। তিনি আরো জানান, তার কারখানায় শ্রমিকেরা দিনরাত কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাদের কাছে প্রায় কোটি টাকার অর্ডার এসেছে। প্রতিদিনই অর্ডার আসছে।
কাপড়ের পাইকার ইসমাইল হোসেন জানান, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস কিনে তিনি নীলফামারী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, করটিয়া, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন। বড়দের শাড়ি, থ্রিপিস ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনে মার্কেটে বিক্রি করা হয়। বেলকুচি এলাকার তাঁতমালিক আব্দুল আলিম বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে কোনো ব্যবসা ছিল না। আবার ব্যবসা শুরু হয়েছে। আশা করি করোনার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’ একই এলাকার তাঁতশ্রমিক আব্দুল্লাহ, শহিদুল, জাকারিয়া বলেন, ‘গত দুই বছর খুব কষ্টে দিন পার হয়েছে। তাঁত কারখানা চালু হওয়ায় সেই কষ্ট দূর হবে আশা করছি। এবার ঈদে অন্তত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারব।’বেলকুচি উপজেলা হস্ত অ্যান্ড পাওয়ার লুম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্যনাথ রায় জানান, করোনা কাটিয়ে এ বছর তাঁত কারখানাগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রচুর অর্ডার আসছে। ইতিমধ্যে বাইরের পাইকাররা এখানে এসে অর্ডার দিচ্ছেন। এতে তাঁতমালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে উত্সবের আমেজ শুরু হয়েছে। এ বছর জেলায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার তাঁতপণ্য বিক্রির আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
|