বিলুপ্তির পথে  শিমুল গাছ

Spread the love

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিলুপ্ত হতে চলেছে প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধনকারী শিমুল (তুলা) গাছ। বসন্ত এলেই প্রকৃতিপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে থাকে শিমুল ফুল। অন্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ গাছটির মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। কবি ও সাহিত্যিকদের কল্পনা জগতকেও আলোড়িত করে এ শিমুল গাছের সৌন্দর্য। গাছটি কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না, শিমুল গাছে রয়েছে নানা অর্থকরী ও ঔষধি গুণ।
প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আর্য়ুবেদিক চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমাবাক্স সাইবা লিন’। এটা বোমাবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তকার হয়। রোপণের ৬-৭ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। গাছটি ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে শিমুল গাছ প্রায় দেড়শ’ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। প্রাকৃতিক ভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে।
এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদি পশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমান সময়ে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপক হারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্সে ও দিয়াশালাই তৈরি এবং ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ তা বিলুপ্তির পথে। উপজেলার  অষ্টমনিষা গ্রামের ৯৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবু বিশ্বনাথ সরকার জানান, আগে গ্রামে গ্রামে অনেক শিমুল গাছ ছিল। এ শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ যৌন সমস্যা, বিষফোড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত।শিমুল গাছের চারা চাষ করে উপজেলাতে অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। এমনি একজন চাষি রায়হান আলী বলেন, আমরা চৈত্র মাসে শিমুল গাছের তুলা সংগ্রহের পরে, বৈশাখ মাসের শেষের দিকে এর বিচিগুলো আমাদের জমিতে রোপন করি। মাস খানিকের মধ্যেই শিমুল চারা গাছ হয়। এ চারা গাছের মুল দেশের বিভিন্নি প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা এসে ৬-৭টাকা পিচ মূল্যে নিয়ে যায়।
উপজেলার শরৎনগর  বাজারের তুলা ব্যবসায়ী আব্দুল লথিফ বলেন, একটি বড় ধরনের শিমুল গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। অথচ এখনও এ গাছ প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের ফরেস্টার আঃ কুদ্দুস বলেন, প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য গাছের সঙ্গে শিমুল গাছের চারাও রোপণ করতে হবে। এ গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না বাংলাদেশে শিমুল নামের কোন গাছ ছিল। উপকারী এ গাছ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD