মোঃ মুন্না হুসাইন :
বাঙ্গি স্বাস্থ্যকর ফল। পাকা বাঙ্গির রয়েছে ম-ম সৌরভ। বাঙ্গির অনেক গুণ। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে আমিষ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও খনিজ লবণ আছে। মূত্রস্বল্পতা কিংবা ক্ষুধামান্দ্য দূর করতে পারে বাঙ্গি।
বাঙ্গির অপর নাম খরমুজ, কাঁকুড়, ফুটি বা বানি। দেশের প্রায় সব এলাকায় গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসাগোত্রীয় ফল। মৃত্যুঞ্জয় রায় তাঁর ‘বাংলার বিচিত্র ফল’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ধারণা করা হয়, বাঙ্গির জন্ম ইরান বা আফগানিস্তানে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াও এ ফলের চাষ করা হয়। বাঙ্গি আমাদের চলন বিলে বিভিন্ন এলাকায় জম্মে,যেমন গুরদাস পুর,নাটর,বরাই গ্রাম,নয়া বাজার,তাড়াশ, এবং শ্রীরাম পুরকে এলাকার আরত বলে গন্য করা হয়। বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসাগাছের মতো, লতানো। কাঁচা ফলের রং সবুজাভ। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। ফল পাকলে হলুদাভ হয়। পাকা ফলের সুমিষ্ট সৌরভ আছে। এটি স্বতন্ত্র স্বাদের। ফলের ওজন এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়—বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে মিষ্টি। ‘বাংলার ফল’ বইয়ে আমিরুল আলম খান উল্লেখ করেছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গি থেকে পাওয়া যায় ২৫ ক্যালরি পুষ্টিগুণ। ভেষজ গুণ আছে বাঙ্গির। তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, বাঙ্গির গুণাগুণ অনেক। ডায়াবেটিক রোগীরা বাঙ্গি খেলে ক্ষতি হয় না। এটি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। শিশু, যুবক কিংবা বৃদ্ধ সবাই বাঙ্গি খেতে পারে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মৌসুম শুরু হয়। সুমিষ্ট ঘ্রাণ মৌসুমজুড়ে চলতে থাকে। এখন বাঙ্গি বিক্রির মৌসুম। ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এখানকার বাঙ্গি গোলাকার, অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। এ প্রজাতির বীজ চীন থেকে এসেছে বলে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। এ কারণে এটির নাম চীনা বাঙ্গি।
শ্রীরামপুরের গ্রামের কৃষকেরা বলেন, বংশপরম্পরায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বাঙ্গি চাষ হচ্ছে। তাঁদের দ্বিতীয় অর্ধকরী ফসল বাঙ্গি। শ্রীরাম পুর গ্রামের বাঙ্গি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই বসে বাঙ্গির পাইকারি বাজার। ভোর ছয়টায় শুরু হয়ে বাজার শেষ হয় সকাল নয়টায়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা এ ফল কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। এ বাজারে ১০০ বাঙ্গি বিক্রি হয় এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতিটি বাঙ্গি খুচরা বিক্রি হয় ২০ থেকে ৬০ টাকায়। শ্রীরাম পুর গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বেপারী বলেন, ১২০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। বিক্রি করবেন লাখ খানেক টাকা তিনি আশা করেছে।তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাঙ্গি ভালো জন্মে। সিরাজগঞ্জ তাড়াশে বিভিন্ন এলাকায় বাঙ্গি চাষ হয়।
মোঃ মুন্না হুসাইন (ভ্রাম্যমান) প্রতিনিধিঃ
তাড়াশঃ সিরাজগঞ্জ
মোবাইল নং 01735936294