ঐতিহাসিক চলনবিলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষি জমিতে অবাধে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ । চলনবিলের নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে চলনবিল এখন পরিচিত হতে যাচ্ছে পুকুরের ঐতিহ্যে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুর খননের বেপরোয়া মহাযজ্ঞে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। পুকুর খননের মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি বহুকালভার্ট ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে। দ্রুত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশে বিরুপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রশাসনের দাবি, পুকুর খনন বন্ধে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এমন চিত্র নাটোর জেলার ৭টি উপজেলাসহ চলনবিলের পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলার সর্বত্র । বিশেষ করে নাটোর সদরসহ গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, লালপুর,বাগাতিপাড়া এবং নলডাংগা, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, , রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর এবং পাবনা জেলার চাটমহর এবং ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের চিত্র বেশি প্রকট আকার ধারণ করছে। লোকেরা যেন পাগল হয়ে পুকুর খননে মত্ত হহয়ে পড়েছে। আইন-প্রশাসনের একটুও ভয় বা তোয়াক্কা করছে না কোথাও কেউ।
অনুসন্ধানে দেখা যায় , চলনবিলের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের কচুগাড়ি সীমান্ত বাজার সংলগ্ন বিলে আজাহার হোসেন ও শমসের আলীর মোট ১৭ বিঘা জমিতে পুকুর খনন চলছে। গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা এলাকার জামাল হোসেনের দুটি এক্সকেভেটর দিয়ে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ থেকে মাত্র ২০ গজ দুরে এ পুকুরটি খনন করা হচ্ছে। একই জায়গায় ওয়ালিউর রহমান ডাবলু’ নিজের সহ মোট ১৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তাতে পুকুর খনন করছেন। এ দুটি পুকুরের মাটি টানার ট্রাক্টর চলাচলে বিলের মাঝে কাঁচা রাস্তায় সরকারিভাবে জনচলাচল ও পানি নিষ্কাষনের বেশ কয়েকটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। বর্তমানে মাটি ফেলে কালভার্টসহ পানি নিষ্কাশনের পুরো জায়গাটুকু ভরাট করে দেয়া হয়েছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি নিষ্কাশন চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। এছাড়া এসব পুকুরের মাটি বড় ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করায় পাকা রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপরদিকে, ভিটা এলাকায় মোস্তায়েদুল হকের ১৪ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন এক্সকেভেটর মালিক কামরুল সরদার ও বকুল ফকির। জোনাইল বাগবাচ্চা বিলের প্রায় ১২ বিঘা আবাদী জমি লিজ নিয়ে তাতে পুকুর কাটছেন লোকমান হোসেন নামে এক ব্যক্তি। বিলের পানি নিষ্কাশনের পথে এ পুকুর খনন করায় আগামী বর্ষা মৌসুমে বিলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। একইভাবে গোপালপুর খাঁপাড়া বিলে চার বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন কালাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি। চান্দাই ইউনিয়নের আকবর মোড় এলাকায় আলমের ইটভাটার পেছনে মাহতাব উদ্দিনের ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের চড়–ইকোল এলাকায় মাটি কাটার ঠিকাদার হায়দার আলী, রাজাপুর গ্রামে আব্দুল খালেক এবং উপলশহর কিলিকমোড়ে আব্দুল আজিজ তিন ফসলী জমিতে পুকুর কেটে বাইরে মাটি বিক্রি করছেন। একইভাবে উপজেলার মৌখাড়া, আটঘরিয়া, ভবানীপুর, মহানন্দগাছা, সংগ্রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে অবাধে পুকুর খনন। অপরদিকে তাড়াশ উপজেলায় চলতি শুস্ক মওসুমে শতশত পুকুর খনন চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এখানেও সবকিছু ম্যানেজ করেই চলছে এই পরিবেশ বিধ্বংষী তৎপড়তা। পুকুর কেটে এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। সেই সাথে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলে ক্ষতি হচ্ছে পাকা-কাঁচা রাস্তাঘাট, ঘটছে দুর্ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ট্রাক্টর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি গাড়ীর মাটি বিক্রি হচ্ছে আটশ’ থেকে এক হাজার টাকায়। সেই সাথে গাড়ীগুলো চালাতে দেখা যায় অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক। যাদের বয়স পনের থেকে বিশের মধ্যে। এদের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ি চালানোর কোন বৈধ কাজ কাগজপত্র নেই।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কচুগাড়ি সীমান্ত বাজার এলাকার পুকুর খননের তদারককারী বেলায়েত হোসেন জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করছি। যার কারণে খননে কোন সমস্যা হচ্ছে না।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, কৃষি জমিতে পুকুর খনন অবৈধ। আমি এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমিতে খনন বন্ধে পুকুর মালিকসহ গাড়ীর চালককে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে এবং গাড়ীর ব্যাটারী জব্দ করা হয়েছে। কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন জানান, পুকুর খনন বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে খননকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক অভিযান অব্যাহত আছে।
# মোঃ আবুল কালাম আজাদ, গুরুদাসপুর, নাটোর # ০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩