আবদুর রাজ্জাক রাজু
সুবর্ণজয়ন্তীতে যদি স্বাধীনতা তোমাদেরকে প্রশ্ন করে ঃ
এখন তোমরা দেশের জন্য কতটুকু সত্যকার
নিস্বার্থ ত্যাগ দেখাতো পারো – রক্ত বিলিয়ে দিতে পারো
নানা মত ও পথ ভুলে একাত্তুরের ন্যায় দেশের
উন্নয়ন- সমৃদ্ধির জন্য জাতীয় ইস্যুতে
একাট্রা,একতাবদ্ধ, দৃঢ় ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়তে পারো ?
যদি স্বাধীনতা তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করে ঃ
আজ তোমাদের দেশপ্রেম কতটুকু গভীর, নির্ভেজাল
দেশাত্মবোধের উৎসর্গিত নিদর্শন-ই বা কেমন
দেশ বড়, না গোষ্ঠি বা দল কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ
কোনটি তোমাদের কাছে বড় অথবা প্রাধান্য ?
স্বাধীনতা যদি এমনিভাবে প্রশ্ন করতেই থাকে ঃ
পশ্চিমাদের শোষণ-দূর্নীতি, বৈষম্য-বঞ্চনা
এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে
আমাকে এনেছো-আজ তোমাদের নিজস্ব মাতৃভূমিতে
সেই শোষন-বঞ্চনার চিত্রটা ইদানিং এখানে কিরূপ?
দুর্নীতির পরিসীমা কতটা ব্যাপক – লাগামহীন
আর্থ-সামাজিক অসাম্য-বৈষম্য বেড়েছে না কমেছে
আজকে উন্নয়নের গতিধারা আশা জাগায় বটে তবে
স্বাধীনতার সেই মূলমন্ত্র গণতন্ত্র কোথায়, ন্যায় বিচার
শোষণমুক্ত সমতার সমাজ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র
সমাজে নারী-শিশু সহিংসতার পরিস্থিতি পাল্টেছে কি ?
সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প এখনো ছাইচাপা তুষের
অনলের মতো মাঝে মাঝেই জ্বলে ওঠে কি-না !
সমাজে হিংসা-হানাহানি, বিভেদ-বিদ্বেষ কমেছে না বেড়েছে
তবে প্রতিদিন এতো গুম-খুনের রক্ত ঝড়া কান্না শুনি কেন
নোংরা রাজনীতি এবং দুর্নীতি-অবক্ষয় কোথায় গিয়ে পৌছেছে
যেই সুখ-শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছো
সেই স্বপ্নের শান্তির ঠিকানা-এখনও খুঁজে পাই না কেন ?
যদি স্বাধীনতা তোমাদের প্রতি আরো প্রশ্ন রাখে ঃ
আজ রাজাকারের কুখ্যাতি নিয়ে আর কোন হৈ-চৈ নেই
তাদের ইতিহাস নিঃশব্দে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত
পক্ষান্তরে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে নিত্য এতো
নষ্টামীর খবর ওঠে কেন ? এটা শোনার মতো নয়
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পূঁজি করে
তবে কি তোমরা প্রতারণার ও অর্থ-সম্পদ
কামাইয়ের ব্যবসা ফেঁদে বসেছো যা খুবই দু:খজনক
সামান্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য ভূয়া পরিচিতি দিয়ে
সত্যকে জলাঞ্জলী দিয়ে চলেছ নির্লজ্জভাবে
তাহলে তোমাদের সভ্যতার মাপকাঠি কোথায় ?
সবশেষে স্বাধীনতা যদি আরো জিজ্ঞাসা ছুড়ে দেয় ঃ
ছোট্ট একটি দেশ- ছোট্ট একটি জাতি
অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তোমাদের মধ্যে
দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যমত নেই-নড়বড়ে জাতীয়তাবোধ
বরং বিভেদ-বিভাজনের সংকীর্ণ বিষাক্ত তিক্ততার বায়ু বইছে সারাক্ষণ
মুজিববর্ষেও জাতির পিতা প্রশ্নে নিরংকুশ মতৈক্য নেই
স্বাধীনতার ইতিহাস একেক দল একেক রকম বলে, বিভ্রান্ত করে !
দেশ সেবার কথা বলে রাজনীতির নামে ক্ষমতার কামাইয়ের লোভে
তোমাদের মাঝে আজ প্রাসাদ বানাবার কলুষিত
প্রতিযোগীতা আর তা নিয়ে দলবাজি, দ্বন্দ্ব-কোন্দল
দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে আখের গোছানো
অথচ দেশ তোমাকে কী দেবে তা না ভেবে দেশকে
তুমি কী দিয়েছো সেটাই বড় করে ভাবার কথা ছিল!
ওদিকে একদল গণতন্ত্র রক্ষায় লোক দেখানো নির্বাচন করে
আরেক দল তা প্রত্যাখান ও ভূয়া বলে আখ্যায়িত করে
একদল উন্নয়ন করলে – আরেক দল সেটা বাধাগ্রস্থ অথবা অস্বীকার করে
প্রহসনের নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন পড়ে না আর
নেতা হতে আজকে সত্যকার জনসমর্থন লাগে না- দলের আশীর্বাদই সব
কালো টাকা এবং পেশী শক্তি গিলে ফেলেছে গোটা রাজনৈতিক দিগন্ত
পার্লামেন্ট আজ সাজানো-পাতানো খেলা প্রকৃত রাজনীতি হারিয়ে গেছে
দখল পেয়েছে ব্যবসায়ী আর অরাজনৈতিক লোকেরা
তাহলে তোমরা স্বাধীনতা পেয়ে এতো দিনে তার মর্ম-বেদনা
মূল্য-মাহাত্ম্য আর গুরুত্ব-তাৎপর্য ভুলতে বসেছো বুঝি !
এমনকি মহান মুক্তিযুদ্বের মূল চেতনাই ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা
কথা বলার ও লেখার এবং মানুষের পূর্ণ অধিকার চর্চার স্বাধীনতা
তা আজ ডিজিটাল কালাকানুনের বেড়াজালে বন্দী করার হীন প্রয়াস কেন ?
এ সম্পর্কে তোমাদের আত্মবিশ্লেষণ, আত্মমূল্যায়ন, আত্মবীক্ষণ
ও আত্মসমালোচনা করা উচিৎ- লুকোচুরি না করে নিজেদের আয়নায় নিজেদের
মুখ দেখা জরুরী যাতে জাতি হিসেবে তোমরা পরিশুদ্ধ হতে পারো।
তোমাদের অর্জনের ঝুলিতে যতটুকুই থাক তথাপি এসব
বৈশিষ্ট্যে বিশ্বের সামনে তোমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি
উজ্জল হয়-না বিবর্ণ হয়, নন্দিত হয়-না নিন্দিত হয়
তা তোমাদের বিবেক দিয়ে ভেবে দেখা উচিৎ
কেননা ভবিষ্যত প্রজন্ম তোমাদের মূল্যায়ন না করে ছেড়ে দিবে
এমনটি কখনো ভাবা ঠিক হবে না!