এম এ মাজিদ
শস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের কৃষক এবার স্বপ্ন দেখছে রসুনে। দেশের যেসকল এলাকায় রসুন আবাদ বেশি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলনবিল এলাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকা, বিগত কয়েক বছর ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় রসুনের আবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি বিভাগও এবার রসুনের বাম্পার ফলনে আশা করছে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলের ৯টি উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভালভাবেই রসুনের আবাদ করতে পেরেছে কৃষক। কোন দুর্যোগ না হলে রসুনের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে চাষীরা। চলনবিলের ৯টি উপজেলার মধ্যে তাড়াশ, চাটমোহর,বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায় রসুন চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে শুধু গুরুদাসপুর উপজেলাতে সব চাইতে বেশি ৬ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। এবং তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৬’শ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছে। গুরদাসপুর উপজেলার মশিন্দা গ্রামের রসুন চাষী মো: রবিউল করিম জানান, চৈত্র মাসের শুরুর দিকে রসুন তোলা শুরু হবে। তিনি আরো জানান, আমি ৫ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছি। রসুনের চারা ভালো দেখা যাচ্ছে। রসুন ঘরে উঠানো পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো কিছুদিন পরে বিক্রি করতে হবে। কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ভালো ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়ায় দিন দিন রসুন চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। আগের বছরের তুলনায় এবারো রসুনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
রসুন বিজ রোপনের শুরু থেকেইে এবার রসুন গাছ ভালো দেখা যাচ্ছে। গত বছর রসুন বিক্রি করে চাষীরা লাভবান হওয়ায় এবছরও তারা খোশ মেজাজে আছেন। কৃষকরা আরো জানান, রসুন আবাদে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। সামান্য সেচ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সার ও কীটনাশক দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবার চলনবিলের বেশির ভাগ মাঠে বিনাহালে কাদার মধ্যে রসুন বীজ পুতে দিলেও আবাদ ভাল হয়। এতে ফলনে কোন প্রভাব পরে না এবংথাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।
চাটমোহর উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের কৃষক গাজিউর রহমান বলেন, ৩ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছি। এখুন পর্যন্ত ভাল দেখা যাচ্ছে। আশানুরুপ ফলনের আশা করছি। তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক মহাররম হোসেন জানান, অন্য বছরের তুলনায় শুরু থেকেই আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় রসুন ভাল হয়েছে। বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। রসুন চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি একর জমিতে রসুন চাষে শ্রমিক ও চাষ বাবদ খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। বীজ, রাসায়নিক সার ও সেচ বাবদ খরচ হয় আরও ৩০ হাজার টাকা। প্রতি একরে রসুন আবাদে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে একর প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ মণ রসুন পাওয়া যায়। গড়ে প্রতি মণ রসুন আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলে এক একরে প্রায় দেড় লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। রসুন ঘরে তোলা, বাছাই ও বাজারজাতকরণে আরও প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ বাদ দিলেও লাভ থাকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তবে ওই মূল্যে বিক্রি করতে চাইলে মৌসুমের শুরুতই বিক্রি না করে মজুদ রেখে খরচ কমে যায়। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এই মৌসুমটি চলনবিলের মাঠে রসুন চাষ উপযোগী হওয়ায় এখানকার কৃষকদের কাছে রসুন প্রধান অর্থকরী ফসল। তাই দিন দিন তারা এ আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষকরা যেন কোনও ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয় সেজন্য কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভালো ফলন হওয়ায় রসুনের ব্যাপক আবাদ করেছে চলনবিলের কৃষক।এবার আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। এটি বজায় থাকলে রসুনের বাম্পার ফলন হবে। এখানকার উৎপাদিত রসুন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার চাহিদাও পূরণ করছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং গত কয়েক বছর ধরে ভালো দাম পাওয়ায় অন্য আবাদ ছেড়ে দিয়ে এটিকে বাণিজ্যিক ভাবে আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা।
চলনবিলের গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হারুনুর রশিদ জানান, রসুন একটি লাভজনক ফসল। এখানকার মাটি রসুন চাষের উপযোগী। জেলার মধ্যে সব চাইতে বেশি রসুন আবাদ হয়েছে এ উপজেলায়। তিনি আরো জানান, এখানকার কৃষক বিনাহালে রসুন আবাদ করছে। এতে খরচ সাশ্্রয়ী হচ্ছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্ননাহার লুনা বলেন, রসুন লাভজনক ফসল। প্রতিবছরই রসুন আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু থেকে রসুন চাষীদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে ভাল ফলনের আশা করছি।