মুন্না হুসাইন : সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মহেষরৌহালী, বিরৌহালী ও পংরৌহালী গ্রামের বেকার যুবকেরা হ্যারিকেন হ্যাঁচারির মাধ্যমে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। এতে প্রায় ৭০ পরিবারের অভাব-অনাটন দূর হয়েছে। এসব হাঁসের বাচ্চা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পাইকারী ও খুচরা মূল্যে স্থানান্তর করে নিজেদের সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ভূমিকা পালনে অবদান রাখছে।
ঘর তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে টিনের চাল, বাঁশের বেড়া অথবা বন। ঘরের ভিতরে টিনের চালার ঠান্ডা আলো-বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতে হার্ডবোর্ডের চাতাল ব্যবহার করা হয়েছে। বেড়ায় কাঁদা মাটি লাগিয়ে আলো বাতাস প্রবেশের সমস্ত পথ বন্ধ করে ঘরের ভিতরে ডিম সাজানোর জন্য বেড নির্মাণ করেন। বেড তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন বাঁশ, কাঠ ও হার্ডবোর্ড। এ ঘরগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন ওই ঘরে কোনো ভাবেই আলো বাতাস প্রবেশ করতে না পারে।
এ ব্যাপারে খামারি মো. আলম হোসেন, আব্দুল আলিম, আব্দুল মান্নান, আবু জাফর, গোলাম মোস্তফা ও গোঞ্জের আলীসহ অনেকে জানান, এক-একটা বেডে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকার ডিম দিতে হয়। এই ডিমগুলো সংগ্রহ করি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার গ্রামগঞ্জ থেকে। তবে ডিম সংগ্রহের ক্ষেত্রে হাঁস পালন-খামারিদের এক বছর পূর্বে ৫০ থেকে এক লাখ টাকা দাদন দিতে হয়। আর এ দাদনের টাকাগুলো আমাদেরকে এনজিও অথবা সমিতির কাছ থেকে সুদের মাধ্যমে নিতে হয়।
তারা আরো বলেন, আমাদের এ ব্যবসা বছরের ছয় মাস চলে। আমরা পৌষের ২০ তারিখ থেকে বেডে ডিম দেয়া শুরু করি। প্রতিটি বেডে প্রায় ১৫০০ ডিম ঢুকানো যায়। ১৫০০ ডিম হতে প্রায় ১২০০ বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়। বাচ্চা ওঠা পর্যন্ত এক-একটা বেডে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। এক একটা বাচ্চা ২২ থেকে ২৫ টাকা পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রি হয়।
এক্ষেত্রে দেখা যায় এক-একটা বেড প্রতি আমাদের সমস্ত খরচ বাদে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ দাঁড়ায়। এভাবেই অর্ধশতাধিক খামারি তাদের সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। আর এভাবেই বেকার যুবকেরাসহ ওই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের স্বল্প আয়ের কৃষকরাও হাঁসের খামারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করছেন। তবে তাদের পুঁজি কম থাকায় এর পরিধি বাংলাদেশব্যাপী করতে পারছেন না। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তাড়াশের দরিদ্র গ্রামগুলোর বেকার সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। এ ব্যাপারে তাড়াশের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সোহেল রানা বলেন, এদের সুন্দর উদ্যোগ পরিবার ও এলাকার বেকার সমস্যা দূরীকরণে অবদান রাখছে।