গুরুদাসপুর প্রতিনিধি :
গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এর প্রতিবাদে উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মিরা শুক্রবার রাত ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
অপরদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারধরের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ উভয়পক্ষের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে নাটোর জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হামলার শিকার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বর্তমানে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তার দুলাভাই আব্দুল মান্নান বাদি হয়ে স্থানীয় সাংসদ সমর্থক ৯জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন।
হামলার শিকার উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার বলেন, খামারপাথুরিয়ার কবরস্থানের পাশে একটি পুকুর খননকে কেন্দ্র করে সালিশি বৈঠক ছিল। সেখানে তিনি উপস্থিত হন। বৈঠকের একপর্যায়ে সাংসদ কুদ্দুসের সমর্থক সবুর, রিপন, চান্দুসহ বেশ কয়েকজন তার ওপর চড়াও হয়ে সাংসদের বরাত দিয়ে তাকে গালাগাল দেয় এবং মারপিট করে। পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় সাংসদ কুদ্দুস তার ওপর ক্ষিপ্ত। সেই সূত্র ধরেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
অভিযুক্ত আসামীরা হলেন- আইয়ুব আলী (৫০), মামুনুর রশিদ (৩৬), রাজীব (২৫), তারেক (২০), সবুর (৫০), চান্দু (৬০), মন্টু (৪২), খায়রুল (২৬) ও রিপন (১৮)। এমপি সমর্থকদের পক্ষে আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থক সিদ্দিকুরের দুই ছেলে জামাল ও কামালের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই পক্ষের মামলার প্রেক্ষিতে সবুর, জামাল ও কামালকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাত নয়টায় উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ চাঁচকৈড় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারে সংবাদ সম্মেলন করে। এতে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. আনিসুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. শাহনেওয়াজ আলী, পৌর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো. জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আ’লীগের উপকমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সদস্য আহম্মদ আলী, পৌর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান, উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান শাহ, জেলা পরিষদের সদস্য সরকার মেহেদী হাসান প্রমূখ। এসময় ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সম্পাদক সহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর চাঁচকৈড় বাজারে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা।
বক্তরা বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস ও পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। শাহনেওয়াজ আলী আ’লীগের ব্যানারে টানা তিনবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। মূলত ওই নির্বাচনের রেষারেষির কারণেই এমপি কুদ্দুসের মদদে তার দোসররা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে হত্যার চেষ্টা করে বলে দাবি করা হয়।উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী অভিযোগ করেন, সাংসদ কুদ্দুস পৌর নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বিপ্লবকে বিদ্রোহী হিসাবে দাঁড় করান। এতে বিপ্লব বিপুল ভোটে পরাজিত হন। সেসময় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন নৌকার প্রার্থী শাহনেওয়াজের পক্ষে নির্বাচন করেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর হামলা চালানো হয়। সাংসদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।নাটোর জেলা আ’লীগের সভাপতি স্থানীয় সাংসদ মো. আব্দুল কুদ্দুস তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।