ট্রাকের মাটিতে রাস্তার দুপাশের্ কাঁদা পিচ্ছিল ঘটছে দুঘর্টনা
শাহজাহান, তাড়াশ থেকে ঃ সিরাজগঞ্জে তাড়াশে আবার পুকুর খননের হিড়িক চলছে। পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির মহাৎসব চলছে। ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি বিক্রি করছে ইটভাটা ও রাস্তার দু পার্শের বিভিন্ন মালিকানা জায়গায়। এতে ট্রাকের মাটি পড়ে যাতায়াতের রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঁদা পিচ্ছিল্য হয়ে প্রতিনিয়ত দুঘর্টনা সংঘটিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছেন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গণহারে চলছে পুকুর খনন। দেখার যেন কেউ নেই। ফলে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি, সেই সাথে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এ দিকে পুকুর খননের কাদামাটি আঞ্চলিক ও মহাসড়কের ওপর দিয়ে বহন করায় সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ ফসলি জমিতে পুকুুর কাটার ফলে উপজেলার মাধবপুর, শ্রীকৃষ্টপুর, বোয়ালিয়া, মঙ্গলবাড়িয়াসহ নিচু এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। খাল, ব্রিজ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পুকুর খনন করায় ফসলি জমির মাঠ থেকে বর্ষার পানি সময় মতো নামতে না পারায় রবিশস্য চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। বিলম্বিত হচ্ছে ইরি-বোরো আবাদ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৭৫০টি পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুর খননের ফলে ৫২০ হেক্টর আবাদি জমি কমে যায়। চলতি বছরেও এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন চলমান রয়েছে। গত দশ বছরে তাড়াশ উপজেলায় ভূমি নীতিমালা উপেক্ষা করে আড়াই হাজারের বেশি পুকুর খনন হয়েছে। বিশেষ করে তাড়াশ সদর নওগাঁ, মাধাইনগর, বারুহাস ও মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নে বেশি পুকুর খনন হয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী উপজেলা প্রশাসনের চাপে পুকুর কাটা সাময়িক বন্ধ রাখলেও আবার মহা ধুমধামের সাথে ফসলি জমিতে শুরু করেছে পুকুর খনন। তাড়াশ উপজেলার সর্বত্রই এখন দিন-রাত অবাধে কৃষি আবাদযোগ্য ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। জানা গেছে, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের আবাদি জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। যেখানে কৃষকেরা ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার লাভ করে থাকে, সেখানে পুকুর কাটলে প্রতি বিঘায় বছরে ১৫-২০ হাজার টাকা পায়। তাই বেশি মুনাফার লোভে কৃষকরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পুকুর খনন করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের আব্দুল গনি ও মোহাম্মদ আলী মিলে সগুনা বাজারের পশ্চিমে ও পূর্বে সরকারি খাল দখল করে প্রায় ৫ বিঘা আয়তনের পুকুর কাটছেন। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের লালুয়ামাঝিড়া, কামারশোন, মাধাইনগর ইউনিয়নের সেরাজপুর, মাধাইনগড় ও গুড়মা, পৌর এলাকার কোহিত, কাউরাইল, উলিপুর জাহাঙ্গীরগাতী, পঞ্চিম ওয়াবদারবাঁধ, বাশবাড়িয়া, বারুহাস ইউনিয়নে চৌবাড়িয়া, বিনসাড়া, বস্তুল, পওতা মনোহরপুর, তালম ইউনিয়নে চৌড়া, পাড়িল, নওগাঁ ইউনিয়নে সাকুয়াদীঘি, মালিপাড়া মাগুড়া ইউনিয়নের দোবিলা, হামকুড়িয়া, ঘড়গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে অবাধে চলছে পুকুর খনন। সব মিলে বর্তমানে শতাধিক পুকুর খননের কাজ চলমান রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেকুর ঠিকাদার বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিবে। আর আমরা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন দফতরে টাকা দেই। তাই পুকুর খননে কোনো সমস্যা হয় নাই। পুকুর খননের ফলে খাল দখল করে পুকুরের পাড় করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ কম হয়েছে। সরিষার আবাদ কম হওয়ায় কোটি টাকার মধু আহরণও সম্ভব হয়নি। অথচ গত বছর এ উপজেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, বাড়তি ফসল হিসেবে আট হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সরিষা পেয়েছিল কৃষক। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি উপজেলার তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের স্কুলশিক্ষক আব্দুর রশিদ, কাজীপুর গ্রামের দুদু হাজী, বৃ-পাচান গ্রামের সুমন হোসেন ক্ষোভের সাথে বলেন, এরা আমার কাছে টাকা দাবি করেছিল, না দেয়ায় আমার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। অথচ প্রতিদিন কী করে অসংখ্য পুকুর প্রকাশ্যে খনন করছে, তা উপজেলা প্রশাসনই বলতে পারবে। পুকুর খননকারী বেশ বিশকিছু ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি পুকুর থেকে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের অফিস সহায়ক রহুল আমিন। আর টাকা নেয়ার বিষয়ে রুহুল আমিন টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার ওপর মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি পুকুরের বিষয়ে কিছু জানি না। গত কয়েক বছর একটানা পুকুর খনন করে তাড়াশের ফসলি জমির যে পরিমান ক্ষতি করা হয়েছে তা পুরুন কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই বছর তাড়াশ উপজেলা সমন্নয় বৈঠকে পুকুর খননের ব্যাপারে সম্পুর্ন নিষেধাঞ্চা জারি করা হয়েছিল কয়েকদিন পরেই তা রহিল হয়ে যায়। বর্তমানে সব কিছু উপেক্ষা করে রিতিমত পুকুর খনন মাটি বিক্রি রাস্তা নষ্ট সহ সকল অপরাধ মুলক কর্মকান্ড। তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, ‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল করিম বলেন বিষয়টি দেখছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চৌধুরী মো: গোলাম রাব্বী বলেন, ডিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না।#
শাহজাহান তাড়াশ সিরাজগঞ্জ,