আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার
বাংলাদেশে বহু আগে থেকে যারা বাস করে এবং যাদের বাংলা ছাড়াও নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিদ্যমান মোটা দাগে তাদের আদিবাসী বলা হয়। যদিও ব্রিটিশ আমলে বা স্বাধীনতা পূর্বকালে সরকারী কাগজপত্রে তাদেরকে তফসিলী সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হতো। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বসবাসকারী সমতল-পাহাড়ী সব আদিবাসীদেরই পূর্বপুরুষ হাজার বছর পূর্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এদেশে আগমন করে বলে জানা যায়। বর্তমানে তাদের ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক বা নৃগোষ্ঠির মানুষ হিসেবে সরকারীভাবে গেজেটভূক্ত করা হয়েছে। এদেশে পাহাড়িয়া এলাকা তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি জেলায় যেসব আদিবাসী বাস করে যেমন- চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, খীসা, মগ, মুরংসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষজনকে পাহাড়ী উপজাতি হিসেবে গন্য করা হয় । অবশ্য এসব জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, শেরপুর, ময়মনসিংহ, মৌলবীবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালি, নেত্রকোনাসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী জেলার পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মানুষ যেমন- গারো, লুসাই, হাজং, পাংখো, মনিপুরী, খাসিয়া ও রাখাইনসহ অন্যান্যরা একইভাবে আদিবাসী বলে চিহ্নিত বা পরিচিত। এসব জনগোষ্ঠীর মানুষজন দূর্গম এলাকার বাসিন্দা হবার কারণে জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে মূলস্রোতধারার অধিবাসীদের চেয়ে। এ কারণে এরা সূদূর অতীত থেকে রাষ্ট্রীয় কিছু বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে সরকারীভাবে। এছাড়া বিভিন্ন মিশনারীদের তৎপরতার কারণে এবং এনজিওদের সহযোগিতায় আর্থ-সামাজিকভাবে বর্তমানে বেশ এগিয়েছে এসব আদিবাসীরা। একসময় ওরা কোনো কোনো পাহাড়ী এলাকায় আন্দোলনের মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসন দাবী উত্থাপন করে। একারণে সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে ওদেরকে দেশগঠনের কাজে লাগায়। ফলে সেখানে এখন পুরো স্বায়ত্বশাসন না হলেও স্থানীয় পার্বত্য জেলা পরিষদ ,ভূমি কমিশন গঠনের দ্বারা ভূমি অধিকার এবং এরকম আরো কিছু বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আদিবাসীদের হয়রানি অনেক কমে গেছে। এভাবে পাহাড়ী আদিবাসীরা উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে জাতি গঠনে অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু দেশের অন্যত্র সমতল এলাকায় যেসব আদিবাসী বাস করে যেমন- সাঁওতাল মার্ডী, হাসদা, হেমব্রম, বাস্কে, মুর্মু, সরেন, টুডু , মুন্ডা, মাহাতো, উরাঁও, তাঁতী, মালী, কনকদাস, রবিদাস, সিং, রাই. মালপাহাড়ী, রাজবংশী ও বসাকসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষেরা আর সব হয়রানী বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ভূমি বিষয়ক জটিলতায় যে পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন তাতে অনেকেই ভিটে মাটি তথা জন্মভূমির মায়া ছেড়ে ঘরবাড়ি ত্যাগ করেন,দেশান্তরি হন। বিশেষ স্মরণযোগ্য, দেশের সমতলের আদিবাসীদের প্রায় একচেটিয়া বসবাস উত্তরবঙ্গে। দেশে চৌষট্টি জেলার মাঝে সিরাজগঞ্জ অন্যতম। এই জেলায় কোন পাহাড় নেই। ফলে এখানে যেসব আদিবাসী বাস করে তারা প্রকৃতি ও স্বভাবগতভাবে সমতলের বাসিন্দা। এরা খুবই সহজ-সরল ও প্রচন্ড পরিশ্রমী এবং বেশীর ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল এদের পরিবার। এই জেলার অধিকাংশ আদিবাসীর বাস রায়গঞ্জ এবং তাড়াশ উপজেলায়। রায়গঞ্জের ধামাইনগর, সোনাখাড়া,ধুবিল, চান্দইকোনা ও তাড়াশের মাধাইনগর , তালম, বারুহাস এবং দেশিগ্রাম ইউনিয়নে সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী বসবাস করে। তবে এ দুই উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই কমবেশী আদিবাসী মানুষের বিচরণ রয়েছে। এছাড়া চলনবিলের অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও অনেক আদিবাসী বিদ্যমান প্রাচীনকাল থেকেই। এদের বেশীর ভাগ হিন্দু অথবা মিশ্র ধর্মের অনুসারী। সামান্য কিছু বাসিন্দা খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী যারা অবস্থান করে তাড়াশের তালম ইউপির গুল্টা গ্রামে ও মাধাইনগরে। আর কিছু নওগাঁ এবং মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নে। সমতলের আদিবাসীদের প্রায় সবাই বিশেষভাবে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে হয়রানির শিকার হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রভাবশালীগনের দ্বারা। শুধু তাই নয় ,এই আগ্রাসী সামাজিক ছোবলের হেতু প্রতিনিয়তই তাদের জমিজমা হারানো অব্যাহতভাবে চলছে। তবে তাদের হারাবার তালিকায় শুধু ভূমি নয়, এতোদিনে ওদের নিজস্ব ধর্মাচার,ভাষা এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতিও তারা হারিয়েছে বহুলাংশে নানা কারণে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত অমানবিক, অসাংবিধানিক ও আইনের লংঘন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ কয়েকটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরছি।
ঘটনা ঃ ১। ধামাইনগর ইউনিয়নের নওপা গ্রামের মনো মার্ডির ১২ বিঘা জমি জাল দলিল মূলে কিনে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীগন। ওরা আবার বিক্রয় করে শিল্পপতিগনের কাছে। যেহেতু এলাকাটি বন্যামূক্ত তাই দেশের শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে এখানে। কারণ, সম্প্রতি গ্যাস লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে নুতন স্থাপিত মিল-কারখানায়। এই খবর শুনে মনো মার্ডি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার ছেলেরা বাড়ীঘর তৈরী করে বসবাস করলেও শিল্পপতির নিয়োগ করা মাস্তানগন রাতদিন হুমকি দিতেছে জীবন নাশের। আতংকে দিন কাটছে তাদের। মামলা তো চলছেই দশ বছর হলো।
ঘটনা ঃ ২। সোনাখাড়া ইউপি’র উটরা হাজিপুর মৌজার অর্জুন গড়ের শতাধিক বিঘা দেবোত্তর জমি যার মাঝে আছে ৬০ বিঘার উপরে পুকর, যেমন- শীশা পুকুর, কোদাল দিঘী, শানবান্ধা, ধরম খাঁ ইত্যাদি। এলাকার প্রভাবশালীগন জোর করে পুকুরগুলো দখলে নেয় প্রথমে, পরে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। ওরা চলে গেলে দখলে নিয়ে ওখানে সমিতি গঠন করে একদল মাস্তান বাহিনী। এ নিয়ে সেবায়েত কার্তিক চন্দ্র মাহাতো তিরিশ বছর মামলা চালিয়ে কয়দিন আগে ক্লান্ত হয়ে এ জগত ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন। মামলা আছে এখনও জীবিত।
ঘটনা ঃ ৩। জিতনী মাহাতো, গ্রাম- রামবল্লভপুর, ইউপি – দেশীগ্রাম। বিধবা মহিলার অর্ধ কোটি টাকা দামের নিমগাছি বাজারের জমি বিআরডিবি,রায়গঞ্জের কর্তৃপক্ষ ভূয়া দলিলমূলে বেদখল করেছে। মহিলার পক্ষে যারা কথা বলে লুটপাটের মামলা দিয়ে তাদের দফা রফা করে বিআরডিবি। সাত ঘাটের জল খাওয়ায়। নয় বছর হলো মামলা চলছেই।
ঘটনা ঃ ৪। বীরেন মেম্বর। ধামাইনগর ইউপির সাবেক সদস্য। গ্রাম তার বিনোদবাড়ী । শালিয়াগাড়ী হাটের পুর্ব পাশে তার পনের বিঘা জমি অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবার জোর করে দখলে নিয়েছে দুই নম্বরী কাগজের জোরে । এবং সর্বহারা পার্টির নেতাদের ম্যানেজ করে ভয় দেখিয়ে কব্জা করে সেই সময়ে যখন রামরাজ্য ছিল তাদের। মেম্বর তার জায়গায় ঘর তুললেও রাতের আঁধারে সে ঘর ভেঙ্গে টিনগুলো পর্যন্ত গায়েব করে দিয়েছে দখলদারগন। মামলা চলছে বার বছর হলো।
ঘটনা ঃ ৫। দেশীগ্রামের দত্তবাড়ীর অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার মাহাতো। নিমগাছি অনার্স কলেজের শিক্ষক। তার নিমগাছি মৌজার জমি জোর করে দখলে নেয় পাশের গ্রামের ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারগন কোন কাগজ পত্র ছাড়া ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে। এক পর্যায়ে ক্ষেতের ধান কেটে নেয়। বলা চলে গিলে ফেলে। কিন্তু দূর্ভাগ্য ক্যাডারদের অথবা বলা যায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন অধ্যাপকের। তার ভগ্নিপতি এ্যাডমিন ক্যাডারের বড় কর্তা হওয়ার সুবাদে হোক বা তার নিজের থানা পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ির কারণেই হোক জমি গিলে ফেল্লেও হজম করতে পারেনি প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। জমি ছেড়ে দেয়। কিন্তু সবাই তো সঞ্জীব না যে এভাবে জমি উদ্ধার করতে পারবে।
ঘটনা ঃ ৬। এলাকার মাহাতো সম্প্রদায়ের সর্দার রায়গঞ্জের উত্তর ফরিদপুরের আহ্লাদ সরকারের ছেলে সুরেন, ধীরেন গংদের তের বিঘা জমি ভূয়া কাগজ পত্র দেখিয়ে দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আরও দশ বিঘা দখলের জন্য হুমকি দিতেছে। যে জমির অবস্থান শালিয়াগাড়ী হাটের পার্শ্বে। শংকা-আশংকা ও আতংকে দিন কাটছে সুরেনদের। মামলা চলছে এগার বছর হলো।
ঘটনা ঃ ৭। প্রফেসর প্রদীপ কুমার মাহাতো ,গ্রাম- ভাটারপাড়া, ইউপি- দেশিগ্রাম, তাড়াশ। তার জমির পাশে বালু ব্যাবসায়ীরা পাহাড় সমান উঁচু করে বালু রাখছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে বালু এসে তার জমির বারটা বাজছে। আবাদ হয় না তার ক্ষেতে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সন্ত্রাসী, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের কাছে বালু অন্যত্র সরিয়ে নেবার দাবী জানালে তারা তাদের ক্ষেতে বালু রাখছে বলে করার কিছু নেই – এমন মন্তব্য করে। তারা আর সে বালু সরায়নি।
এমন কত যে ঘটনা তাড়াশ-রায়গঞ্জের আদিবাসী এলাকায় নিরবে ঘটে চলেছে, তা লিখলে বই-পত্রিকার পাতায় স্থান সংকুলান হবে না। এরকম হাজারো মনো মারডী, সুরেন, বীরেন, ধীরেন, জিতনী, প্রদীপ গং নিয়মিত হয়রানী, ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। হচ্ছে জানমালের হুমকির মুখোমুখি বিশেষ করে সমতলের আদিবাসী যারা। এদের এহেন সমস্যা নিরসন কল্পে প্রয়োজন পাহাড়ী আদিবাসীদের মত সমতলের আদিবাসীগনের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করা। রাস্ট্রের মূল দায়িত্বের মধ্যে পড়ে-দূষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। বিশেষ করে দূর্বল যারা তাদের রক্ষা করতে হবে অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। তাই দেখা যায়, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা আইন ; আলাদা কোর্ট। এছাড়াও প্রচলিত আইন থাকলেও সিরিয়াস অপরাধীগনের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল রয়েছে দেশেই ; আছে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ট্রাইবুনাল। যেহেতু আদিবাসীরা সমাজে তুলনামূলকভাবে পেছনে পড়া, দূর্বল। তাই তাদের হয়রানী দূর করার লক্ষ্যে, দ্রুত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে প্রত্যেক জেলায় সমতলের ভূমি কমিশনের অফিস স্থাপন জরুরী। যে অফিসের কর্ণধার হবেন জেলা জজের মত মর্যাদাসম্পন্ন ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিচারক। এর ফলে হয়রানী কমবে আদিবাসিদের। আর তারা সত্বর ন্যায্য বিচার পাবে বিশেষ করে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে। কারণ, এই হেতু তাদের জন্মভূমির ভিটা-মাটি ছাড়তে হয় অনেক ক্ষেত্রে আর ঘটে দেশান্তরী হবার মত মর্মান্তিক ঘটনা । তাছাড়া পাহাড়ী আদিবাসীরা যে অধিকার পেয়েছে অথচ সমতলের আদি বাসিন্দা হবার কারণে এখানকার নাগরিকগন তা পাবেন না, এটা ন্যায়বিচার ও সংবিধান পরিপন্থি। এক দেশে একই সমাজব্যবস্থায় পাহাড়ী-সমতল আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রীয় বেষম্য বিবেক বর্জিতও বটে। বিশেষ করে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনে আর দেরি নয়। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরী। সমতলের আদিবাসীদের মানবাধিকারসহ সকল অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠনের পক্ষে কতিপয় সুপারিশ
১. আদিবাসীদের প্রচুর তথা বিশাল পরিমাণ জমিজমা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে।
২. তাদের ভূমির সুরক্ষা আইন নেই।
৩. ওদের জমি ক্রয় বিক্রয়ের একটা নীতি মালা দরকার। অথবা থাকলে তার প্রয়োগ নেই।
৪. তাদের জমা জমি হস্তান্তর ও উত্তরাধিকারের বিষয়ে একটা সরকারী পলিসি দরকার।
৫. কেবল মাত্র সমতল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পৃথক আদম শুমারী প্রয়োজন তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য।
৬. আদিবাসীদের জীবন জীবিকা ও পেশার উপর তথ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন।
৭. আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমি সংক্রান্ত পৃথক জরীপ ও ডেটা বেইজ করা দরকার।
৮. তাদের সম্পদের ধরণ ও প্রকৃতি সনাক্তকরণ ও রেকর্ড তৈরী করা।
৯. সমতলের আদিবাসীদের প্রস্তাবিত ভূমি কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা আবশ্যক।
১০. পার্লামেন্টে সমতলের আদিবাসীদের সমস্যা তুলে ধরে এ ধরনের আইন পাশ করা জরুরী।
১১. প্রয়োজনে পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠনের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা ও শিক্ষা নিয়ে সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা।
১২. আদিবাসীদের হারানো ভূমি/জমিজমা উদ্ধারের নিমিত্ত একটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল গঠন করা জরুরী।
১৩. কত সংখ্যক আদিবাসী জমি জমা খুইয়ে ফেলেছে বা অভিবাসী হয়েছে তার একটি নিরিক্ষামূলক গবেষণা করা।
১৪. আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলো তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করে সচেতন করে তোলা। এখানে গণমাধ্যমের অসামান্য ভূমিকা প্রয়োজন।
১৫. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠনের সাথে সাথে তাদের জন্য আইনী সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া বা সে ধরণের সেল গঠন করা।
১৬. ভূমি কমিশন গঠনের পূর্বে ও পরে আদিবাসীদের মতামত নেওয়া।
১৭. বিষয়টি দেশের জাতীয় সংসদে বা সরকার সমীপে তুলে ধরতে বা লবি করতে প্রসাশনে, স্থানীয় এমপি, মন্ত্রীর সাথে সংযোগ ও তৎপড়তা বাড়ানো।
১৮. আদিবাসীদের জমি জরীপ করে তাদের সঠিক কাগজপত্র তৈরী করে দেওয়া যাতে তাদের জমিজমা মালিকানা সত্ব দৃঢ় হয়।
১৯. বর্তমানে যেসব আদিবাসী ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা বা ঝামেলায় পতিত, তাদের তালিকা তৈরী করে তাদেরকে অবিলম্বে সরকারি জেলা আইন সহায়তা সংস্থার আওতায় সহযোগীতা করা।
২০. স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদে তাদের সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধিত্ব থাকার ব্যবস্থা করা।
২১. আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া।
২২. তাদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠনের পর কমিশনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় অফিস প্রতিষ্ঠা করা।
২৩. বর্তমান জেলা , উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলিতে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক সেল বা শাখা খোলা।
২৪. সমতলের আদিবাসীদের বিভিন্ন শাখা-উপশাখা তথা বিদ্যমান সকল গোত্রকে একই আদিবাসীর স্বীকৃতি দেওয়া।
২৫. প্রতিটি সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আদিবাসীদের জমিজমা ক্রয়বিক্রয় ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ থাকা।
২৬. সরকারী গেজেটে মাত্র কয়েকটি সমতলের আদিবাসীদের শাখা বা গোত্রকে ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক বা নৃগোষ্ঠির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এতে করে অনেক আদিবাসী বাদ পড়েছে। এটা সংশোধন করে যাচাই সাপেক্ষে সকল আদিবাসীকেই ওই তালিকাভূক্ত করা জরুরী আবশ্যক।
২৭. আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই ইস্যুটি আদিবাসীদের পক্ষ হতে নির্বাচন প্রার্থীদের নিকট তুলে ধরা।
( ৮ অক্টোবর ২০১৮ তাড়াশের ক্ষীরপোতা আদিবাসী একাডেমী ভবনে পরিবর্তন আয়োজিত “ আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠনের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে” সেমিনারে লেখক কর্তৃক উপস্থাপিত)
লেখক ঃ বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। নিমগাছি, রায়গঞ্জ।